ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘প্রাণভিক্ষা নিয়ে টালবাহানা নাটক’

মুজাহিদের ফাঁসির অপেক্ষায় ফরিদপুর

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০১৫
মুজাহিদের ফাঁসির অপেক্ষায় ফরিদপুর আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ

ফরিদপুর: মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি তার নিজ জেলা ফরিদপুরবাসীর। তিনি এখন ক্ষমা চাওয়া নিয়ে টালবাহানা ও নাটক করছেন বলে অভিযোগ করেছেন তারা।



এ টালবাহানা প্রত্যাখ্যান করে সরকার দ্রুত ফাঁসি কার্যকর করে ফরিদপুরকে কলঙ্কমুক্ত করবে- এ অপেক্ষায় প্রহর কাটছে সাধারণ মানুষের।

একাত্তরে বুদ্ধিজীবী হত্যাসহ সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটিতে (ঊর্ধ্বতন নেতৃত্ব) থাকা নেতা হিসেবে গণহত্যা সংঘটিত করা, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করা, হত্যা, নির্যাতন, বিতাড়ন ইত্যাদি ঘটনার দায়ে ফাঁসির দড়িতে ঝুলতে যাচ্ছেন মুজাহিদ। সরকারের (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) নির্বাহী আদেশ পেয়ে ফাঁসির মঞ্চ ও জল্লাদদেরও প্রস্তুত রেখেছে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার। ফাঁসিতে ঝোলানোর জন্য স্বাস্থ্যগত পরীক্ষাও (মেডিকেল চেকআপ) সম্পন্ন হয়ে গেছে তার।

তবে ফাঁসির আগে সর্বশেষ সুযোগ হিসেবে মুজাহিদের সামনে থাকা অপরাধ স্বীকার করে ও প্রাণভিক্ষা চেয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনার বিষয়টি নিয়ে কালক্ষেপণ করছেন তারা। ইতোমধ্যেই প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি-না, তার কাছে দু’বার জানতে চেয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। পরিবারের সদস্য ও আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত জানাবেন বলে উল্লেখ করেছেন মুজাহিদ, যদিও চূড়ান্ত এ ক্ষণে সে ধরনের কোনো সুযোগ নেই আইনে।

এসব বিষয় উল্লেখ করে ফরিদপুরের মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিরা শনিবার (২১ নভেম্বর) দুপুরে বাংলানিউজকে বলেন, ফরিদপুরের কলঙ্ক মুজাহিদের বিচার হয়েছে, এখন যতো দ্রুত সম্ভব ফাঁসির রায় কার্যকর করা দরকার। মুজাহিদ ও সাকা চৌধুরীর ক্ষমা চাওয়া নিয়ে টালবাহানা আসলে কালক্ষেপণের ষড়যন্ত্র। তারা প্রাণ বাঁচাতে সর্বশেষ ‘নাটক’ করছেন। এটি প্রত্যাখ্যান করা উচিৎ।  

মুক্তিযুদ্ধে ৮ নম্বর সেক্টরের ২ নম্বর সাব-সেক্টর কমান্ডার ও ঐতিহাসিক আগরতলা মামলার আসামি বঙ্গবন্ধুর সহচর নূর মোহাম্মদ ক্যাপ্টেন (অব.) বাবুল বাংলানিউজকে বলেন, হত্যা-গণহত্যা, লুটতরাজ, ধর্ষণ ও সরাসরি মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর সশস্ত্র হামলায় নেতৃত্ব দিয়েছেন মুজাহিদ। আমরা মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকায় অত্যন্ত খুশি হয়েছি।

তিনি বলেন, মৃত্যুর আগে এটাই চাওয়া ছিল, যেন মুজাহিদের ফাঁসি দেখে যেতে পারি। এখন যতো দ্রুত সম্ভব রায় কার্যকরের দাবি জানান তিনি।

জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার এই বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়ায় সহায়তা করার জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। ভাবতে পারিনি, এ বিচার পাবো।

তিনি বলেন, দেশ স্বাধীন করেছিলাম ঠিকই। কিন্তু সেদিনের ঘাতকেরা ১৯৭৫ এর পর ফের মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। দীর্ঘদিন স্বাধীনতাবিরোধীরা দেশের ক্ষমতায় থেকে উল্লাস করেছে। অবশেষে কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে কলঙ্কমুক্ত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

ফরিদপুরের তরুণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গণজাগরণ  মঞ্চের সংগঠক অ্যাডভোকেট অনিমেষ রায় বলেন, জনগণের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ হচ্ছে। একাত্তরের এই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এদেশের সাধারণ মানুষেরই দাবি ছিল। কাদের মোল্লার ফাঁসি চেয়ে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনে দেশের লাখ লাখ সাধারণ মানুষের স্বত:স্ফূর্ত অংশগ্রহণও সেটি প্রমাণ করেছে।

তিনি বলেন, মুজাহিদের বিচার হয়েছে। এখন যতো দ্রুত সম্ভব ফাঁসির রায় কার্যকর করা দরকার। মুজাহিদ ও সাকা চৌধুরী ক্ষমা চাওয়া নিয়ে যে টালবাহানা করছেন, তা প্রত্যাখ্যান করে তাদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেওয়া উচিৎ বলে মন্তব্য করেন ফরিদপুর আদালতের এপিপি অনিমেষ রায়।

শিল্পী বিপ্লব কুমার দাস বলেন, ফাঁসি কার্যকর করার আগে বিচারিক প্রক্রিয়ার সর্বশেষ ধাপ রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়া। ওই দুই যুদ্ধাপরাধী এখন তা নিয়ে নাটক শুরু করেছেন। ক্ষমা চাইবেন কি-না তা নিয়ে পরিষ্কার কোনো মন্তব্য দেখা যাচ্ছে না। কোনো রকম টালবাহানাকে প্রশ্রয় না দিয়ে সরকারের উচিৎ এই রায় দ্রুত কার্যকর করা।

এর আগে রায়ের পরপরই মুজাহিদের বিরুদ্ধে মামলার বাদী ও ৫নং সাক্ষী রনজিৎ কুমার নাথ ওরফে বাবুনাথ তার প্রতিক্রিয়ায় কোনোরকম কালবিলম্ব না করে এই ফাঁসির রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি জানান।

তিনি বলেন, যতোক্ষণ পর্যন্ত মুজাহিদের ফাঁসির রায় কার্যকর না করা হবে, ততোক্ষণ আমরা আতঙ্কে থাকবো।

ক্যাপ্টেন বাবুল, অনিমেষ, বিপ্লব, বাবুনাথের মতো ফরিদপুরের সাধারণ মানুষ অধীর অপেক্ষায় রয়েছেন যুদ্ধাপরাধী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসির রায় কার্যকর দেখতে। তাদের মতে, মৃত্যুর আগে এদেশের মুক্তিযোদ্ধা ও নির্যাতিতদের শেষ ইচ্ছা পূরণ এবং শহীদদের আত্মার শান্তি হবে ফাঁসির রায় কার্যকরের মধ্য দিয়ে।

দেশের শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী মুজাহিদের পৈত্রিক বাড়ি ফরিদপুর শহরের পশ্চিম খাবাসপুরে। ফাঁসির পরে মুজাহিদের মরদেহ তার বাড়িতে আনার সিদ্ধান্ত থাকলেও সেখানে দাফনের বিষয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।

মুজাহিদের ছোট ভাই আলী আফজাল মোহাম্মদ খালেছ মোবাইলে বাংলানিউজকে জানান, আমাদের বাড়িটি শরিকদের মাঝে এমনভাবে ভাগ হয়েছে যে, পারিবারিক কবরস্থান বলতে সেরকম কিছু নেই। মুজাহিদের স্ত্রী-সন্তানরা যদি চান, তাহলে মরদেহ ফরিদপুরে আনা হবে দাবি করে তিনি জানান, সেক্ষেত্রে শহরের আলীপুর গোরস্থানে তার মা নূরজাহান খানমের কবরের পাশে দাফন করা হতে পারে।

ফরিদপুরবাসী অবশ্য ঘোষণা দিয়েছেন, তারা মুজাহিদের মরদেহ ফরিদপুরে ঢুকতে দেবেন না।

বাংলাদেশ সময়: ১২০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০১৫
আরকেবি/এএসআর

** মুজাহিদের মরদেহ যেন ফরিদপুরে না আসে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।