ঢাকা: মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসিরদণ্ড কার্যকরের পর বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর মরদেহ চট্টগ্রামের রাউজানের গহিরায় নেওয়া হচ্ছে।
তার মরদেহবাহী গাড়িটি শনিবার (২১ নভেম্বর) রাত ৪টায় কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার মেঘনা টোল প্লাজা পার করে।
তার আগে, রাত ৩টা ১০ মিনিটে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর ব্রিজ পার করে মরদেহবাহী গাড়িবহর। বিষয়টি জানান, বাংলানিউজের স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট আদিত্য আরাফাত।
এরপর ৩টা ২৫ মিনিটে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলা পার হয়, জানান ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট কাজী দীপু।
রাউজানের গহিরায় একাত্তরে নিরীহ মানুষের ওপর নিযার্তন চালিয়েছিলেন সাকা।
রাত ০২টা ৫৩ মিনিটে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নিরাপত্তায় মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্সটি চট্টগ্রামের রাউজানের উদ্দেশে রওনা দেয়। এর আগে ১২টা ৫৫ মিনিটে দণ্ড কার্যকরের পর ফাঁসির মঞ্চে সাকা চৌধুরীর মরদেহ ঝুলিয়ে রাখা হয়। পরে ঝুলন্ত মরদেহ নামিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত হলে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়।
পরে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের প্রায় দুই ঘণ্টা পর কারাগার থেকে বেরিয়ে মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা দেয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বের হয়ে গাড়িবহরটি মেয়র যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার, কাঁচপুর ব্রিজ হয়ে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও, মুন্সীগঞ্জ, কুমিল্লার চান্দিনা, বিশ্বরোড, চৌদ্দগ্রাম, ফেনীর পর মিরসরাই হয়ে চট্টগ্রামে যাবে। এরপর যাবে রাউজানের গহিরায়। গাড়িবহরের সামনে ও পেছনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নিরাপত্তা রয়েছে।
গহিরায় গ্রামের বাড়িতে মরদেহ পৌঁছানোর পর জানাজা শেষে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পারিবারিক নতুন কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে। মূল পারিবারিক কবরস্থানে জায়গা না থাকায় বাবা ফজলুল কাদের চৌধুরী, মা, দাদা-দাদির পাশে তার কবর হচ্ছে না।
তাই নতুন কবরস্থানে সদ্য প্রয়াত ছোটভাই সাইফুদ্দিন কাদের চৌধুরীর পাশে দাফন করা হবে বিভিন্ন সময় কটূক্তি করে সমালোচনা সৃষ্টি করা সাকাকে। এর আগে শনিবার দুপুরে একাত্তরে নিজেদের কৃত কর্মকাণ্ডের দোষ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চান সাকা চৌধুরী। কিন্তু প্রাণভিক্ষা পাননি তিনি। এরমধ্যে রাত ৯টার দিকে সাকার স্ত্রী-পুত্র-পরিজনকে শেষবারের মতো তার সঙ্গে দেখা করার জন্য ডেকে পাঠায় ঢাকা কারা কর্তৃপক্ষ।
সাড়ে ৯টার দিকে কেন্দ্রীয় কারাগারে সাকার সঙ্গে দেখা করেন স্ত্রী ফরহাত কাদের চৌধুরী, ছেলে ফাইয়াজ কাদের চৌধুরী, হুম্মাম কাদের চৌধুরীসহ তার স্বজনরা। দেখা শেষে কারা ফটকে তার ছেলে হুম্মাম দাবি করেন, তার বাবা প্রাণভিক্ষা চাননি। একই দাবি করেছে সাকার দল বিএনপিও।
এরপর রাতে ফাঁসির বিষয়ে সরকারের নির্বাহী আদেশ কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছায়, শুরু হয় ফাঁসি কার্যকরের চূড়ান্ত প্রস্তুতি। একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর সাকা চৌধুরীকে ফাঁসির দণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
এ রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরের ২৯ অক্টোবর আপিল করেন সাকা। তবে সর্বোচ্চ সাজার প্রেক্ষিতে আপিল করেননি রাষ্ট্রপক্ষ। গত ১৮ নভেম্বর সেই আবেদন খারিজ করে ফাঁসির দণ্ড বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। এদিকে, সাকা ও মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকরের মধ্য দিয়ে আরেকটি দায়মুক্তির ইতিহাস রচিত হলো। তার আগে ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লা ও চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ০৪০৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০১৫
এডিএ/আইএ
** গজারিয়া পার করছে সাকার মরদেহবাহী গাড়ি
** গহিরায় নেওয়া হচ্ছে সাকার মরদেহ