ঢাকা: মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ডাদেশ কার্যকর হওয়ার পর সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মরদেহ দাফনের উদ্দেশ্যে নেওয়া হচ্ছে তার নিজ বাড়ি ফরিদপুরে।
রোববার (২২ নভেম্বর) ভোর পৌনে ৬টার দিকে পদ্মা নদী পার হয়ে দৌলতদিয়া ঘাটে পৌঁছায় মরদেহ বহনকারী গাড়িবহর।
বাংলানিউজের রাজবাড়ী ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট আব্দুল কুদ্দুস বাবু বলেন, ভোর পৌনে ৬টার দিকে মরদেহবাহী গাড়িবহর নদী পার হয়ে দৌলতদিয়া ঘাটে এসে পৌঁছায়।
এ প্রতিবেদন লেখার সময় মুজাহিদের গাড়ি বহর ফরিদপুরের উদ্দেশে রওনা হয়েছে বলে জানান তিনি।
এর আগে, শনিবার দিবাগত রাত ২টা ৫৩ মিনিটে মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ফরিদপুরের পথে রওয়ানা হয়।
শনিবার দিবাগত রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মুজাহিদকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
মরদেহবাহী গাড়িবহর সাভার-মানিকগঞ্জ হয়ে পাটুরিয়া ঘাট দিয়ে ফেরিতে পদ্মা নদী পার হবে। পদ্মার ওপারে দৌলতদিয়া ফেরিঘাট হয়ে রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ মোড়ে যাবে। এ মোড় থেকে বা’দিকে গিয়ে প্রবেশ করবে ফরিদপুর জেলার সীমানায়। এ পথে ফরিদপুর শহরের প্রবেশপথ রাজবাড়ীর রাস্তার মোড় হয়ে ভাঙ্গা রাস্তার মোড় দিয়ে সরাসরি পশ্চিম খাবাসপুর এলাকায় পৌঁছাবে।
যাওয়ার পথে প্রতিটি জেলায় এবং থানার পুলিশ ওই গাড়িবহরকে রিসিভ করে জেলা সীমানা পার করে দেবে বলে জানা গেছে। এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট জেলা ও থানা থেকে সব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন।
ফরিদপুর পৌঁছানোর পর মুজাহিদের পরিবারের সদস্যদের কাছে তার মরদেহ হস্তান্তর করা হবে। পরে নামাজে জানাজা শেষে পশ্চিম খাবাসপুরের আইডিয়াল ক্যাডেট মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে তার দাফন সম্পন্ন করা হবে।
একাত্তরের কিলিং স্কোয়ার্ড আলবদর বাহিনীর প্রধান দোষী সাব্যস্ত করা হয় মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে হত্যা-গণহত্যা, আটক ও নির্যাতন, ধর্মগত ও রাজনৈতিক কারণে নির্যাতন করে হত্যার মতো বিভিন্ন ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে। পাশাপাশি সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটিতে (ঊর্ধ্বতন নেতৃত্ব) থাকা নেতা হিসেবে গণহত্যা সংঘটিত করা, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করা, ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনার মাধ্যমে হত্যা, নির্যাতন, বিতাড়ন ইত্যাদি ঘটনার দায়ও প্রমাণিত হয় তার বিরুদ্ধে।
এর মধ্যে বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে ফাঁসির দড়িতে ঝুললেন মুজাহিদ। তার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আনা সাতটি অভিযোগের মধ্যে এটি ছিল ৬ নম্বর অভিযোগে।
আরও তিনটি অপরাধে আদালত যাবজ্জীবনসহ বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ডাদেশ দিলেও সর্বোচ্চ সাজা কার্যকর হওয়ায় সেসব সাজা ভোগের প্রয়োজন পড়েনি। এর মধ্যে ৫ নম্বর অভিযোগে ঢাকার নাখালপাড়ায় পুরনো এমপি হোস্টেলে শহীদ সুরকার আলতাফ মাহমুদসহ কয়েকজন গেরিলা মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যার দায়ে যাবজ্জীবন এবং ৩ নম্বর অভিযোগে ফরিদপুর জেলার কোতোয়ালি থানার গোয়ালচামট এলাকার (রথখোলা) মৃত রমেশ চন্দ্র নাথের পুত্র রণজিৎ নাথ ওরফে বাবু নাথকে আটক ও নির্যাতনের দায়ে ৫ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয় মুজাহিদকে।
শনিবার দিনগত রাতেই ফরিদপুরে নিয়ে মুজাহিদের মরদেহ তার পরিবার পরিজনের কাছে হস্তান্তর করা হবে। ফরিদপুর শহরের পশ্চিম খাবাসপুরের স্থায়ী বাসিন্দা মুজাহিদের নামাজে জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হবে বাড়ির পাশের জামায়াত নিয়ন্ত্রিত আইডিয়াল মাদ্রাসা কবরস্থানে। কারাগারের অ্যাম্বুলেন্সে করে প্রশাসনের কড়া নিরাপত্তায় ফরিদপুরে পাঠানো হবে মরদেহ।
স্বাধীনতার ৪৪ বছর পর এটি হচ্ছে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার চতুর্থ ফাঁসির রায় কার্যকর, যার মাধ্যমে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করা হলো বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সাবেক এই মন্ত্রীর।
একই সময়ে ফাঁসি হওয়া অপর শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের সাকা চৌধুরী সর্বোচ্চ সাজা পেয়েছেন অধ্যক্ষ নূতন চন্দ্র সিংহকে হত্যাসহ চার হত্যা-গণহত্যার দায়ে। চট্টগ্রাম অঞ্চলের নৃশংসতম মানবতাবিরোধী অপরাধের হোতা সাকা চৌধুরীর মরদেহ নেওয়া হচ্ছে তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের রাউজানের গহিরায়। নামাজে জানাজা শেষে তার মরদেহ দাফন করা হবে পারিবারিক গোরস্থানে।
বাংলাদেশ সময়: ০৫৫৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০১৫
এমজেড/এসএইচ
** পদ্মা পার হচ্ছে মুজাহিদের মরদেহবাহী গাড়ি
** মানিকগঞ্জ পার হচ্ছে মুজাহিদের মরদেহবাহী গাড়ি
** সাভার পার হচ্ছে মুজাহিদের মরদেহবাহী গাড়িবহর
** ফরিদপুরের পথে মুজাহিদের মরদেহ