ঢাকা: দেশে এবারই প্রথম চীনের সাংহাইয়ের আদলে তৈরি হচ্ছে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল সড়ক। এতে করে এ নদীর তলদেশ দিয়ে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে চলবে যানবাহন।
চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠটে এ ‘কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ প্রকল্প’ উপস্থাপন করা হবে।
মঙ্গলবার (২৪ নভেম্বর) শেরে বাংলানগর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি) সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, একনেক সভায় চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য প্রকল্পটি কার্য তালিকায় রাখা হয়েছে। ১৫টি প্রকল্পের মধ্যে এক নম্বরে রয়েছে কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ প্রকল্প।
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকা থেকে কক্সবাজার যেতে চট্টগ্রাম শহরের যানজটে আটকা পড়তে হবে না। একইভাবে কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম শহরের যানজট এড়িয়ে ঢাকায় আসা যাবে।
এছাড়া এ টানেল নির্মাণের মাধ্যমে কর্ণফুলী নদীতে বর্তমানে চালু দু’টি ব্রিজের উপর দিয়ে যানবাহন চলাচলের চাপ কমবে। প্রকল্পের আওতায় চীনের সাংহাইয়ের আদলে ‘One City two Town’ ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে শুধু সেতু নয়, সুরঙ্গের মধ্য দিয়ে চলাচল করবে যানবাহন।
প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ৮ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা। চলতি সময় থেকে শুরু করে জুন ২০২০ সাল নাগাদ প্রকল্পটির কাজ শেষ হবে।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, মূল ডিপিপি’তে থেকে সংশোধিত ডিপিপি’তে কিছু কাজ বাড়তি যোগ করায় টানেল নির্মাণ ব্যয় বাড়ছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় টানেলের দৈর্ঘ্য হবে ৩ দশমিক ৪৩ কিলোমিটার। এছাড়া ৫ দশমিক ৬৩ কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ রোড নির্মাণ করা হবে।
প্রকল্পের আওতায় প্রস্তাবিত কার্যাবলী: ৭ হাজার ২০০ বর্গমিটার সার্ভিস সুবিধা ও ২৮ দশমিক ৯৬ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন করা হবে। এছাড়া ৭টি জিপ, ২২টি মোটরসাইকেল, ৩৩টি ডেক্সটপ, ১৭টি ল্যাপটপ, ৫টি ফটোকপি, দু’টি ফ্যাক্স এবং একটি প্রজেক্টর কেনা হবে। পাশাপাশি পরিবেশ ব্যবস্থাপনার জন্য নানা ধরনের কার্যক্রম হাতে নেওয়া হবে।
এ টানেল নির্মাণ করার মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থার কেন্দ্রস্থল হিসেবে চট্টগ্রামের ভূমিকা শক্তিশালী করা হবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের জাতীয় মহাসড়কের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করা হবে, যাতে করে দেশের অতিরিক্ত চাপ সামলাতে সক্ষম হবে বাণিজ্যিক নগরী চট্টগ্রাম।
সেতু বিভাগ সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম শহর কর্ণফুলী নদীর মাধ্যমে দুই ভাগে বিভক্ত। মূল শহর এবং বন্দর এলাকা কর্ণফুলী নদীর পশ্চিম পাশে অবস্থিত। অন্যদিকে ভারী শিল্প এলাকা পূর্ব পাশে অবস্থিত। বর্তমানে সচল দু’টি ব্রিজের মাধ্যমে ক্রমবর্ধমান যানবাহনের চাপ সামাল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
এছাড়াও কর্ণফুলী নদীর তলদেশে পলি জমার কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। পলি সমস্যা সমাধানের জন্য কর্ণফুলী নদীতে অন্য কোনো ব্রিজ নির্মাণের পরিবর্তে নদীর নিচ দিয়ে টানেল (সুরঙ্গ) নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের জন্য ১৮ দশমিক ২০ হেক্টর জমি ও সিডি ভাট খাতে আরও এক হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন। এজন্য প্রকল্প ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে।
সেতু বিভাগ সূত্র আরও জানায়, টানেল নির্মাণ করা হলে কর্ণফুলী নদীর দুই পাশে নতুন নতুন শিল্প কারখানা গড়ে উঠবে। এছাড়া, ভবিষ্যতে সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে ঢাকা এবং চট্টগ্রামের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে। এটি এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে। ফলে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এছাড়া মাতারবাড়িতে ১২শ’ মেগাওয়াট কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্র হচ্ছে, এতে করে টানেলের গুরুত্ব বাড়বে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০১৫
এমআইএস/আরএম