জাতীয় সংসদ ভবন থেকে: দেশের শীর্ষ দুই যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী (সাকা চৌধুরী) ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ফাঁসির আগে প্রাণভিক্ষা চেয়ে প্রমাণ করেছেন তারা অপরাধী ছিলেন। আর এতেই প্রমাণিত হয়েছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল।
রোববার (২২ নভেম্বর) রাতে জাতীয় সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে এ বিষয়ে আলোকপাত করেন সাবেক মুক্তযোদ্ধা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন তাজুল ইসলাম চৌধুরী। এরপর একে একে আলোচনা করেন, খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, জাতীয় সংসদের প্রধান হুইপ আ স ম ফিরোজ, সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান, সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডা. দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, এ কে এম শামীম ওসমান, আব্দুল মান্নান, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ডা. রুস্তম আলী ফরাজী। তারা বলেন, শেখ হাসিনাই পারে, শেখ হাসিনাই পারবে।
খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, শনিবার দিনগত রাতে দু’জন যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি হয়েছে। তাদের দম্ভ ছিল, সেই দম্ভের পতন হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করায় প্রধানমন্ত্রীর ওপর নানাদিক থেকে চাপ আসছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা সপ্তম নৌ-বহর পাঠিয়েছিল তারাও প্রধানমন্ত্রীর ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিল। অনেকেই অনেক কথা বলার চেষ্টা করেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কোনো চাপের কাছে নতি স্বীকার করেন নাই।
তিনি বলেন, একমাত্র শেখ হাসিনার পক্ষেই বিচার কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে। আজকে আমরা কলঙ্কমুক্ত হয়েছি। দেশের মানুষ আজ ১৯৭১ সালের মতোই ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। অতীতেও দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছে। ঘাতকরা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এখনো ষড়যন্ত্র করছে। বিএনপি-জামায়াত দেশকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করেছে। মুক্তিযুদ্ধের অর্জনগুলো এক এক করে নষ্ট করার চেষ্টা করা হয়েছে। সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। তাদের সব ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে। আগামীতেও ব্যর্থ হবে।
খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেনের সমালোচনা করে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ওনাকে ১৯৭৩ সালে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) বিশেষ পিপি নিয়োগ করা হয়েছিল, এখন তিনি কিভাবে রাজাকারদের প্রসিকিউশনের আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এই সংসদের এক সময়কার সবচেয়ে বেয়াদব সংসদ সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এবং আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণেই সম্ভব হয়েছে। এই সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সংসদে কতো অশ্লীল কথা বলেছে, কতজনকে নিয়ে কটাক্ষ করেছে। ওরা (সাকা-মুজাহিদ) স্ত্রীর সামনে স্বামীকে হত্যা করেছে, পিতার সামনে সন্তানদের হত্যা করেছে। দুই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি কার্যকরের মধ্যে দিয়ে প্রমাণ হয়েছে শেখ হাসিনা দেশে আইনের শাসন বজায় রেখেছেন। আর রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়ে প্রমাণ করেছে, তারা সত্যিই অপরাধী ছিলো। শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল।
ডা. দীপু মনি বলেন, জেনারেল জিয়া যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে রাজনৈতিক জোট বাধেন, সরকার গঠন করেন। যুদ্ধাপরাধীর বিচার চাওয়ায় খালেদা জিয়ার শাসনামলে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নামে দেশদ্রোহী মামলা করা হয়। জাহানারা ইমাম মৃত্যুর আগে বলেছিলেন, মৃত্যুর আগে আমার ঘাড় থেকে যেন দেশদ্রোহের মামলা তুলে নেওয়া হয়, সেটি করেননি খালেদা জিয়া। আজ দু’জন যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি হয়েছে।
এ সময় উপস্থিত সদস্যরা, ‘ঠিক, ঠিক’ বলে টেবিল চাপড়াতে থাকেন। তিনি দেশবাসীকে ধৈর্য্য ধরতে বলেন এবং শেখ হাসিনাকে সমর্থন জানানোর আহ্বান জানান।
আ স ম ফিরোজ বলেন, এতো স্বচ্ছ বিচার দেশে কখনও হয়নি। সঠিকভাবে বিচারের রায় হয়েছে। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় ছিলেন বলেই, বিচার সম্ভব হয়েছে। শেখ হাসিনা আইনের শাসন কায়েম করেছেন। তারা (সাকা-মুজাহিদ) রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়ে প্রমাণ করেছে, শেখ হাসিনর সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল।
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, কুখ্যাত দুই রাজাকার সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসি হয়েছে। আর সেই যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ নিয়ে বিএনপি বলছে, সালাউদ্দিন চৌধুরী পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ। এই হলো বিএনপির রাজনীতি। তারা আজ যুদ্ধাপরাধীর পক্ষে পরোক্ষভাবে মত দিয়েছে। দুই যুদ্ধাপরাধীর রায় কার্যকর করার মধ্য দিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রমাণ করেছেন, শেখ হাসিনা পারেন, শেখ হাসিনাই পারবেন।
তিনি বলেন, রাতে যখন দুই যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি হয়, তারপর আমার ফুফু (৯৩ বছর বয়সী) আমাকে ফোন করে বলেন, বাবা এতো রাতে তোমাকে ফোন করেছি এজন্য, আমি তো পারবো না, তুমি আমার হয়ে তোমার প্রধানমন্ত্রীর কাছে ধন্যবাদ পৌঁছে দিও।
বাংলাদেশ সময়: ২১০৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০১৫
এসএম/আরএম