লালমনিরহাট: ভারতের নাগরিকত্ব বেছে নেওয়া লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বিলুপ্ত চার ছিটমহলবাসীর দ্বিতীয় দলটি নিজ দেশের উদ্দেশে রওনা হয়েছে। বিদায় বেলায় বিলুপ্ত ছিটমহলগুলোতে বিষাদের আবহ বিরাজ করছে।
দ্বিতীয় দলে ৩০ পরিবারের ভারতের ট্রাভেল পাসধারী ১৩০ জন রয়েছেন। তারা ভারতে যেতে সোমবার (২৩ নভেম্বর) সকাল ১০টায় বিলুপ্ত ছিটমহল ত্যাগ করে বুড়িমারী স্থলবন্দরের উদ্দেশে রওনা হন।
এর আগে বৃহস্পতিবার (১৯ নভেম্বর) দুপুরে একই উপজেলার ১১৪ লতামারীর একটি ও হাতীবান্ধার ১৩৫ ও ১৩৬ নম্বর গোতামারী ছিটমহলের ১৭টি পরিবারের ৬২ জনের প্রথম দলটি বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে নিজেদের দেশে যান।
প্রথম দলের মতো দ্বিতীয় দলের লোকজনও এতোদিনের বাড়িঘর, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, প্রতিবেশীদের ছেড়ে যাওয়ার সময় এলাকায় কান্নার রোল পড়ে যায়।
ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া শেষে তাদের পৌঁছে দেওয়া হবে ভারতের কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জে তৈরি অস্থায়ী ক্যাম্পে।
শীতের কুয়াশা ভেদ করে প্রতিদিনের মতো আজও সূর্য উঠেছে বিলুপ্ত বাঁশকাটা ছিটমহলে। চিরাচরিত প্রাণচাঞ্চল্যে ভরা এই গ্রামে সোমবারের সূর্যদয় ছিল একটু অন্যরকম। এখানকার ৩০ পরিবারের ১৩০ জন ভারতীয় নাগরিকত্ব নিয়ে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক পেছনে ফেলে যাচ্ছেন নিজেদের দেশে। হয়তো আর কখনোই তাদের সঙ্গে দেখা হবে না। তাই আলো ফোটার পর থেকে পুরো গ্রামের মানুষ নিজেদের কাজ ফেলে জড়ো হতে থাকেন তাদের বাড়িতে।
ছিটমহল বিনিময়ের পর ভারতীয় নাগরিকত্ব বেছে নেওয়া এসব মানুষের আত্মীয়-স্বজন অনেকেই রয়ে যাচ্ছেন এই দেশে। বিদায় বেলায় তাদের কান্নার শব্দে গোটা এলাকার বাতাস ভারি হয়ে ওঠে।
তারা যেহেতু ভারতে যাওয়ার সীদ্ধান্ত নিয়েছেন তাই শত কষ্টের মধ্যেও সরকারি ব্যবস্থাপনায় আসা গাড়ি ধরতে হবে সকাল সকাল। তাই পোশাক, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতেই ছেড়ে যান নিজেদের জন্মভিটা।
এসময় বন্ধুত্বের স্মৃতি ধরে রাখতে উপহার বিনিময়ও করেন অনেকে। কেউ কেউ আবার সঙ্গে নিয়ে বের হন নিজের পোষা গরু বা ছাগল।
পাটগ্রাম উপজেলার সদ্যবিলুপ্ত ১১২, ১১৫ ও ১১৯ বাশঁকাটা এবং ১১৫ খড়খড়িয়া ছিটমহলের যারা সোমবার ভারতে যাচ্ছেন, তাদের মালপত্র বোঝাই ট্রাক ও তাদের বহনকারী বাসগুলো পাটগ্রামের সরকারের হাট থেকে যখন বুড়িমারী স্থলবন্দরের উদ্দেশে ছেড়ে যেতে শুরু করে তখন কান্নার রোল পড়ে যায়।
পাটগ্রামের জোংড়া ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত হওয়া ১১৫ নম্বর বিলুপ্ত ছিটমহলের বাসিন্দা রত্না রানী বাংলানিউজকে জানান, স্বামী আর সন্তানের জন্যই জন্মভূমি ত্যাগ করতে হলো তাকে।
লালমনিরহাটের ৫৯টি বিলুপ্ত ছিটমহলের মধ্যে ১৯৫ জন ভারতীয় নাগরিকত্ব নিতে আবেদন করেন। এর মধ্যে ১৯ নভেম্বর প্রথম দলটিতে ৬২ জন ভারতে চলে গেছেন। সোমবার ৩০ পরিবারের ১৩০ জনের দ্বিতীয় দলটিও ভারতে যাচ্ছে। বাকিরা যেতে চাইলে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে যেতে পারবেন।
সোমবার বেলা ১টার দিকে বুড়িমারী স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) আমিনুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, তারা বন্দরে পৌঁছুলে ইমিগ্রেশনের অনুষ্ঠানিকতা শেষে ভারতে পৌঁছে দেওয়া হবে।
** দ্বিতীয় দফায় ভারতে গেলেন পঞ্চগড়ের ১৪৭ জন
বাংলাদেশ সময়: ১৩০১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৫
এসআই