ভোলা: ধান কাটার মৌসুমে অন্যবারের মতো এবারও লাঠিয়াল বাহিনীর আতঙ্কে দিন কাটছে ভোলার দৌলতখানের বিচ্ছিন্ন জনপদ মদনপুরায়। চর দখল ও ধান লুটের ভয় জেঁকে বসেছে কৃষকদের মাঝে।
অসহায় কৃষকদের মারধর, নির্যাতন, হুমকি ধমকিসহ নানা ধরনের ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে চলেছে বেশ কিছু লাঠিয়াল বাহিনীর সদস্যরা। এমন অভিযোগ করেছেন মদনপুরার কৃষকরা। এ পরিস্থিতিতে তারা তাদের কষ্টার্জিত ফসল ঘরে তুলতে পারবেন কিনা তা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
রোববার(২২ নভেম্বর) ভোরে একদল লাঠিয়াল চক্র মো. বাসু নামে এক কৃষকের ঘরে অগ্নিসংযোগ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় রোববার সন্ধ্যায় দৌলতখান থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
অসহায় কৃষক মো. বাসু অভিযোগ করেন, গভীর রাতে একদল লাঠিয়াল ঘরে আগুন দিয়ে সটকে পড়ে। আগুনের বিষয়টি টের পেয়ে স্থানীয়দের সহায়তায় তা নেভানো হয়। অল্পের জন্য প্রাণে ও বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা হয়েছে। চরের লাঠিয়াল সাজাহান, বেনু, বেল্লাল, ফরিদ, মালেক ও সালামরা এ আগুন দিয়েছে বলে অভিযোগ কৃষক বাসুর।
তবে, অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্তদের বক্তব্য নেওয়ার জন্য যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, আমন ধানের সমারোহ চরজুড়ে। কিন্তু থমথমে অবস্থা সেখানে। কৃষকদের চোখ-মুখে আতঙ্কের ছাপ। তাদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও অনেকে ভয়ে মুখ খুলতে চাচ্ছে না। ধান ও চর রক্ষা নিয়ে চিন্তিত তারা।
মদনপুর চরের গোয়াল ফারুক, রাখাল কুদ্দুস ও কৃষক সিরাজুল বাংলানিউজকে জানান, ধান পাকতে শুরু করেছে, এর সঙ্গে সঙ্গে লাঠিয়ালদের চোখও লাল হয়ে গেছে। লাঠিয়ালরা চর দখল ও ধান লুট করতে চরে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে চলছে। কৃষকদের অন্যায়-অত্যাচার ও জুলুম নির্যাতন করছে।
চরবাসীর অভিযোগ, ভোলার দৌলতখান ও নোয়াখালীর কমলনগর এলাকার বেশ কিছু চক্র চরে লাঠিয়ালদের নেতৃত্ব দিচ্ছে। তাদের ভয়ে কৃষকরা মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না।
চরে ২ একর জমিতে আমন ধান চাষ করেছেন কৃষাণী পারুল, ৩ একর জমিকে সবুরা বিবি, এক একর জমিতে বিধবা মেহের আরজান। তারাও ধানের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত। তারা জানান, লাঠিয়াল চরে এসে মহড়া দিচ্ছে। ধান ঘরে তুলতে পারবো কিনা জানি না। লাঠিয়ালদের ভয়ে আতঙ্কিত সবাই।
এ ব্যাপারে দৌলতখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল বাশার বাংলানিউজকে জানান, কৃষকের ঘরে আগুন দেওয়ার ঘটনায় বেশ কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে মো. হারুন নামে এক কৃষক মামলা করেছেন। পুলিশ ওই বিষয়টির তদন্ত করছে।
চরে উত্তেজনার বিষয়ে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত উত্তেজনাপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি, তবে উত্তেজনা হলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৫
পিসি/