ঢাকা: দেশব্যাপী জামায়াতের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতালে সোমবার (২৩ নভেম্বর) সকাল থেকেই রাজধাবাসীর মধ্যে কর্মচাঞ্চল্য দেখা গেছে।
জীবিকার টানে পথে নেমে আসে মানুষ।
হরতালের নামে পেট্রোল-বোমা ও আগুন দেওয়ার ঘটনায় প্রথমে জনমনে কিছুটা আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। যদিও এখন দিনে দিনে তা কেটে গেছে।
তাই নাম সবর্স্ব এমন হরতালের কোনো প্রভাব নগরীতে পড়েনি। অন্যান্য দশটা দিনের মতোই কাজে বের হয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। তবে খেটে খাওয়া এসব মানুষের মধ্যে কিছুটা আতঙ্কও রয়েছে।
কথা হচ্ছিল রিকশাচালক ফায়জুল মিয়ার (৫১) সঙ্গে। কিশোরগঞ্জের ইটনায় জন্ম নেওয়া এই কর্মজীবী জীবনের অর্ধেক সময় কাটিয়েছেন রিকশা চালিয়ে।
রাজধানীর আগারগাঁও বাংলাদেশ বেতারের প্রধান কার্যালয়ের সামনে অলস সময়ে বসে সিগারেট টানছিলেন তিনি।
জানালেন, অন্যান্য দিন সাধারণত রিকশা চালিয়ে চারশ’ টাকা আয় হয়। তবে সোমবার দুপুর নাগাদ ১০০ টাকাও পার হয়নি।
নিম্ন আয়ের আর পাঁচটা মানুষের মতো হরতাল ফায়জুলের কাছেও একটা অহেতুক ও বিরক্তের কারণ। কেননা হরতাল থাকলে এসব দিনমজুর মানুষের রুটি-রুজির ওপর প্রভাব পড়ে।
বিরক্ত অবয়বে ফায়জুল বলছিলেন, ‘হরতাল নিয়্যা কেমনে কইতাম! আমরা অইলাম মূর্খ মানুষ! গাড়ি চালাই কাম করি, ভাত খাই। ’
‘ভাড়া মারি চারশ, আর এহন একশই মারতে হারিনা। মানষ্যেও (মানুষ) রাস্তায় বাইর হয়, বাসও ভালাই চলে। লাথি শুধু আমরার পেডে। ’
নাম সর্বস্ব হরতাল ফায়জুলের রিজিকে ‘হামলা’ চালালেও সোমবার যে হরতাল তাই জানেন না চাঁদপুরের কচুয়ার আনোয়ারা খাতুন।
প্রতিদিন আগারগাঁও পাসপোর্ট কার্যালয়ের সামনে পান-সিগারেট বিক্রি করেন তিনি।
জানালেন, সব খরচ বাদ দিয়ে দিন শেষে দেড়শ থেকে দুইশ’ টাকা আয় করে বাড়ি ফেরেন আনোয়ারা।
হরতালের দিনেও আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসের সামনে মানুষের ঢল। যে কারণে আনোয়ারার ক্ষুদ্র ব্যবসায় কোনো প্রভাব পড়েনি।
এক প্রশ্নের জবাবে আনোয়ারা বলেন, আইজক্যা হরতাল নি? পান-বিড়ি বেচা-কেনা তো ভালোই হয়। হরতালের কথা তো জানতামই না। ’
আনোয়ার পাশেই আখের রস বিক্রি করছেন কামাল হোসেন। গ্রামের বাড়ি মাদারীপুর; দীর্ঘদিন ধরে পাসপোর্ট অফিসের সামনে আখের রস বিক্রি করছেন।
কামাল হোসেন জানালেন, হরতাল মানুষের মনে মনে, পথে ঘাটে তেমন নেই। হরতালে তার ব্যবসাতেও কোনো প্রভাব নেই।
মহাখালী রেলক্রসিং এলাকায় সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালক জহির বলেন, ‘হরতাল অয় না। মানুষ ঠিকই কাজে বের হয়। কিন্তু একটু আতঙ্ক তো থাকেই। ’
এ ধরনের হরতালে বেশ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খেটে খাওয়া মানুষজন। আইন করে হরতাল নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছেন তারা।
ক্ষোভ প্রকাশ করে বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘দেশে এমন রাজনীতি চালু করা দরকার, যে রাজনীতি উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত না করে। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৫
এমআইএস/এমএ