ঢাকা: পূর্ব আকাশে তখন একটু একটু করে উকি দিচ্ছে ভোরের সূর্য। সুনসান নিরবতার মধ্যে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে সুন্দরী এক তরুণী রাস্তায় উদ্দেশহীন, কাউকে যেন খুঁজছে।
কিছুক্ষণ আবারও নজর পড়তেই দেখা গেলো একটি বাস কাউন্টারে গিয়ে মেয়েটি সেখানে থাকা লোকজনের কাছে সহযোগিতা চাইছেন। জানা গেলো, প্রতারক স্বামী তাকে ফেলে রেখে পালিয়ে গেছে।
ব্যাপারটি নিয়ে কাউন্টারের লোকজনের সঙ্গে আলাপ করে অনেকটা বাকরুদ্ধ মেয়েটি সমস্যার বিষয়ে আঁচ করা গেলো।
মেয়েটি বাংলানিউজকে বলেন, যশোর থেকে স্বামী রায়হান শেখসহ ঢাকায় আসেন তারা। ভোরে তারা সায়দাবাদ বাস টার্মিনালে পৌঁছানোর পর তার স্বামী তাকে একটি বাস কাউন্টারে বসিয়ে বাইরে যায়। দীর্ঘ সময় পরেও সে আর ফিরে আসেনি।
এদিকে রায়হান শেখের মুঠোফোনে বার বার চেষ্টা করেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।
বাস কাউন্টারের সুপার ভাইজার সেলিম বাংলানিউজকে বলেন, একজন যুবক মেয়েটিকে নিয়ে এখানে আসেন। তারপর মেয়েটিকে ভিতরে বসিয়ে রেখে মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে বেরিয়ে যেতে দেখেছি।
ঘটনার আরও গভীরে যাওয়ার চেষ্টা করলাম।
মাস দুয়েক আগে একটি অপরিচিত নম্বর থেকে কল আসে শামীমার (ছদ্মনাম) ফোন নম্বরে। ফোনেই প্রেম-পরিচয়। অল্প সময়ের মধ্যে ছল-চাতুরীর মাধ্যমে মেয়েটিকে বিভ্রান্ত করে প্রতারক রায়হান শেখ (২৬)। মেয়েটিকে বিয়ের জন্য রাজী করায় ছেলেটি।
চোখে সোনালী ভবিষ্যতের স্বপ্ন নিয়ে গত ২৪ অক্টোবর রায়হানের প্রস্তাবে রাজি হয়ে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয় শামীমা। কিন্তু বিকৃত রুচির প্রতারকের খপ্পরে পড়ে বিয়ের মাত্র এক মাসের মাথায় উবে গেলো শামীমার সব সুখ, স্বপ্ন।
অন্ধ আবেগে বিভ্রান্ত শামীমা রায়হান শেখকে বিয়ে করতে বাড়ি থেকে পালিয়েও এসেছিলেন।
বিয়ের পর রায়হান শামীমাকে কক্সবাজার, খুলনা ও যশোরে তার কথিত আত্মীয়দের বাসায় নিয়ে যায়।
পরে ঢাকা শহর ঘুরে দেখানোর নাম করে রাজধানীতে নিয়ে আসে এবং সায়েদাবাদে একটি বাস কাউন্টারে ফেলে চলে যায়।
শামীমাকে রেখে যাওয়ার আগে মেয়েটির কাছে থাকা বিয়ের কাবিননামা ও ছবি নিয়ে যায়। এমনকি মেয়েটির গলার নেকলেস, কানের দুল, নাক ফুল, মোবাইল ফোনটিও নিয়ে যায়।
রায়হান নামের ছেলেটির বাড়ি খুলনার ফুলতলা। রায়হানের ঠিকানা সর্ম্পকে নিশ্চিত করে কিছু বলে পারেননি শামীমা।
শামীমা জানায়, তার স্বামী যশোরের মনিরামপুর জনতা ব্যাংক শাখায় গার্ড হিসেবে কাজ করে। যদিও বিয়ের আগে ভিন্ন পরিচয় দিয়ে ছিলো প্রতারক রায়হান।
এদিকে বাড়ি থেকে পালিয়ে আসায় মান সম্মান ও সামাজিক হয়রানির ভয়ে বাড়ি যেতে চাইছিলেন না শামীমা। পরে শামীমার মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে এক নিকট আত্মীয়ের মাধ্যমে পরিবারের কাছে পাঠানো হয়।
মেয়ে ও তার পরিবার প্রতারক রায়হানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এ ধরনের প্রতারণা থেকে বাঁচতে সবাইকে আরো সচেতন হওয়ার ওপর গুরত্ব দিতে বলেন সমাজ বিজ্ঞানীরা। একই সঙ্গে প্রতারকদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি নিশ্চিত করতে আইনের সহায়তা নেওয়ারও পরামর্শ দেন তারা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞানের অধ্যাপক ফাতেমা রেজিনা বাংলানিউজকে বলেন, মানুষ আবেগপ্রবণ, কিন্তু এত বেশি আবেগ প্রবণ হওয়া ঠিক নয়। মাত্র দুই মাসের পরিচয়ে একজনকে বিয়ে করে ফেলার দুঃসাহস দেখানোর কোন কারণ নেই।
কারো সর্ম্পকে ভালোভাবে না জেনে, তার নাম পরিচয়, ঠিকানা নিশ্চিত না হয়ে কারো সঙ্গে বন্ধুত্ব করাও ঠিক নয়।
অধ্যাপক ফাতেমা বলেন, মানুষকে বিবেক বুদ্ধি দেয়া হয়েছে সেটাকে কাজে লাগাতে হবে। আবেগে অন্ধ হয়ে কোন কিছু করার আগে সিদ্ধান্ত নিতে হবে সে কি প্রতারিত হতে চায়, নাকি নিজেকে রক্ষা করতে চায়।
তিনি আরো বলেন, ছেলেমেয়েরা প্রেমের জন্য কাঁদবে কেন? তারা পড়াশুনা করে নিজের জীবনকে গড়বে।
প্রতারণার হাত থেকে বাঁচতে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করার ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ২২০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৫
এমইউএম/ওএইচ/