ঢাকা: ‘শীত বাড়লেই রাতে আমাগো দুঃখ-কষ্ট নিয়া অনেক মানুষ কথা কইতে আসে। ক্যামেরা নিয়া আইস্যা ছবিও তোলে।
মঙ্গলবার(২৪ নভেম্বর) রাত সোয়া ২টার দিকে হাইকোর্ট মাজারের সামনে ৬০ বছর বয়সী লাইলী বেগম বসে ছিলেন প্লাস্টিকের বস্তার ওপর। ‘এত রাতে কেন বসে আছেন জিজ্ঞেস করতেই তিনি বলেন, ‘শীতে ঘুমাতে পারছি না বাবা। একটা কম্বল ছিল চোরে নিয়ে গেছে চারদিন আগে। ’
গত বছর শীতে দুটি কম্বল পেয়েছিলেন লাইলী বেগম। তা রাখার নির্দিষ্ট জায়গা না থাকায় সঙ্গে করেই ঘুরতেন তিনি। চারদিন আগে সন্ধ্যা ৭টার দিকে হাইকোর্ট মাজারের গেটে কম্বলটি রেখে খাবারের সন্ধানে যান তিনি। পরে এসে সেটি আর পাননি। চোরে নিয়ে গেছে লাইলী বেগমের শীত নিবারণের শেষ সম্বল কম্বলটি!
রাতে সরেজমিনে দেখা যায়, হাইকোর্ট মাজারের সামনে কেউ ঘুমিয়ে আছেন, কেউ হাত-পা গুটিয়ে বসে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। এসব ছিন্নমূল মানুষের শীতের জন্য গরম কাপড় না থাকায় ঘুমোতেও পারছেন না।
এখন অগ্রহায়ণ মাস। তেমন ভাবে শীত জেঁকে না বসলেও খোলা আকাশের নিচে, রাস্তার ওপর শুয়ে থাকলে শীত ঠিকই হাড়ে কাঁপন ধরিয়ে দেয় শিশু ও বৃদ্ধদের। প্রতি বছর আরও আগে শীত মোকাবেলা করার জন্য কম্বল দিয়ে যেত বিভিন্ন মানুষ, তবে এবার এখনও কেউ কম্বল দিয়ে যায়নি জানান পথবাসিন্দা কানিচ।
স্বামী অভিমান করে চলে গেছে দুই বছর আগে। সেই থেকে হাইকোর্টের সামনে আড়াই বছরের শিশু সন্তান সূর্যকে নিয়ে বসবাস করছেন কানিচ। গভীর রাতেও জেগে আছে মা-ছেলে। কি কারণে জেগে আছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঠাণ্ডায় ছেলের কাশি হয়েছে। ঘুমাতে দিচ্ছে না। ’
‘ধনী মানুষরা শীত আসলেই জামা-কাপড় দেয়, কম্বল দেয়। কিন্তু এবার এখন কেউ কিছু দেয়নি’ বলেন কানিচ।
ওই এলাকায় দেখা যায়, বৃদ্ধদের অধিকাংশই জেগে আছেন। অনেকে পলিথিন দিয়ে শীত থেকে নিজেকে রক্ষা করছেন। তবে, সবাই কিছু না কিছু মুড়ি দিয়ে ঘুমাচ্ছে হাত-পা গুটিয়ে।
বাংলাদেশ সময়: ০৬০৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৫
এফবি/পিসি