ঢাকা: ‘রাস্তার ৫০ ফুট জায়গা দখল করে একটি প্রাইভেটকারে দেখা যায় একজন চালক ও মাত্র একজন আরোহী। অন্যদিকে একটি বাস রাস্তার ১২০ ফুট জায়গা দখল করে ৮০ থেকে ১০০ জন যাত্রী বহন করে।
সড়কে গণপরিবহন আর প্রাইভেটকারের তুলনামূলক এ চিত্র বাংলানিউজকে বলছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইন্সটিটিউটের সহকারী অধ্যাপক কাজী সাইফুন নেওয়াজ। তাদের সরেজমিন গবেষণায় বিষয়টি উঠে এসেছে।
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টসহ বিভিন্ন সংস্থার গবেষণা পরিসংখ্যান অনুসারে, রাজধানীর ৫ শতাংশ বাসিন্দা প্রাইভেটকারে চলাচল করেন, যা সড়কের ৭০ শতাংশ জায়গা দখল করে রাখে।
বিআরটিএ’র সচিব শওকত আলী বাংলানিউজকে জানান, প্রাইভেটকারের ওপর নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও বেশ কিছু পরিকল্পনার একটি খসড়া মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। এসব পরিকল্পনার মধ্যে ঢাকা শহরে প্রাইভেটকার, জিপ, মাইক্রোবাসের মতো ব্যক্তিগত যানবাহনের সংখ্যা (সিলিং) পরিবারপ্রতি নির্ধারণ করে দেবে বিআরটিএ।
শওকত আলী জানান, জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের খসড়াটি মন্ত্রণালয়ে দেওয়া হয়। এখন মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা ও নীতিমালা পেলেই ব্যবস্থা নেবে বিআরটিএ।
বিআরটিএ সূত্র জানায়, রাজধানীতে চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় ১০ লাখ বিভিন্ন ধরনের যান্ত্রিক যানবাহনের নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রাইভেটকারের সংখ্যা প্রায় আড়াই লাখ। যেখানে ২০০৯ সালে এ সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৪৩ হাজার ৩৮৯টি। শেষ সাড়ে ৪ বছরে প্রাইভেটকার নিবন্ধনের হার ছিল বছরে গড়ে ১৫ হাজার ৯১০টি।
২০১০ সালে ১৯ হাজার ৬১৫টি, ২০১১ সালে ১১ হাজার ৪২৩টি, ২০১২ সালে ৮ হাজার ১৮৭টি, ২০১৩ সালে ৯ হাজার ২৩১টি, ২০১৪ সালে ১২ হাজার ৯৭২টি ও ২০১৫ সালের জুলাই পর্যন্ত মোট ১০ হাজার ১৭০টি প্রাইভেটকারের নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া রাজধানীতে নিবন্ধিত জিপের সংখ্যা ২৬ হাজার ৭৫৩টি ও মাইক্রোবাসের সংখ্যা ৬০ হাজার ৭৯৪টি, যা গণপরিবহনের পর্যায়ে পড়ে না। অন্যদিকে নিবন্ধিত গণপরিবহনের মধ্যে বাস রয়েছে ২৩ হাজার ২৯টি ও মিনিবাস রয়েছে ৯ হাজার ৯৯৯টি।
পরিবেশবাদী ১৩টি সংগঠন জানিয়েছে, ঢাকা শহরের যানজটের অন্যতম কারণ প্রাইভেটকার। অথচ প্রতিদিন শতাধিক নতুন কারের নিবন্ধন দেওয়া হচ্ছে।
তাই যানজট নিরসনে প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণ-বিষয়ক নীতিমালার দাবি তুলেছে বাংলাদেশ এসব সংগঠন।
বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক স্থপতি ইকবাল হাবিব বাংলানিউজকে জানান, ঢাকা শহরে যতো রাস্তা আছে তার মাত্র ২১ শতাংশ গণপরিবহন চলার মতো। তার মধ্যে বাসের পরিমাণ ১১ শতাংশ।
তিনি আরও জানান, প্রাইভেটকারে দৈনিক পৌনে ৩ কোটি ‘ট্রিপ’ তৈরি হয়। এগুলোর ধরন এমন যে, দু’তিন কিলোমিটার দূরত্বের জায়গায় কোনো একজনকে দিয়ে আসা আবার গিয়ে নিয়ে আসা।
তিনি বলেন, এসব ট্রিপ আকারে চলা প্রাইভেটকার সড়কের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ জায়গা দখল করে মাত্র ৮ থেকে ১০ শতাংশ মানুষ বহন করে।
এই নগর পরিকল্পনাবিদ বলেন, প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রন করা মানে নিষিদ্ধ নয়। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে প্রাইভেট গাড়ি নিয়ন্ত্রণে আনতে যে পদ্ধতি অনুসরণ করে আমাদেরও সে পদ্ধতির দিকে যেতে হবে।
সিঙ্গাপুরের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, সে দেশে নির্ধারিত সময় ও দিন কিছুসংখ্যক নম্বরপ্লেটের গাড়ি চলার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। ফলে সব ব্যক্তিগত গাড়ি একসঙ্গে বের হয়ে রাস্তায় যানজটের সৃষ্টি করে না।
স্থপতি ইকবাল হাবিব পরামর্শ তুলে ধরে বলেন, এই মুহূতে বড় আকারের যানজট বন্ধ করতে হলে বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লাইন করতে হবে। চালু করতে হবে কমিউটার ট্রেন, ওয়াটার রুট চালু করতে হবে, এরপরে মেট্রোরেল।
আরও ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, রাজধানীর যে খালগুলো আছে সেগুলো উদ্ধার করে ওয়াটার রুট চালু করলে একদিকে যেমন যানজট কমবে, তেমনি জলজটও দূর হবে।
আর আন্ত:জেলা রেললাইনের দু’পাশে কমিউটার ট্রেন প্রতি ২০ মিনিট পর পর চালু করলে যানজট অনেকটাই কমে যাবে।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, সরকার যানজট নিরসনে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়েছে। এ পরিকল্পনার মধ্যে ৬টি মেট্রোরেল রুট, পাতালরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে রয়েছে।
তিনি মনে করেন, ২০১৮ ও ২০১৯ সালের দিকে এসব বাস্তবায়নের দিকে গেলে যানজট নিরসন ঘটবে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থায় একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তনও সূচিত হবে।
আর এসব বড় বড় প্রকল্প নির্মাণ এখন থেকে জনগণকে কিছুটা ভোগান্তির কবলে পড়তে হতে পারে তবে তা সাময়িক। এসব প্রকল্পের সঙ্গে ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট ঠিকভাবে করা হচ্ছে বলে ভোগান্তির মাত্রা অসহনীয় পর্যায়ে যাবে না।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৫
এসএ/এএসআর