ঢাকা: রাজধানীর বাসিন্দাদের বাসা পাহারা দেওয়ার জন্য সাধারণত গার্ড রাখা হয়। তারপরও চুরি, ডাকাতি বা নানা রকম সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটে থাকে।
কুকুরের ওপর বাসার দায়িত্ব দিয়ে নিশ্চিন্ত রাজধানীর উত্তরখানের রিয়াজ হোসেন। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আমার ৭টি কুকুর রয়েছে। ওরা বাসায় পাহারাদারের ভূমিকা পালন করে। কুকুরগুলো আমার পরিবারেই সদস্য।
৩/৪ বছর ধরে কুকুর পোষেন জানিয়ে রিয়াজ বলেন, আজ পর্যন্ত ওরা আমার কোনো ক্ষতি হতে দেয়নি। আমি যখন যা বলি তাই করে। ওদের সামনে অনেক সময় কাঁচা মাংস রেখে দিয়ে দেখছি, অনুমতি ছাড়া একটুকরো মাংসও মুখে দেয় না।
তিনি আরও বলেন, আমার স্ত্রী ও আমি বেশিরভাগ সময় চাকরি ও ব্যবসার কারণে বাসার বাইরে থাকি। বাসায় কোনো দারোয়ান নেই, ওরাই আমাদের বাসা পাহারা দেয়। খাবার হিসেবে ওদের ড্রাই ফুড, দুধ, ডিম দিতে হয়।
তার মতোই আরেক কুকুরপ্রেমী রজস্বী দাস। বাসা পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার। তিনিও বাসায় ১২টি কুকুর পোষেন। বৃহস্পতিবার (২৬ নভেম্বর) লায়ন নামে তার একটি পোষা কুকুর জাতীয় প্রেসক্লাবে কুকুর প্রদর্শনীতে নিয়ে এসেছেন। লায়নের বয়স তিন বছর। ওজন ৮০ কেজি।
তাদের মতো আরও অনেকেই বৃহস্পতিবার (২৬ নভেম্বর) প্রেসক্লাবের কুকুর প্রদর্শনীতে নিজের পোষা কুকুর নিয়ে এসেছেন। এরা সবাই শখে কুকুর পোষেন। আবার এসব কুকুরই তাদের পাহারাদারের ভূমিকা পালন করছে।
কুকুর পোষা বিষয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের প্রধান ভেটেরিনারি কর্মকর্তা ডা. মো. আব্দুল হালিম বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের দেশে কুকুর পোষার প্রচলন সেভাবে হয়ে ওঠে না। প্রথমবারের মতো কুকুর প্রদর্শনীর মাধ্যমে এ বিষয়ে অনেকেই উৎসাহিত হবে।
তিনি বলেন, কুকুর পালন কতোটা গুরুত্বপূর্ণ তা হয়তো অনেকেরই অজানা। যেসব কুকুর এখানে প্রর্দশিত হয়েছে, এর সবগুলোরই সন্ত্রাসী ধরতে, বোমা বা এসিড সনাক্ত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার ক্ষমতা রয়েছে।
ট্রাস্ট ক্যানেল অ্যান্ড ইমপোর্টস বাংলাদেশ নামে একটি বেসরকারি সংস্থা বিভিন্ন দেশ থেকে কুকুর আমদানি করে সরবরাহ করে থাকে। এই সংস্থার প্রোপ্রাইটর ও ডগ কনসালটেন্ট মাশফিকুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আমি ১৯৯৫ সাল থেকে কুকুর পালন করছি। বর্তমানে এলিট ফোর্সের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কুকুর সরবরাহ করছি। এই মুহূর্তে রবি, লাফার্জসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমার চুক্তি রয়েছে। তাদের অফিসে রাতে ডগ স্কোয়াডে পাঠাই, সকাল আবার নিয়ে আসি।
তিনি বলেন, আমার কাছে ১২ প্রজাতির কুকুর রয়েছে। সবগুলোকে বোমা শনাক্তের ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছে। ভাটারায় এলিট ফোর্সের এক বিঘা জমিতে বোমা পুঁতে রেখে সনাক্ত করার জন্য ডগ স্কোয়াড ছেড়ে দেওয়া হয়। ওরা সেগুলো খুঁজে বের করতে পারছে। ট্রেনিংপ্রাপ্ত এসব কুকুরের মূল্য ১ লাখ টাকার বেশি।
ন্যাশনাল সালভেনশন মুভমেন্ট নামে একটি বেসরকারি সংস্থা এই কুকুর প্রদর্শনীর আয়োজন করে। সংস্থার চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন মজুমদার প্রদর্শনী ও আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন।
প্রদর্শনীতে ল্যাবেডর, ডোবারম্যান, ইংলিশ ককার প্যানেল, গোল্ডেন রিকট্রিভার, পাগ, জার্মান সেফার্ড, রট ইউলার, পিডরনসহ নানা প্রজাতির কুকুর আনা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ০৩১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১৫
এসএম/আরএম