ঢাকা: চট্টগ্রাম সমিতি-ঢাকা আয়োজিত ঐতিহ্যবাহী ‘বার্ষিক মেজবান ও মিলনমেলা-২০১৫’ অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেছেন, সব ধরনের রাজনৈতিক মতভিন্নতা ও আঞ্চলিকতার বাইরে এসেই বাণিজ্যিক রাজধানী বন্দরনগরী চট্টগ্রামের উন্নয়নে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। কারণ চট্টগ্রামের উন্নয়ন মানেই বাংলাদেশের উন্নয়ন।
শনিবার বেলা এগারোটায় রাজধানীর মোহাম্মদপুরে সরকারি শারীরিক শিক্ষা কলেজ মাঠে সমিতির সভাপতি লায়লা সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মো. গিয়াস উদ্দিন খানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মিলনমেলার শুরুতে পবিত্র ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ করেন মওলানা ড. মুহম্মদ এমদাদ উদ্দিন, ভিক্ষু সুনন্দপ্রিয় ও অসিম চৌধুরী।
চারপর্বে বিভক্ত অনুষ্ঠানমালার মূল আয়োজন চট্টগ্রাম সমিতির পদক প্রাপ্তিতে অনুভূতি ব্যক্ত করেন এমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, এ এম. এম. নাসরুল্লাহ খান, অধ্যাপক ডা. রবিউল হোসেন ও মোঃ জাহাঙ্গীর আলম খান ।
মেজবানের সফলতা কামনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সমিতির সভাপতি লায়লা সিদ্দিকী ও সাধারণ সম্পাদক মো. গিয়াস উদ্দীন খানের হাতে ফুলের তোড়া তুলে দেন প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিঞা মোহাম্মদ জয়নাল আবেদিন।
অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে চট্টলশিখার মোড়ক উন্মোচন করা হয়। সমিতির নেতৃবৃন্দ এই পর্বে উপস্থিত থেকে বক্তৃতা রাখেন। উপস্থিত ছিলেন চট্টলশিখা সম্পাদক মোস্তফা ইকবাল চৌধুরী মুকুল ও সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি মুহাম্মদ মারুফ শাহ চৌধুরী।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় ও মূল পর্বে সভাপতিত্ব করেন সমিতির সভাপতি লায়লা সিদ্দিকী। সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ গিয়াস উদ্দিন খান ও পদক কমিটির সদস্য সচিব শফিকুর রহমান শফিক এর উপস্থাপনায় এই পর্বে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন সাবেক সভাপতি মোঃ আজিজুল হক চৌধুরী, ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এম এম নাছির উদ্দিন, উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান ড. রণজিৎ কুমার বিশ্বাস পদক প্রাপ্ত বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, অধ্যাপক ডা. রবিউল হোসেন, ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, এ এম এম নাসরুল্লাহ খান ও মোঃ জাহাঙ্গীর আলম খান। পদক প্রাপ্তদের সংক্ষিপ্ত জীবনী পাঠ করে শোনান আহমদ মমতাজ, মাহমুদ সালাহউদ্দীন চৌধুরী, এডভোকেট নাসরিন সিদ্দিকা লিনা। পদকপ্রাপ্তরা চট্টগ্রাম সমিতির পদক ও সম্মাননা গ্রহণ করে অনুভূতি ব্যক্ত করেন। নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, চট্টগ্রামে ১৬ বছর শিক্ষকতা করেছি। সেসময় সামাজিক রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে সম্পৃক্ত থেকেছি। সে সময় চট্টগ্রামবাসীর ভূমিকা ও তারা যে আমাকে আপন করে নিয়েছে তা আমি কখনো ভুলবো না। তাই চট্টগ্রামবাসীয় আহ্বান পেলে আমি উপস্থিত না হয়ে পারি না। চট্টগ্রাম সমিতি আমাকে পদক দিয়েছে চট্টল সুহৃদ হিসেবে এই পদক আমি আনন্দচিত্তে গ্রহণ করলাম।
সভায় সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, চট্টগ্রামের উন্নয়নের জন্য একবিংশ শতাব্দীর গ্লোবাল সিটির বিকল্প নেই। চট্টগ্রামকে বাদ দিয়ে সরকারের মধ্যমেয়াদী পরিকল্পনা সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
পদক প্রাপ্তদের ক্রেষ্ট ও সম্মাননা প্রদান করা হয়। এরপর আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিঞা মোঃ জয়নাল আবেদিন, সাবেক বন ও পরিবেশ মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি, সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপি নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান,চট্টগ্রাম সমিতি-ঢাকার সাবেক সভাপতি মোঃ আজিজুল হক চৌধুরী,আবু আলম চৌধুরী,রেজাউল হক চৌধুরী মুশতাক, ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি সাবেক সচিব আ ম ম নাছির উদ্দিন, উপদেষ্টা পরিষদের সভাপতি সাবেক সচিব ড. রণজিৎ কুমার বিশ্বাস, সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নুরুল ইসলাম
মেজবানে সমিতির পক্ষ থেকে সাধারণ সম্পাদক মোঃ গিয়াস উদ্দীন খান চট্টগ্রামের মানুষের প্রাণের দাবি হিসেবে দশ দফা দাবি উপস্থাপন করেন। এর মধ্যে রয়েছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম প্রচলিত রেল লাইনকে ইলেকট্রিক ও ম্যাগনেটিক রেল লাইনে রূপান্তর, ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন বিশিষ্ট মহাসড়ক এর কাজ দ্রুত শেষ করা, দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেল লাইন সম্প্রসারণ দ্রুত বাস্তবায়ন, সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর স্থাপন কার্যক্রম ত্বরান্বিত করা, কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক মানের ক্রিকেট স্টেডিয়াম নির্মাণ, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান জেলায় পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে সুনির্দিষ্ট সরকারি কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল নির্মাণ এবং কালুর ঘাটের জরাজীর্ণ রেল সেতু চার লেন বিশিষ্ট করা, চট্টগ্রামে সমুদ্র গবেষণা একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা, প্রস্তাবিত ভারত-বাংলাদেশ-মায়ানমার ও চীনের নতুন সিল্ক রোডে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার হয়ে মিয়ানমারের মংডু দিয়ে চীনের কুনমিং শহর সংযুক্ত করা।
মেজবান অনুষ্ঠানে সমিতির জীবনসদস্যসহ প্রায় পঁচিশ হাজার অতিথি মেজবান ভোজে অংশগ্রহণ করেন। উপস্থিত ছিলেন বিচারপতি হাবিবুল গনি, বিচারপতি বোরহান উদ্দিন জাহেদী, বিচারপতি মাহমুদুল হক, বিচারপতি জেবিএম হাসান, অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলিকুজ্জামান আহমদ, বাংলাদেশের কম্পট্রোলার এন্ড অডিটর জেনারেল মাসুদ আহমেদ, ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন আহমেদ, বাংলা একাডেমির সচিব মোঃ আনোয়ার হোসেন, অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা, অধ্যাপক ড. আহমদ কবির,সাংবাদিক মোঃ জাহাঙ্গীর, অধ্যাপক সফিউল আলম, চট্টগ্রাম সমিতির উপদেষ্টা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, জহুরুল ইসলাম চৌধুরী, মাহবুবুল আলম, সদস্য সচিব মোঃ মোহসীন আলী ও শ্রীমতি কল্যাণী ঘোষ, ড. দীপক কান্তি চৌধুরী, মোহাম্মদ আলী, ব্যাংকার দিলিপ দাশ গুপ্ত, প্রফেসর হান্নানা বেগম, প্রফেসর লুৎফর নাহার নিজাম, অমিতাভ চক্রবর্তী, মোঃ নাজিম উদ্দিন চৌধুরী, এম. হারেস আহমদ, মোহাং সফিউল আজম চৌধুরী, মোহাম্মদ বদিউল আলম, আখতার হামিদ খান, ট্রাস্টি বোডের্র ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ দিদারুল আনোয়ার, ট্রাস্ট সেক্রেটারি এস এম আশরাফুল ইসলাম ও সদস্য মোঃ আবদুল মোবারক, মোঃ আবু সোলায়মান চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার যীশু কুমার বড়য়া প্রমুখ।
এবারের মেজবানে চট্টগ্রামের লেখকদের প্রকাশিত বইয়ের প্রদর্শনী আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে সঙ্গীতানুষ্ঠান উপস্থাপন করেন সমিতির সাংস্কৃতিক সম্পাদক অশোক বড়ুয়া ও নির্বাহী সদস্য সাইফুদ্দিন আহমেদ বাবুল। সঙ্গীত পরিবেশন করেন জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী তপন চৌধুরী, কান্তানন্দি, রবি চৌধুরী, ফকির শাহাবুদ্দিন, সন্দীপন, দিনাত জাহান মুন্নী, রন্টি দাস, রাশেদসহ খ্যাতিমানা শিল্পীরা।
চট্টগ্রাম সমিতির পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে চট্টগ্রামের বহুল প্রচারিত দৈনিক পূর্বদেশ বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে, ইউসিবিএল, ওয়েল গ্রুপ, আমিন মোহাম্মদ গ্রুপ এবং সিটি ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সার্বিক সহযোগিতা করে ।
বাংলাদেশ সময়: ০২২৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০১৫
আরআই