ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

নাগরিকদের জন্য মেয়রের সময় মাসে ৬ ঘণ্টা!

বাংলানিউজ টিম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০১৫
নাগরিকদের জন্য মেয়রের সময় মাসে ৬ ঘণ্টা! ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল, নির্বাচিত হলে নগর ভবন হবে জনগণের সেবাকেন্দ্র। কিন্তু নগর ভবনে সাধারণ নাগরিকদের সাক্ষাতের জন্য মাসে রাখা হয়েছে মাত্র ৬ ঘণ্টা।

এ সময়টুকও পান না সাধারণ নাগরিকরা। আর বাকি সময়ে অফিসের কাজকর্ম ও চ্যালা-চামুণ্ডা, দালালরাই সাক্ষাতের সুযোগ পান মেয়রের।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকনের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল, নগর ভবন দলীয় কার্যালয় হবে না। সাধারণ মানুষের জন্য সব সময় মেয়রের দুয়ার খোলা থাকবে। কিন্তু রোববার (২৯ নভেম্বর) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত দেখা গেল এর উল্টো চিত্র। সপ্তাহে শুধুমাত্র মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত সাধারণ নাগরিকদের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

সাক্ষাৎ ফলকে এসব নিদের্শনা ছিল বলে স্বীকার করে মেয়র সাঈদ খোকন বাংলানিউজকে বলেন, হ্যাঁ, সময় বেধে দেওয়া হয়েছিল। পরে তা সবার জন্য উন্মুক্ত রাখার দাবি করলেও ফলক ও নিদের্শনা এখনো রয়েছে।

নির্বাচন পূর্ব প্রতিশ্রুতি ও বাস্তব অবস্থার মিলে খুঁজতে রোববার (২৯ নভেম্বর) সকাল থেকেই নগর ভবনে ছিল বাংলানিউজ অনুসন্ধানী টিম। মেয়রের অফিসে আসা, অফিস ত্যাগ করা ও দিনের কার্যক্রম দিনব্যাপী পর্যবেক্ষণ করা হয়।

বাংলানিউজ টিমের সদস্যরা ‘সাধারণ নাগরিক’ হিসেবে মেয়রের সঙ্গে সাক্ষাতের কথা বলতেই গেটে দায়িত্বরত এক নিরাপত্তা কর্মী বলেন, ‘দেখছেন না বোর্ডে কি লেখা আছে? আজ রোববার, সাধারণ নাগরিক দেখা করতে পারবেন না’।
 
মেয়র আজ আসবেন কি-না জানতে চাইলে ওই নিরাপত্তাকর্মী বলেন, ‘স্যারের আসা ঠিক নাই। কোনোদিন ১১টায় কোনোদিন ১২টায়, আবার কোনোদিন একবারও আসেন না। তার আসা না আসা তিনিই ভালো বলতে পারবেন, আমরা কিছুই জানি না। তাই এখানে দাঁড়িয়ে থেকে লাভ নেই, দেখা হবে না’।

এরপর মেয়র অফিসের সামনের ফলকে লক্ষ্য করতেই দেখা যায়, ‘ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মহোদয়ের সঙ্গে সাপ্তাহিক সাক্ষাৎকার কর্মসূচি/ সাধারণ নাগরিকসহ অন্যান্য মঙ্গলবার সকাল ১১টা ৩০ মিনিট হতে ১টা পর্যন্ত’।

এ ফলক অনুসারে সাধারণ নাগরিকদের জন্য মেয়রের সময় সপ্তাহে দেড় ঘণ্টা বরাদ্দ রয়েছে। অর্থাৎ মাসে মাত্র ৬ ঘণ্টা সময় নাগরিকদের দেখা করার সুযোগ রয়েছে।  

ফলকের লেখা দেখে অনুমান করতে বাকি রইল না, ‘আমরা সাধারণ মানুষ। আমাদের আজ আর মেয়রের সাক্ষাত জুটবে না’। তারপরেও সামনের ওয়েটিং রুমে ঘণ্টাব্যাপী বসে পর্যবেক্ষণ করে বাংলানিউজ টিম।
 
বেলা ১১টার আগে মেয়র অফিসের সামনে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের প্রস্তুতি ও তড়িঘড়িতে বুঝতে বাকি রইল না যে, মেয়র আসছেন। ১১টার পর পরই নগর ভবনে প্রবেশ করেন মেয়র সাঈদ খোকন। ব্লেজার পরে গাড়ি থেকে নেমেই চলে যান লিফটের কাছে। এ সময় তার দেহরক্ষী (ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মী) আর্মস হাতে দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে উঠে যান। মেয়র অফিসের সামনে থাকা নাগরিকদের সরিয়ে দেন কর্পোরেশনের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।

দক্ষিণ সিটির যেসব নাগরিকদের ভোটে সাঈদ খোকন মেয়র নির্বাচিত হলেন, তাদের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় রাখলেন মাসে মাত্র ৬ ঘণ্টা। সপ্তাহের অন্যান্য দিন রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও সুবিধাভোগীসহ অন্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ দেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

যদিও সিটি নির্বাচনের আগে সাঈদ খোকন একাধিকবার বলেছিলেন, নির্বাচিত হলে নগর ভবনকে  দলীয়মুক্ত রাখা হবে।  

ঘড়ির কাটা যখন বেলা ১২টা, ঠিক সে সময়ই মেয়র অফিসের সামনে দায়িত্বরত নিরাপত্তা কর্মীরা নড়েচড়ে ওঠেন। তখন বোঝা যায়, মেয়রের তার অফিস কক্ষ থেকে বের হওয়ার সময় হয়েছে। বেলা ১২টা ৬ মিনিটেই তিনি অফিস থেকে বের হয়ে যান। এ ১ ঘণ্টা সময়ে মধ্যে মেয়রের সঙ্গে সাধারণ নাগরিকরা দেখা করতে না পারলেও আগে থেকে যোগাযোগ করে আসা বহুজনকেই  তার সঙ্গে সাক্ষাত করতে দেখা যায়।   এ সময় কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল, প্রকৌশলী হাবিবুর রহমানসহ কয়েকজন কাউন্সিলরও সাক্ষাত করেছেন।

এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা তো দিলাম এরকম যে, একটা সময় বেধে দিলে দাফতরিক কাজকর্ম থাকে.... আমাদের কাউন্সিলরদের সঙ্গে টাইম আমরা বেধে দিয়েছিলাম। কিন্তু পরে দেখা গেল, ওই সময়ে প্রচণ্ড চাপ পড়ে। পরে অনেকেই বললেন, এটি সব সময়ের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হোক’।

এরপর সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে বলে দাবি করেন মেয়র।

যদিও এখনো সেই ফলক এবং নির্দেশনা নিরাপত্তাকর্মীরা মেনে চলছেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩০  ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০১৫
এসএম/টিএইচ/এসজেএ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।