ঢাকা: ‘পদ্মায় এখন সবাই পিলার দেখতে চায়। এইসব ক্রেন, পাইপ আর ব্লক দেখে মন ভরে না।
কথাগুলো বলছিলেন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। জানালেন, ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মার বুকে মূলসেতুর পিলার স্থাপনের উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে সূচনা করবেন সেতু নির্মাণের কাজ।
প্রথম পিলার পড়বে পদ্মার মাওয়া তীর থেকে ১ কিলোমিটার দূরে ৭ নম্বর পয়েন্টে। সেখানেও সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হচ্ছে।
সেতু সংশ্লিষ্টরা জানালেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তীর থেকে ফলক উন্মোচন করেই এই নির্মাণকাজের সূচনা করার ঘোষণা দেবেন। আর পরপরই বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী হাইড্রোলিক হ্যামার দিয়ে শুরু হবে সাত নং পিলার পয়েন্টে মাটির নিচে পাইল প্রোথিত করার কাজ।
হাইড্রোলিক হ্যামার সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে এখন পুরোপুরি প্রস্তুত। এর একেকটি চাপের শক্তি দুই হাজার পাঁচ শ’ টনের সমান। হ্যামারটি তৈরি করে আনা হয়েছে সুদূর জার্মানি থেকে। কয়েক মাস সময় নিয়ে এটি বানিয়েছে দেশটির সেরা সেরা প্রকৌশলিরা। এমন হ্যামার বিশ্বের আর কখনোই তৈরি হয়নি।
এই হ্যামারের চাপে পাইলগুলো গেড়ে দেওয়া হবে নদীর তলদেশে অনেক গভীরে। পদ্মার এপারে পাইলগুলো তৈরির কারখানা ঘুরে দেখা গেছে প্রতিদিন ৪ থেকে ৫টি করে দৈত্যাকায় পাইল তৈরি হয়ে নদীতে নামছে। নদীতে ভাসমান থাকলেও উদ্বোধনের পর এগুলোই খাড়া করে গেড়ে দেওয়া হবে তলদেশে। ৩ ডায়ামিটারের একেকটি পাইল লম্বায় বিভিন্ন মাপের।
একেকটি পাইল ১২০ মিটার করে গভীরে প্রোথিত করা হবে। যা প্রায় ৪০ তলা কোনও উঁচু ভবনের সমান। এরপর পাইলগুলোর মধ্যে ঢালা হবে সিমেন্ট-কংক্রিটের মণ্ড যা এক সময় শক্তভিত তৈরি করবে। এভাবে ছয়টি পাইল মিলে হবে পদ্মাসেতুর একেকটি পিলার। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতুতে এমন মোট ৪২টি পিলার বসানো হবে। যার মধ্যে দুই তীরে বসবে দুটি আর বাকি ৪০টি পিলার পড়বে নদীর গভীরে। নদীর মাঝে একেকটি পিলার তৈরি হবে ছয়টি পাইলের সমন্বয়ে। আর তীরের দুটি পিলার বানাতে বসানো হবে ১২টি করে মোট ২৪টি পাইল। এছাড়াও দুই তীরে সংযোগ সড়ক পর্যন্ত টেনে নিতে সেতুতে বসানো হবে আরও ২৪টি পিলার।
পদ্মার গভীরে প্রোথিত হয়ে পানির অংশ ছাড়িয়ে একেকটি পাইল তথা পিলার মাথা উঁচু করতে লেগে যাবে মাসাধিক কাল। তবে হাজার হাজার শ্রমিক একসঙ্গেই চালাতে থাকবে তাদের কাজ। ফলে কাজ দ্রুতই এগুবে বলে জানালেন সংশ্লিষ্টরা।
সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তার বক্তব্যে অনড় রয়েছেন। ২০১৮ সালের মধ্যেই পদ্মায় সেতু স্থাপন সম্পন্ন হবে সে ঘোষণা তিনি বারবারই দিচ্ছেন। তার স্বপ্নে এখন, পদ্মা সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে পূর্ণিমার চাঁদ দেখা। আর বলছেন, সেদিনটি মোটেই দূরে নয়।
১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল সেতু নির্মাণকাজের উদ্বোধন সামনে রেখে গত রোববার পদ্মার দুই পাড়ে সভা করে সংশ্লিষ্টদের সম্পূর্ণ সতর্ক করে দিয়েছেন সেতুমন্ত্রী।
প্রস্তুতির ক্ষেত্রে কোথাও কোনও ত্রুটি রাখতে চান না। তিনিই জানালেন, প্রধানমন্ত্রী ওই দিন সকালে প্রথমেই যাবেন জাজিরা পয়েন্টে। সেখানে তিনি উদ্বোধন করবেন নদীশাসনের কাজ।
মন্ত্রী বলেন, আপনারা জানেন, সেতু নির্মাণের মতোই সমান গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সেতু টিকিয়ে রাখা। আর সে কারণে সমান গুরুত্ব দিয়েই দেখা হচ্ছে নদী শাসনের কাজ। প্রধানমন্ত্রী নদীতে ব্লক ফেলে ওই কাজের উদ্বোধন করবেন। দুই তীরে বিশাল এলাকা জুড়ে চলছে ব্লক তৈরির কাজ। এ কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে দেশের সর্ববৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা সিমেন্ট। নদীর তিরেই সাইলো বসিয়ে চলছে সিমেন্ট প্রস্তুতের কাজ। আর তা থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার ব্লক তৈরি হচ্ছে।
ওপারে ব্লক ফেলে এবারে ফলক উন্মোচন করে একই দিনে দুই প্রধান কাজের উদ্বোধনের পর চলতে থাকবে মূল সেতু নির্মাণের কর্মযজ্ঞ।
বাংলাদেশ সময় ১৭৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১, ২০১৫
এমএমকে
** পদ্মা সেতুর অগ্রগতি ২৭ শতাংশ
** কর্মযজ্ঞের অনুমান করা কঠিন
** পদ্মাপাড়ে থরে থরে ব্লকের টিলা!
** কারখানায় তৈরি হয়ে শত শত পাইল নামছে নদীতে
** মন্ত্রীর চোখে জল!
** ভেতরে সদলবলে
** মন্ত্রীর না!
** মন্ত্রীর মুগ্ধতা
** ১৭৯তম বার পদ্মাপাড়ে মন্ত্রী
** পদ্মাপাড়ে বাংলানিউজ টিম
** কুয়াশার ভোর