ঢাকা: আর নয় সিগন্যালে থেমে থাকা। ট্রাফিক পুলিশের হঠাৎ বাঁশির ফুৎকার থামিয়ে দেয় গতি।
এ পদ্ধতির নাম ‘ইউ-লুপ’।
গাজীপুর থেকে মহাখালী হয়ে হাতিরঝিল সাতরাস্তা পর্যন্ত আসতে যানজটের বড় ঝক্কি পোহান নগরবাসী। মোড়ে মোড়ে সিগন্যালের থাবায় আটকে থাকতে হয়। নষ্ট হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
এ সড়কে যানজট মাড়িয়ে আসতে সময় লাগে আড়াই ঘণ্টা। কিন্তু ‘ইউ-লুপ’ থাকলে সময় লাগবে ঘণ্টা দেড়েক। থাকবে না ট্রাফিক পুলিশের হঠাৎ হাত উচিয়ে বাঁশিতে ‘ফু’… তারপর অজানা সময়ের জন্য থেমে থাকা।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ‘ইউ-লুপ’ স্থপতিদের নিশ্চিত ধারণা, গাজীপুর থেকে হাতিরঝিল সাতরাস্তা পর্যন্ত ২২টি ইউ-লুপ স্থাপিত হলে কমে যাবে ৩০ শতাংশ যানজট।
তাদের পরিকল্পনা মতে, ১ দশমিক ৫ কিলোমটার পর পর বসবে ইউ-লুপ। একটি থেকে আরেকটি ইউ-লুপের দূরত্ব হবে ৮০০ মিটার এবং সর্বোচ্চ দূরত্ব ৩ দশমিক ২ কিলোমিটার।
ইউ-লুপের এ মডেলটি লুফে নিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক। পছন্দ করে ফেলেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও।
তাই আর দেরি নয়। রাজধানীর যানজটের অন্যতম কারণ সিগন্যাল উঠিয়ে দিয়ে গাজীপুর থেকে মহাখালী হয়ে হাতিরঝিল সাতরাস্তা পর্যন্ত ২২টি ইউ-লুপ স্থাপন করছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। এর নকশা করেছেন স্থপতি তানভির নেওয়াজ ও তার সহযোগী হিসেবে আছেন আরেক স্থপতি ড. এস এম সালেহ উদ্দিন।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আনিসুল হক জানিয়েছেন, চাওয়ামাত্রই জমি পাওয়া গেছে। এজন্য আলাদা জমির দরকারও নেই। যেসব জমির দরকার পড়েছে, তার সবই অব্যবহৃত অবস্থায় থাকা সড়ক ও রেল বিভাগের জায়গা। এখন সেগুলো অবৈধভাবে দখল হয়ে আছে। কোথাও ছোট ছোট ঘর-দোকান বসানো আছে। দখলমুক্ত করে তৈরি হবে ইউ-লুপ।
দেখতে কেমন ইউ-লুপ
ইউ-লুপ মানে সিগন্যাল না দিয়ে এবং গাড়ি না থামিয়ে ইংরেজি ইউ অক্ষরের মতো রাস্তা ঘুরিয়ে দিয়ে চলাচল সচল রাখা। ইউ-লুপ হবে দুই ধরনের। একটি ‘এ’ শ্রেণীর ইউ-লুপ আরেকটি ‘বি’ শ্রেণীর ‘ইউ-লুপ’।
‘এ’ ইউ-লুপ দিয়ে ছোট প্রাইভেটকার থেকে বড় বাস- অর্থাৎ সব ধরনের পরিবহন যেতে পারবে। আর বি ইউ-লুপ দিয়ে চলবে শুধু ছোট গাড়ি যেমন প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেল ইত্যাদি।
২২টির মধ্যে ১০টি হবে এ শ্রেণীর আর ১২টি হবে বি শ্রেণীর ইউ-লুপ।
ডিসিসি উত্তর জানায়, ইউ-লুপ বসবে রাজধানীর সাতরাস্তা মোড়ে, সাতরাস্তা থেকে মহাখালীর পথে কোহিনুর কেমিক্যালসের সামনে, মহাখালী বাস টার্মিনালের সামনে, মহাখালী ফ্লাইওভারের নিচে কাঁচাবাজারের সামনে, বনানী চেয়ারম্যান বাড়ি মোড়ে, বনানীর কাকলী মোড়ে, বনানী ফ্লাইওভারের নিচে, কুর্মিটোলা আর্মি গলফ ক্লাবের সামনে, বিমানবন্দর সড়কে কাউলায় ফ্লাইয়িং একাডেমির সামনে, উত্তরা র্যাব-১ কার্যালয়ের সামনে, রাজলক্ষী মোড়ে, হাউজ বিল্ডিং মোড়ে, আব্দুল্লাহপুর মোড়ে, আহসান উল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়ামের সামনে, পিপল সিরামিকসের সামনে, ইউনিভার্সিটির সামনে, মাতসাহা ব্রিজের সামনে, মিল্লাত মাদ্রাসার সামনে, চৌরাস্তা পূর্ব বাইপাস মোড়ে, চৌরাস্তা পশ্চিম বাইপাস মোড়ে, আতপাড়া মোড়ে এবং তেলিপাড়া মোড়ে।
মেয়র আনিসুল হক জানান, সড়ক, রেল এবং সিভিল অ্যাভিয়েশন- এ তিন বিভাগ থেকে ৩৭ দশমিক ০৯ বিঘা জমি পাওয়া মাত্রই কাজ শুরু হয়ে যাবে।
সবচেয়ে বেশি জায়গা প্রয়োজন সড়ক ও জনপথ থেকে। তাদের ৩১ বিঘা, রেলওয়ের ১ দশমিক ৬১ বিঘা এবং সিভিল এভিয়েশনের ১ দশমিক ৮৩ বিঘা জমি লাগবে ইউ-লুপ স্থাপনে।
মাত্র ছয়মাসের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব বলেও মনে করেন আনিসুল হক।
বাংলাদেশ সময়: ১০৪৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০২, ২০১৫
এসএ/এএসআর