ঢাকা: বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন’২০১৪- এর খসড়া থেকে ১৬নং ধারার বিশেষ বিধান বাতিলের মাধ্যমে ১৬ বছরে কন্যাশিশুর বিয়ে দেওয়ার সুযোগ না রাখার দাবি জানিয়েছে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির ৬৮টি সংগঠন। শর্তহীনভাবে কন্যাশিশুর বিয়ের বয়স ১৮ বছর রাখার পক্ষে মত দেন তারা।
বুধবার (০২ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানায় সংগঠনগুলো।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জাতীয় নারী জোটের আহ্বায়ক আফরোজা হক রীনা।
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী সম্পাদক শাহিন আনাম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারী ক্ষমতায়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। অথচ তার সরকার কন্যা শিশুদের বাল্যবিবাহে সম্মতি দিচ্ছে। এটা কীভাবে তা বোধগম্য নয়। এমন আইনে আমরা হতাশ। ১৮ বছরের আগে মেয়েরা সামাজিক, পারিবারিক, মানসিক বা শারীরিক কোনোভাবেই বিয়ের জন্য প্রস্তুত থাকে না।
তিনি বলেন, বেশ কিছুদিন ধরেই আভাস পাচ্ছিলাম, কন্যাশিশুদের বিয়ের বয়স ১৮ বছর থেকে কমিয়ে ১৬ বছর করা হচ্ছে। তখন থেকেই এর বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করি। সরকারের সঙ্গেও এ বিষয়ে অালোচনায় হয়। এ আইন পাস হবে না বলে সেসব বৈঠকে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অামাদের অাশ্বস্ত করেছিলেন। অথচ আইনের খসড়ায় ১৬ বছরে বিয়ের বিধান বহাল রাখা হলো!
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম সরকারের প্রতিনিধিদের প্রতি অাহবান জানিয়ে বলেন, আমরা জানি সংসদে এ বিষয়ে কোনো কথা হবে না। তবে মন্ত্রিপরিষদে এ বিষয়ে কথা বলা যেতে পারে। জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সরকারের এ অাত্মঘাতি সিদ্ধান্তের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলুন। তা না হলে গণতন্ত্র 'পোশাকি ভাষায়' পরিণত হবে।
এ সিদ্ধান্ত দেশের অগ্রগতির চাকাকে পিছিয়ে দেবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, সরকার কি নিজ হাতে দেশকে পিছিয়ে দিতে চায়? সামগ্রিকভাবে দেশ কি পাকিস্তান বা আফগানিস্তানের মতোই হবে, যেখানে নারীরা ১২ বছর বয়সেই বুড়িয়ে যায়।
ব্র্যাকের প্রতিনিধি চিররঞ্জন সরকার বলেন, সরকারের বেশ কিছু মন্ত্রী বলে থাকেন- এই সরকার গণবিরোধী কোনো সিদ্ধান্ত নেয় না। তবে কন্যাশিশুর বিয়ের বয়স নিয়ে কেন এই গণবিরোধী আইন? সরকারের কাছে দাবি, কোনো শর্ত ছাড়াই কন্যাশিশুর বিয়ের বয়স ১৮ বছর নির্ধারণ করা হোক।
কর্মজীবী নারীর নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া রফিক বেবি বলেন, নারী শক্তিকে শ্রম শক্তিতে রুপান্তরিত করতে হলে তাকে শিক্ষা এবং মান দিয়ে কর্মক্ষম করতে হবে। ১৬ বছর বয়সে বিয়ে দিয়ে আমরা নারীকে পঙ্গু করে দিতে পারি না।
দি হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশের প্রোগ্রাম ম্যানেজার দিলীপ কুমার বলেন, নারীদের বিয়ের বয়স ১৬ বছর নির্ধারণ করার সিদ্ধান্তটি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং আত্মঘাতি। যা জাতিগতভাবে আমাদের পঙ্গু করে দিবে। আমরা জাতিগতভাবে পিছিয়ে যেতে চাই না।
তিনি বলেন, আশা করি, সরকার এ আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত থেকে বিরত থাকবে। সরকার এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে না এলে আমরা কঠোর আন্দোলনে যাবো।
সংবাদ সম্মেলনে মহিলা বিষয়ক একটি পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রণালয়ের দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, উইমেন ফর উইমেনের প্রাক্তন সভাপতি সালমা খানম, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নাজরানা ইয়াসমিন হিরা প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০২, ২০১৫
জেপি/এএসআর