ঢাকা: ‘ভিক্ষা নয়, শিক্ষা চাই’ ক্ষুদ্র এই বাক্য বুকে লিখে একাই রাস্তায় নেমে পড়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ইদ্রিস আলী (ইদুল)।
ইদুল এই দাবি জানিয়েছেন তার মতো আরও কয়েক লাখ প্রতিবন্ধীর জীবন যুদ্ধের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য।
প্রতিবন্ধীদের জন্য দয়া-দাক্ষিণ্য নয়, প্রয়োজন শিক্ষার সুযোগ। তাদের সেই সুযোগ নিশ্চিত করলে মেধা পূর্ণমাত্রায় বিকশিত হবে বলে বিশ্বাস করেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (০৩ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক ও জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস উপলক্ষে দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে খালি গায়ে বুকে ওই বাক্য লিখে দাঁড়িয়ে আছেন ইদুল।
তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস উপলক্ষে প্রতিবন্ধীদের শিক্ষার দাবিতে তিনি রাস্তায় নেমেছেন।
এরই মধ্যে চোখে পড়লো তার ডান পায়ের গোড়ালি থেকে অস্বাভাবিক রকমের বাকানো। শারীরিক এই প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন। ক্রিকেটও খেলেন। তাকে শুধু ক্রিকেটার বললে কম বলা হবে। রীতিমত বাংলাদেশ জাতীয় শারীরিক প্রতিবন্ধী ক্রিকেট দলের একজন সদস্য। এতেই শেষ নয়। তিনি ৩০ পারা কোরআনে হাফেজ। উচ্চ মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে পেয়েছেন জিপিএ-৫।
প্রতিনিয়তই আমাদের চারপাশে নানা ধরনের শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সম্পন্ন মানুষ দেখা যায়। আমরা কেউ কেউ হয়তো তাদের দিকে একটু বাঁকা দৃষ্টিতে তাকাই। ভাবটা এমন যে, এদের দিয়ে কিছু হবে না। ঠিক তাদের জন্যই ইদুল এক জীবন্ত উদাহরণ।
আর ঈদুল উদাহরণ হিসেবে টেনেছেন মহাকবি হোমার ও সাম্প্রতিক বিশ্বের খ্যতিমান বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংয়ের নাম।
তিনি বলেন, ‘শুধু প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরাই জানে যে, তাদের সমাজে কতটা বাধা অতিক্রম করে বেঁচে থাকতে হয়। পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত কিংবা সম্পদের বণ্টনের মতো বিষয়ে প্রায়ই বৈষম্যের শিকার হতে হয়। নারী ও শিশু প্রতিবন্ধীদের প্রতিনিয়ত শিকার হতে হয় যৌন নির্যাতনের। ’
১৯৯২ সাল থেকে জাতিসংঘ ৩ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। বাংলাদেশও ১৯৯৮ সাল থেকেই দিনটি জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস হিসেবে পালন করছে।
প্রতিবন্ধীদের কাছে কেবল শিক্ষার আলো পৌঁছালেই তাদের অবস্থার উন্নতি সম্ভব। আর সেই বিশ্বাস থেকেই প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর শিক্ষার অধিকারের দাবিতে রাস্তায় নেমেছেন দৃঢ় এই আত্মপ্রত্যয়ী তরুণ ইদুল।
বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৩, ২০১৫
এইচআর/টিআই