ঢাকা: বাস্তবায়নাধীন কোনো প্রকল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত ঠিকাদাররা আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে অযোগ্য হবেন। এমনকি প্রার্থীর পরিবারের কেউ সম্পৃক্ত থাকলেও সংশ্লিষ্ট প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।
এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দিয়ে বৃহস্পতিবার (০৩ ডিসেম্বর) রাতে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) উপ-সচিব মো. সামসুল আলম।
বৃহস্পতিবার ছিল মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। আগামী ৫ ও ৬ ডিসেম্বর তা যাচাই-বাছাই করবেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা। মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সুবিধার্থেই আইনে উল্লেখিত প্রার্থীদের যোগ্যতা-অযোগ্যতার বিষয়গুলো স্পষ্ট করা হয়েছে ওই চিঠিতে।
এতে বলা হয়েছে-কোনো প্রার্থী ফৌজদারি বা নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্যূন দুই বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে ও সে দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল হলে ও আপিল আদালত নিম্ন আদালতের রায় বা সাজা স্থগিত না করলে সংশ্লিষ্ট প্রার্থী নির্বাচনের অযোগ্য হবেন।
এক্ষেত্রে উচ্চ আদালত আপিল গ্রহণ করলেও তিনি অযোগ্য হবেন বা সংশ্লিষ্ট প্রার্থী জামিন পেলেও অযোগ্য হবেন। অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট সাজা স্থগিত না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনে অযোগ্য হবেন। ওই রকম দণ্ডে মুক্তি পাওয়ার পর পাঁচ বছর অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।
আবার সংশ্লিষ্ট পৌরসভায় বাস্তবায়নাধীন বা চলমান কোনো প্রকল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত ঠিকারদাররা নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর ঠিকাদারি হস্তান্তর করলে বা পাওয়ার অব অ্যাটর্নি পরিবর্তন করলেও সংশ্লিষ্ট পৌরসভার নির্বাচনে অযোগ্য হবেন তিনি।
তবে অনেক আগে কাজ করলেও বর্তমানে করেন না, তেমন ঠিকাদার প্রার্থী হিসেবে যোগ্য।
প্রার্থী এমপিওভুক্ত বেসরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষক হলে নিজের পদে বহাল থেকেই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন। তবে সরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে হবে। ইস্তফার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ইস্তফা গৃহীত হওয়ার সপক্ষে কাগজপত্র দাখিল করতে হবে। অন্যথায় তারা অযোগ্য হবেন।
সরকারি চাকুরেরা ইস্তফা দিলেও সে ইস্তফা গ্রহণ হওয়া সাপেক্ষেই কেবল নির্বাচন করতে পারবেন। এক্ষেত্রে প্রার্থী চাকরি থেকে ইস্তফা দেওয়ার দরখাস্ত জমা দিলেই তা ইস্তফা বলে বিবেচিত হবে না। এদিকে, পেনশনভুক্তরা নির্বাচনের যোগ্য হবেন। এছাড়া সরকারি চাকরি থেকে অব্যাহতি নিলে তিন বছর অপেক্ষা করার প্রয়োজন হবে না। আবার পিআরএল চাকরির অংশ নয়, বিধায় পিআরএল এ থাকার সময় নির্বাচনের অংশ নিতে কোনো বাধা নেই।
পৌরসভার মেয়র, কাউন্সিলরদের স্বপদে থেকে নির্বাচন করতে বাধা নেই বলেও ওই ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে। তবে অন্য কোনো স্থানীয় সরকার পরিষদের সদস্যরা স্বপদে থেকে পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।
অন্যদিকে, কোনো সমবায় সমিতি ও সরকারের মধ্যে চুক্তি থাকলে আর সেই সমিতিতে প্রার্থী বা প্রার্থীর পরিবারের কেউ সম্পৃক্ত থাকলে সংশ্লিষ্ট প্রার্থী নির্বাচনের অযোগ্য হবেন না। তবে পৌরসভার সঙ্গে চুক্তি থাকলে অযোগ্য হবেন। আবার মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী আগে সংশ্লিষ্ট পৌরসভার মেয়র বা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে থাকলে তাকে ১০০ ভোটারের সমর্থনযুক্ত তালিকা প্রদান করতে হবে না।
তবে প্রার্থীর এসব যোগ্যতা-অযোগ্যতার বিষয়ে সময় শেষ হওয়ার পর ব্যাখ্যা দেওয়াটা সমালোচনার চোখেই দেখছেন খোদ ইসি কর্মকর্তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন উপ-সচিব বাংলানিউজকে বলেন, এই ব্যাখ্যাগুলো তফসিল ঘোষণার পরপরই দেওয়া উচিত ছিলো। এতে প্রার্থীরা উপকৃত হতেন। কিন্তু মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় শেষ হয়েছে বৃহস্পতিবার (৩ ডিসেম্বর) বিকেল ৫টায়। এখন আইনের ব্যাখ্যাগুলো রিটার্নিং কর্মকর্তাদের মনোনয়পত্র যাচাই-বাছাই ছাড়া অন্য কোনো কাজে সহায়তা করবে না।
৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ২৩৫টি মেয়র, ৭৪২টি সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদ ও ২৯৬১টি সাধারণ কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন প্রার্থীরা। এক্ষেত্রে মেয়র পদে দলীয়ভাবে ও কাউন্সিলর পদে নির্দলীয়ভাবে ভোট নেবে ইসি।
এ নির্বাচনে প্রায় ৩ হাজার ৫৮২ টি ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা হবে। এতে পুরুষ ভোটার রয়েছে প্রায় ৩৫ লাখ ৮৬ হাজার ৩৫৬ জন ও নারী ভোটারের সংখ্যা ৩৫ লাখ ৭৬ হাজার ৪০। নির্বাচনে ভোটগ্রহণ করবেন ৬১ হাজার ১৪৩ জন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ২৩৪৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৩, ২০১৫
ইইউডি/এসআই
** রেকর্ড সংখ্যক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ হচ্ছে