ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

রাতে ঘুম আসে না মুক্তিযোদ্ধা পরিমলের!

এম. রবিউল ইসলাম রবি, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৫
রাতে ঘুম আসে না মুক্তিযোদ্ধা পরিমলের! মুক্তিযোদ্ধা পরিমল চক্রবর্তী

ঝিনাইদহ: যে হাতে একদিন অস্ত্র ধরে দেশ স্বাধীন করেছিলেন মুক্তিযোদ্ধা পরিমল চক্রবর্তী(৭৬)। অভাবের কারণে জীবন বাঁচাতে সেই হাতে পত্রিকা বিক্রি করছেন।

ছেলের পড়াশোনা, সংসারের যাবতীয় খরচ নির্ভর করে পত্রিকা বিক্রির ওপর!

বয়সের ভারে একেবারে ক্লান্ত মুক্তিযোদ্ধা পরিমল। শরীরে জেঁকে বসেছে রোগবালাই। টাকার অভাবে ওষুধও কিনে খেতে পারেন না তিনি। কারণ ওই টাকা দিয়ে চাল কিনে ঘরে নিতে হয় তাকে!
 
জায়গা জমি-বসতবাড়ি না থাকায় বাস করেন ঝিনাইদহের একটি আবাসন প্রকল্পে।   একমাত্র ছেলে প্রণব চক্রবর্তী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অপেক্ষামান তালিকায় চতুর্থ স্থানে রয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধা কোটায় সেখানে হয়তো টিকে যেতে পারে ছেলেটা।

সেখানে না টিকলেও অন্য কোথাও তো ভর্তি হতে হবে। কিন্তু ছেলেকে ভর্তি করাতে সেই টাকা নেই এই মুক্তিযোদ্ধার। অর্থের কারণে পড়ালেখা বন্ধ হয়ে না যায় ছেলেটার! এসব চিন্তায় রাতে ঘুমাতে পারেন না পরিমল।

পরিমল চক্রবর্তীর জন্ম ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার ফুলহরি গ্রামে।

বাবা মৃত প্রফুল্ল চক্রবর্তীর দুই সন্তানের মধ্যে পরিমল চক্রবর্তী ছোট। অর্থের কারণে পড়ালেখা করতে পারেননি তিনি। ছোট বেলা থেকেই বাবার সঙ্গে পরের ক্ষেতে কাজ করতে হয়েছে।

এক পর্যায়ে দেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে চলে যান মুক্তিযুদ্ধে। যুদ্ধ শেষে ফিরে এসে বিয়ে করেন ঝিনাইদহ সদর উপজেলার করোতিপাড়া গ্রামের চম্পা রাণী চক্রবর্তীকে।

 তাদের ঘরে একমাত্র সন্তান প্রণব চক্রবর্তীর বয়স এখন ১৮ বছর।

পরিমল চক্রবর্তী বাংলানিউজকে জানান, নিজের কোনো বাড়ি ঘর নেই। মাঠে চাষযোগ্য কোনো জমিও নেই। থাকেন ঝিনাইদহ আরাবপুর এলাকার ঝিনুকমালা আবাসন প্রকল্পের ১৮/৬ নম্বর ঘরে।

সেখানে থেকে পত্রিকা বিক্রির কাজ করেন। প্রতিদিন ১০০ থেকে দেড় শত টাকা আয় করতেন। যা দিয়ে সংসার চলছিল তাদের। কিন্তু সম্প্রতি অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় ঠিকমতো ঘুরতে পারেন না। পত্রিকা বিক্রি করতে হলে নানা স্থানে যেতে হয়। যা তার পক্ষে এখন আর কোনো ভাবেই সম্ভব নয়।

এরপরও মাঝে মধ্যে পত্রিকা বিক্রি করতে বের হন। আর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মাসিক ৮ হাজার টাকা ভাতা পান। এই দিয়ে বেঁচে আছেন।

এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার বাংলানিউজকে জানান, তার ছেলের ভর্তি হওয়ার সমস্যা থাকার কথা নয়। তারপরও বিষয়টি তারা দেখবেন।

বাংলাদেশ সময়: ২০০৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৫
পিসি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।