ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

জকিগঞ্জ থেকে হুসাইন আজাদ

জকিগঞ্জবাসীর দুঃখগাঁথা

হুসাইন আজাদ, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৫৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৫
জকিগঞ্জবাসীর দুঃখগাঁথা ছবি: জি এম মজিবুর/ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

জকিগঞ্জ, সিলেট থেকে: দেশজুড়ে আবারও বেজেছে পৌরসভা নির্বাচনের ঢাকঢোল। এই ঢাকঢোল বাজছে সিলেটের সীমান্তবর্তী কুশিয়ারা নদী ঘেঁষা পৌরসভা জকিগঞ্জেও।

প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে পুরো শহরে সাদা-কালো পোস্টার সেঁটে দেওয়ার পর প্রার্থীরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে হাত-গলা মিলিয়ে দোয়া-ভোট চাওয়া শুরু করেছেন ইতোমধ্যে। প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন ‘দিন বদলে দেওয়ার’, ‘অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার’, ‘শান্তি দেওয়ার’।
 
কিন্তু ‘ভরসা’ পাচ্ছেন না স্থানীয় বাসিন্দারা। এই ‘ভরসার অভাববোধ’ তাদের ১৬ বছরের। ১৯৯৯ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম মুক্তাঞ্চল শহরটিকে পৌরসভা ঘোষণা করার পর থেকে। পৌরসভা হলেও এই ১৬ বছরে পৌরভবনও গড়ে ওঠেনি জকিগঞ্জে। যদিও ঘোষণা বছরের সেপ্টেম্বরেই ‘ভিত্তিহীন’ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছিলো।
 
গত দেড় দশকেরও বেশি সময়ে যতো নির্বাচন হয়েছে, প্রতিবারেই প্রার্থীরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জকিগঞ্জের উন্নয়নের কেন্দ্রস্থল হিসেবে পৌরভবন গড়ে তুলবেন বলে। কিন্তু নির্বাচনের পর কোনো প্রতিনিধিই কাজের কাজ করতে পারেননি। এবারের নির্বাচনেও সেই একই প্রতিশ্রুতি, পৌরভবন গড়ে তুলে জকিগঞ্জ পৌরসভার উন্নয়নের আনুষ্ঠানিক যাত্রা করা।
 
স্থানীয় বাসিন্দাদের আক্ষেপ, অনেক দূরের এলাকা বলে জকিগঞ্জ নিয়ে কেন্দ্রীয় প্রশাসনের কারও তেমন মাথাব্যথা নেই। সে কারণে এখানকার উন্নয়নেও কারও আগ্রহ নেই। তাছাড়া, যারা প্রতিনিধি নির্বাচিত হন, পরবর্তী সময়ে তারাও কিছু আদায়ের জায়গা অবধি পৌঁছাতে ব্যর্থ হন। আর এখানকার প্রতিনিধিরা নিজেরা উন্নয়নের জন্য যোগান বা সুবিধাইবা পাবেন কোথায়!
 
প্রায় ৩৫ হাজার মানুষের সাড়ে ছয় বর্গকিলোমিটারের জকিগঞ্জে এবারের পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে লড়ছেন ছয়জন। কাউন্সিলর পদে লড়ছেন ৩১ জন, আর সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে লড়ছেন আটজন।
 
মেয়র পদের প্রার্থীরা হলেন- আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধা খলিলুর রহমান (নৌকা প্রতীক), বিএনপির বদরুল হক বাদল (ধানের শীষ), জাতীয় পার্টির আব্দুল মালেক ফারুক (বর্তমান মেয়র, লাঙল), খেলাফত মজলিসের জাফরুল ইসলাম (দেওয়াল ঘড়ি), আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ফারুক আহমদ (জগ) ও হিফজুর রহমান (মোবাইল ফোন)।
 
নির্বাচনে মূলত নানারকম উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন এই মেয়র প্রার্থীরা। প্রচারণায় ব্যস্ত প্রার্থী খলিলুর রহমানের সঙ্গে মঙ্গলবার (১৫ ডিসেম্বর) বিকেলে আলাপ করলে তিনি বলেন, আমার প্রথম কথা, আমি নির্বাচিত হলে পৌরভবন করবো। তারপর নাগরিক সুবিধা নিশ্চিতের সব ব্যবস্থা করবো। খুচরা ব্যবসায়ীরা যেনো সুন্দরভাবে ব্যবসা করতে পারেন সেই ব্যবস্থা করে দেবো। আর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা যেহেতু ঈমানের অঙ্গ, তাই এই পৌরসভাকে একটি পরিচ্ছন্ন পৌরসভা হিসেবে গড়ে তুলবো।

বর্তমান উপজেলার সব মানুষ তার পক্ষে রয়েছে বলেও দাবি করেন খলিলুর রহমান।
 
একই বিষয়ে আলাপ করলে বদরুল হক বাদল বলেন, আমি নির্বাচিত হলে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। জনগণ তার প্রাপ্য অধিকার পাবে। জনগণের যে অধিকার সেটা আদায় করা আমার কর্তব্য হবে।

পৌরসভা হলেও পৌরভবন নেই বিধায় নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে এ বিষয়টিও সামনে থাকছে বলে জানান বাদল।
 
তবে, আলাপের জন্য বারবার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি আবদুল মালেক ফারুককে।
 
পৌরসভার বাস টার্মিনালের সামনে খলিলুর ও বাদলের সঙ্গে আলাপ শেষে চৌমুহনীর দিকে আসতে চোখে পড়ে স্যুট-বুট পরিহিত পঞ্চান্নোর্ধ্ব একজন বিভিন্ন দিকে লাগানো প্রার্থীদের পোস্টারগুলো দেখতে দেখতে সামনের ডাক বাংলো রোডের দিকে হাঁটছেন। নির্বাচনের কী অবস্থা বলে আলাপ তুলতেই তার কণ্ঠে প্রথম কথা ঝরে, এই দুঃখখান! ভবন নায়, রাস্তা ঠিক নায়, পরিবেশ ঠিক নায়। নির্বাচনে কী অইতো!
 
প্রার্থীরা তো এবার উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, এ কথা বললে তার উত্তর, ১৬ বছর ধরেই দিতাছইন।

ভদ্রলোকের নাম আবদুল হক। পেশায় ডাক্তার। তার সঙ্গে আলাপ শুরু হতেই আরও ক’জন আসেন নির্বাচনী আলাপে।

আবদুল হক বলতে থাকেন, যারা মানুষের সেবা কইরতো, তাদের ভুট দিতো অইবো।

তার কথায় সুর মিলিয়ে বলতে থাকেন এম জি বাবর নামে স্থানীয় এক ব্যবসায়ী, ১৬ বছর কোনো পরিবর্তন হয়নি, এবার আমরা পরিবর্তন চাই। যিনি পৌরসভার এই অস্বাস্থ্যকর অপরিচ্ছন্ন পরিবেশকে বদলে দেবেন, পৌরসভাকে সত্যিকার অর্থে পৌরসভায় রূপ দেবেন। নামকাওয়াস্তে পৌরসভা থাকলে এখানকার মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন কখনওই হবে না।
 
তাদের সঙ্গে আলাপে যুক্ত হন পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মহিবুর রহমান, শিক্ষক আবদুল্লাহ আল মামুনসহ অনেকে। সবাই বোঝাতে থাকেন, জকিগঞ্জ পৌরসভা হয়েছে ঠিক, কিন্তু এর ভাগ্যের কোনো উন্নয়ন হয়নি। দুঃখ নিয়ে ১৬ বছর অতিক্রম করছে পৌরসভাটি। এখন পর্যন্ত পৌরভবন না হওয়াই প্রমাণ করে কতোটা অবহেলিত সীমান্তের এ শহর।
 
তবে, প্রার্থীরা যেমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে আশা ছড়াতে চাইছেন, তেমনি আশার বাণী পেতে চাইছেন ভোটাররাও।

তারা বলছেন, ভোটের দিন এলেই সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ভোট দেবেন নিজের ভাগ্য উন্নয়নে, পৌরসভার ভাগ্য উন্নয়নে।
 
বাংলাদেশ সময়: ০২৫৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৫
এইচএ/এসএস

** ওপারে শীতের চাদর, এপারে নির্বাচনী উত্তাপ
** বছর ধইরা মাঠ ঠিক করছি, এখন সরতাম কিতার লাগি
** লাখ লাখ টেকার ভুট এক হাজারে বেচিয়া কতদিন খাইবা?
** এখানে কুনো ভুটো কারচুপি অইছে না

** ডিজিটাল রেল, সময়ানুবর্তী রেল

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।