ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বিজিবি সদস্যদের আনুগত্য ও বিশ্বস্ততা প্রশ্নাতীত

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৫
বিজিবি সদস্যদের আনুগত্য ও বিশ্বস্ততা প্রশ্নাতীত

ঢাকা: বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) দিবসে পিলখানা গিয়ে নতুন পরিবেশ ও সুশৃঙ্খল আয়োজেন মুগ্ধতা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার (২০) ডিসেম্বর সকালে পিলখানার বীর উত্তম আনোয়ার হোসেন প্যারেড গ্রাউন্ডে অভ্যর্থনা গ্রহণ করে কুচকাওয়াজ উপভোগ করেন।



পরে সীমান্ত ব্যাংকের লোগো নির্বাচন ও উন্মোচন এবং তিনটি হাসপাতালের কার্যক্রমের ফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর প্রধানমন্ত্রী বীর উত্তম খন্দকার ফজলুর রহমান মিলনায়তনে (সাবেক দরবার হল) দরবার (বৈঠক) করেন।

এসময় বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিজিবি’র সদস্য হিসেবে আপনাদের আনুগত্য ও বিশ্বস্ততা প্রশ্নাতীত। কর্মকর্তা ও সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও শ্রদ্ধাবোধ, শৃঙ্খলাবোধ, মানবিকতা ও সর্বোপরি পারস্পরিক সহানুভূতিশীলতাই এই বাহিনীর বন্ধন দৃঢ়তর করবে। পুনর্গঠনের পর বিজিবি সদর দপ্তরে এটা আমার ৩য় দরবার। এখানে এসে নতুন পরিবেশ ও সুশৃঙ্খল আয়োজনে আমি মুগ্ধ।

তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগ বিবেচনায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ একটি গৌরবোজ্জ্বল প্রতিষ্ঠান। ১৭৯৫ সালে রামগড় লোকাল ব্যাটালিয়ন নামে প্রথম গড়ে তোলা হয় এ বাহিনী। সময়ের ব্যবধান ও ভৌগোলিক পরিবর্তনের কারণে নানান নামে দায়িত্ব পালনের পর এখন বিজিবি নামে সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে কাজ করছে।  

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রথম প্রহরেই এ বাহিনীর সদস্যরা পাকিস্তানি সেনাদের প্রতিরোধে নামে। ১৯৭১’র ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে পিলখানা থেকে তৎকালীন ইপিআরের বেতারকর্মীরা বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা ওয়ারলেসের মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে দেয়।

তিনি বলেন, তৎকালীন ইপিআর তা প্রচার করায় পাকিস্তানী বাহিনীর হাতে প্রাণ দেন ইপিআর’র সুবেদার মেজর শওকত আলী। অথচ বলা হয়, কোথাকার এক অখ্যাত মেজর এসে হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতো বাঙালি জাতিকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার ঘোষণায় নাকি গোটা জাতি স্বাধীনতা সংগ্রামে নেমে পড়ে! অবশ্য জন্ম যাদের মিথ্যার উপর,তারা মিথ্যার মধ্যেই থাকবে-এটিই বাস্তবতা।  

এসময় মুক্তিযুদ্ধে এই বাহিনীর শহীদ সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানান প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, গত জাতীয় নির্বাচনের আগে ও পরবর্তীতে রাজনৈতিক সহিংসতা, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও জনসাধারণের জান-মাল রক্ষায় আপনারা দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছেন। একাত্তরের পরাজিত শক্তি ও তাদের দোসরদের পরিকল্পিত টানা অবরোধে গাড়ি ভাঙচুর এবং চলন্ত গাড়িতে পেট্রোল বোমায় জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যাসহ দেশ অচলের ষড়যন্ত্র চালিয়েছিল। আপনারা অক্লান্ত পরিশ্রমে তা বানচালে সক্ষম হন।

‘রোহিঙ্গা সমস্যা, মায়ানমার সীমান্তে উত্তেজনা, রামুর বৌদ্ধ পল্লীর নিরাপত্তা ও পুনর্বাসন, পার্বত্য এলাকায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি, ছিটমহলবাসীকে পুনর্বাসনে আপনাদের পদক্ষেপ বিজিবি’র সুনাম ও মর্যাদাকে বাড়িয়েছে। ’

বিজিবি’র সদস্যদের দক্ষতা বৃদ্ধি, পেশাদারিত্ব তৈরি, জোয়ানদের আবাসনসহ সার্বিক উন্নয়নে বর্তমান সরকারের পদক্ষেপগুলো তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
পদক্ষেপগুলো হলো:

সীমান্তরক্ষী বাহিনীর আমরা বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ আইন-২০১০ পাস। আইন অনুযায়ী বাহিনীর আধুনিকীকরণের কাজ সম্পন্ন।

বিজিবি’র কাঠামোতে জনবলের প্রাধিকার আগের চেয়ে ৮ হাজার ৬শ’ ৬২ জন বাড়ানো হয়েছে। ৪৪ হাজার থেকে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৫২ হাজারে।

সীমান্তে সক্ষমতা বাড়াতে ২০০৯ সাল থেকে বিজিবিতে ২০ হাজারের বেশি লোক নিয়োগ করা হয়েছে।

বিজিবি সর্ব প্রথম ডিজিটাল পদ্ধতি অনুসরণ করে স্বচ্ছতার সঙ্গে লোক ভর্তি কার্যক্রম চালাচ্ছে।

সরকার বিজিবি’র সদস্যদের কোম্পানি পর্যায়ে একটি করে যানবাহনের প্রাধিকার দিয়েছে।

বিজিবি’র অপারেশন জোরদারে ২৬টি ডাবল কেবিন পিকআপ অনুমোদন করেছে।

দ্রুত টহল লক্ষ্যে প্রতিটি বিওপিতে ৪টি মোটরসাইকেলের প্রাধিকার নির্ধারিত হয়। ১ হাজার ৪শ’ মোটর সাইকেল সরবরাহ করেছে।

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে ৯শ’ ৩৫ কিমি এবং বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তে ২শ’ ৮৫ কিঃমি সড়ক প্রকল্প বিবেচনাধীন।

অধিক দূরত্বের বিওপি’র মধ্যবর্তী স্থানে ১শ’ ২৮টি বর্ডার সেন্ট্রি পোস্ট (বিএসপি) নির্মাণ সম্পন্ন। আরও ১শ’ ২৪টি বিএসপি নির্মাণ করা হবে।

বাংলাদেশ-ভারত এবং বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তের পার্বত্য অঞ্চলে ৪৭৯ কিমি সীমান্ত পাহারায় দু’টি সেক্টর, পাঁচটি ব্যাটালিয়ন ও ৯২টি বিওপি স্থাপন চলছে।

বিজিবি’র জন্য প্রথম ভাসমান বিওপি নির্মাণ করে দুর্গম সুন্দরবন রক্ষার ব্যবস্থা।

প্রধানমন্ত্রী পদক্ষেপ ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিয়ে আরও বলেন, আমার সরকার আপনাদের সীমান্ত ভাতা মূল বেতনের শতকরা ৩০ শতাংশ বাড়ায়। আপনারা আগে
৩শ’ ৩৮ টাকা হারে মাসিক সীমান্ত ভাতা পেতেন, যা এখন অনেক বেড়েছে।

আপনাদের বাৎসরিক অর্জিত ছুটি ২ মাস ভোগের আবেদন করেছিলেন যা আমি অনুমোদন দিয়েছি। ছুটিতে যাওয়ার সময় ২ মাসের বেতন-ভাতা অগ্রিম পাচ্ছেন।

আমি বিজিবি’র জুনিয়র কর্মকর্তাদের পদমর্যাদা দ্বিতীয় শ্রেণীতে উন্নীত করেছি। আগে যা ৩য় শ্রেণী ছিল।

আপনাদের পারিবারিক রেশন ৬০ শতাংশ থেকে ১০০ ভাগে উন্নীত করেছি। বিজিবি সদস্যের সন্তানদের ২২ বছরের পরিবর্তে ২৫ বছর বয়স পর্যন্ত রেশন দিচ্ছি। তাদের প্রতিবন্ধী সন্তানদের সম্পূর্ণ চাকরিকাল রেশন দিচ্ছি। আপনাদের সন্তানদের তিন বছর থেকেই পূর্ণ স্কেলে রেশন দেওয়া হচ্ছে।

বিজিবি সদস্যদের জন্য আমি ৪টি ক্যাটাগরিতে পদক প্রবর্তন করেছে। যা আগে ছিল মাত্র দু’টি ক্যাটাগরিতে। একই সঙ্গে মোট পদকের সংখ্যা ৬০টিতে উন্নীত করা হয়। এছাড়াও অন্য ১০ প্রকারের পদক ও রিবনের প্রবর্তন করা হয়েছে।

বিজিবি সদস্যদের জন্য বুলেট প্রুফ জ্যাকেট ও হেলমেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

বিজিবি সদস্যদের  উন্নত কম্বল দিচ্ছি। কমব্যাট ড্রেস ও অফিস ড্রেস ৩ সেটের পরিবর্তে ৪ সেট দেওয়া হচ্ছে। অফিসারদের জন্য ‘সার্ভিস ড্রেস’ প্রবর্তন করা হয়েছে।

দেশব্যাপী ১শ’ ৮০টি বিওপিতে সুপেয় পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। নতুন ৪টি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট দেওয়া হয়েছে। নীলডুমুর ব্যাটালিয়নে পানিবাহী বিশেষ নৌযান সরবরাহ করা হয়েছে।  

আমরা বিদ্যুৎবিহীন ৩শ’ ৩৩টি বিওপিতে সৌর বিদ্যুৎতের ব্যবস্থা করেছি।

অবসরপ্রাপ্ত সদস্য, মুক্তিযোদ্ধা সদস্য এবং তাদের পরিবারও বিজিবি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

দীর্ঘদিন থেমে থাকা বিজিবি সদস্যদের টাইম স্কেল, বেতন সমতাকরণ ও পেনশন পুনরায় দিচ্ছি।

৩৩ হাজার ৮শ’ ৪৫ জন বিজিবি সদস্যের টাইম স্কেল দিয়েছি। অবশিষ্ট সদস্যদের টাইম স্কেল দেওয়া হবে।

বিজিবি সন্তানদের লেখা-পড়ার জন্য বিজিবি ছাত্রাবাস ও ছাত্রীনিবাস নির্মাণ করেছি।

‘সীমান্ত ব্যাংক’ প্রতিষ্ঠার কাজ দ্রুতগতিতে চলছে। আজই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর লেটার অক ইনটেন্ট হস্তান্তর করেছেন।

সীমান্তবর্তী এলাকায় নারী সংক্রান্ত বিষয়ে দেখাশুনা ও নারীর ক্ষমতায়নের জন্য বিজিবি’তে নারী সৈনিক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এ বছর কিজিবি’তে ১শ নারী সদস্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী  আরও বলেন, সীমান্ত রক্ষা, অভ্যন্তরীণ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং প্রাকৃতিক কিংবা সামাজিক যে কোনো দুর্যোগে বিজিবি জাতির আস্থার ঠিকানা। এ
জন্য বিজিবি মহাপরিচালকসহ আপনাদের সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাচ্ছি। আপনারা সবাই দেশপ্রেম, সততা ও শৃঙ্খলার সঙ্গে নিজ দায়িত্ব পালন করবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৫/আপডেট: ১৫৫৪ ঘণ্টা
এমইউএম/এএ
    
** সীমান্ত ব্যাংকের লোগো উন্মোচন করলেন প্রধানমন্ত্রী
** বিজিবি এখন আরও গতিশীল
** পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ গড়ে বিজিবি
** অতীতের থেকে আরো সুগঠিত বাহিনী

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।