ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ফিরে দেখা-২০১৫

শুরুতে উত্তাপ, শেষে স্বস্তি, মাঝে কলঙ্ক মোচন

শাহজাহান মোল্লা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৫
শুরুতে উত্তাপ, শেষে স্বস্তি, মাঝে কলঙ্ক মোচন

ঢাকা: দশম জাতীয় সংসদের আরো একটি বছর শেষ হলো। রাজনৈতিক উত্তাপের মধ্য দিয়ে ২০১৫ সালের ১৯ জানুয়ারি দশম জাতীয় ৫ম অধিবেশন শুরু হয়।

এ অধিবেশন শুরুর আগে থেকে দেশের একটি বিবৃৎ রাজনৈতিক জোট জ্বালাও-পোড়াও করে সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু করে।

তাই অনেকটা অস্বস্তির মধ্যে দিয়েই দশম জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় বছরের পথচলা শুরু হয়, তবে শেষ হয় স্বস্তিতে।
 
কালের গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে ২০১৫ সাল। বিদায়ী বছরে জাতীয় সংসদের চারটি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এ চার অধিবেশনের ৮৫ কার্যদিবসে দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিধান রেখে বিল পাস হওয়াসহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ বিল পাস হয়।

প্রথমবারের মতো বিরোধী দলের দাবির প্রেক্ষিতে একটি বিলও পাস করা হয়।
 
দশম জাতীয় সংসদের চতুর্থ অধিবেশন যে রাজনৈতিক উত্তাপের মধ্যে দিয়ে শুরু হয়, সেই উত্তাপ ছিল প্রায় পুরো বছর জুড়েই। আলোচনায় ছিল বিএনপির ৫ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্রের কালো দিবস’ ঘোষণাকে কেন্দ্র করে। যদিও শেষ পর্যন্ত সকল আন্দোলন সফলতার সঙ্গে মোকাবিলা করে বেশ স্বস্তিতেই সরকার।
 
বিএনপি-জামায়াতের ২০ দলীয় জোট দীর্ঘদিন জ্বালাও-পোড়াও করে কিছু মানুষের জীবন ধ্বংস করা ছাড়া কোনো সুফল আনতে না পারলেও সরকার তাদের বাগে আনতে পেরেছে অনেকটাই। সর্বশেষ দশম জাতীয় সংসদের অষ্টম এবং বিদায়ী বছরের শেষ অধিবেশনে দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিধান পাস করায় নিজেদের অবস্থান বদলে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। এর আগে অবশ্য তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নিলেও ভোটের দিন বর্জন করে বিএনপি।

তাতেও সরকারকে একটুও বেকায়দায় ফেলতে পারেনি, সরকার প্রধানের সঠিক সময়পযোগী সিদ্ধান্তের কারণে- এমন দাবি সংসদ সদস্যদের।
 
দশম জাতীয় সংসদ গঠনের পর থেকেই বিএনপিসহ ২০ দলীয় রাজনৈতিক জোট এ সরকারকে ‘অবৈধ’ বলে আখ্যায়িত করে আসছে। তবে বর্তমান বিরোধী দলকে সত্যিকারের বিরোধী দল মানতে নারাজ সুশীল সমাজসহ অনেকেই।
 
বিদায়ী ২০১৫ সালের চারটি অধিবেশনেই ছিল বিএনপির আন্দোলনকেন্দ্রিক আলোচনা। জ্বালাও-পোড়াও ও পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ হত্যার কারণে সংসদে বিএনপিকে তিরস্কারের পাশাপাশি সন্ত্রাসী দল হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়।
 
বিদায়ী ২০১৫ সাল ছিল সংসদের কলঙ্ক মোচনের বছরও। নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের পাবলিক পার্টি সেন্টারে হজ্জ ও তাবলিগ নিয়ে বিরুপ মন্তব্য করায় সরকারকে বেকায়দায় ফেলেন টাঙ্গাইল-৪ এর সংসদ সদস্য আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী। ধর্মীয় ইস্যুতে বিরুপ মন্তব্য করায় সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মহল থেকে সমালোচনা শুরু হয়। সেই সমালোচনা দীর্ঘস্থায়ী হতে দেননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিসভা থেকে বহিষ্কারের পাশাপাশি দল থেকেও বহিষ্কার করা হয়।
 
এরপর শুরু হয় সংসদ সদস্য পদ থাকা না থাকা নিয়ে বির্তক। একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরার পর তাকে গ্রেফতার নিয়েও দেখা দেয় জটিলতা। তখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয় তাকে গ্রেফতার করতে স্পিকারের অনুমতি লাগবে। কিন্তু আইনি ব্যাখ্যা দিয়ে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী তখন বলেছিলেন, ‘এটা আমার কোনো বিষয় নয়, আমার কোনো অনুমতিও লাগবে না’।

এরপর অবশ্য বিদেশ থেকে ফিরে আত্মসমর্পণ করে গ্রেফতার হন লতিফ সিদ্দিকী। পরে জামিনে মুক্ত হয়ে গত ১ সেপ্টেম্বর হঠাৎ সংসদ অধিবেশনে যোগ দিয়ে নিজেই সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন। ফলে সংসদেরও কলঙ্ক মোচন হয় সেদিন থেকেই।
 
বিদায়ী ২০১৫ সালে আরো একটি কলঙ্ক থেকে মুক্ত হয় সংসদে। দশম জাতীয় সংসদের সদস্য বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য এম এ হান্নান (ময়মনসিংহ-৭) যুদ্ধাপরাধের দায়ে গ্রেফতার হন। এখনো তিনি কারাগারে রয়েছেন।   এর মধ্যে দিয়ে আরো একটি কলঙ্ক মোচন হয় সংসদের।
                                                                                                  
বিদায় নিতে যাওয়া ২০১৫ সালের শেষ দিকেও সংসদে ছিল স্বস্তির বাতাস। শেষ অধিবেশনে স্থানীয় সরকার নির্বাচন সংশোধন বিল পাস করায় রাজনৈতিক অঙ্গণে স্বস্তি ফিরে এসেছে। দীর্ঘদিন পর দুই প্রধান রাজনৈতিক দল মাঠ গরম করছে পৌরসভা নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে।

ফলে ২০১৫ সালের শুরুর সেই অস্বস্তি দূর হয়ে গেছে এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই।
 
বিদায়ী ২০১৫ সালের চারটি অধিবেশনের ছিলো ৮৫ কার্যদিবস। এ ৮৫ কার্যদিবসে ২৯টি বিল পাস হয়। এর মধ্যে বিদায়ী বছরের প্রথম অধিবেশন অর্থাৎ ৫ম অধিবেশনে ৮টি, ৬ষ্ঠ অধিবেশনে ৫টি, সপ্তম অধিবেশনে ৬টি এবং অষ্টম অধিবেশনে ১০টি বিল পাস হয়।  

দশম জাতীয় সংসদের ৫ম এবং বিদায়ী বছরের প্রথম অধিবেশন শুরু হয় ১৯ জানুয়ারি, চলে ২ এপ্রিল পর্যন্ত। শীতকালীন এ অধিবেশনে মোট কার্যদিবস ছিল ৩৯ দিন। এরপর বছরের দ্বিতীয় ও বর্তমান সরকারের দ্বিতীয় বাজেট অধিবেশন শুরু হয় ১ জুন, শেষ হয় ৮ জুলাই। এ অধিবেশন ছিল মোট ২৭ কার্যদিবস।

বছরের সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত অধিবেশন ছিল ২০১৫ সালের তৃতীয় ও দশম সংসদের ৭ম অধিবেশন। গত ১ সেপ্টেম্বর শুরু হয়ে শেষ হয় ৯ সেপ্টেম্বর। মোট ৭ দিনের এ অধিবেশনে বেশ কিছু বিল পাস হয়। সর্বশেষ অষ্টম অধিবেশন ৮ নভেম্বর শুরু হয়ে শেষ হয় ২৩ নভেম্বর। বছরের শেষ এই অধিবেশনে মোট কার্যদিবস ছিল ১২ দিন।
 
বাংলাদেশ সময়: ১১৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৫
এসএম/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।