ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ঢাকা জেলা পরিষদের অর্থ আত্মসাৎ

ডেভিড পলকে বাদ দিয়ে দুদকের মামলার অনুমোদন

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৫
ডেভিড পলকে বাদ দিয়ে দুদকের মামলার অনুমোদন

ঢাকা: ঢাকা জেলা পরিষদের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডেভিড পল খন্দকারকে বাদ দিয়ে অর্থ আত্মসাতের একটি মামলা করতে যাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
 
মঙ্গলবার (২২ ডিসেম্বর) বিকেলে এ মামলার অনুমোদন দেয় কমিশন।

বুধবার দুদক মামলাটি দায়ের করবে।
 
মামলার সুপারিশ করা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, রাজধানীর ডেমরায় অবস্থিত মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হাফিজুর রহমান বিদ্যালয়ের কোনো উন্নয়ন কাজ না করেই ‘মেসার্স জারা কনস্ট্রাকশন’ হাতিয়ে নেয় ১৪ লাখ ৮৫ হাজার ৫৯৫ টাকা।
 
অনুসন্ধানে প্রমাণিত হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির মালিক মো. নাফিস উদ্দিন এবং জেলা পরিষদের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার মামলা অনুমোদন করে দুদক। দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এর উপ-পরিচালক আবু বকর সিদ্দিক বাদী হয়ে বুধবার মামলা করবেন বলেও জানা গেছে।
 
দুদক সূত্র জানায়, এ ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত ছিলেন ডেভিড পল খন্দকার। প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী হওয়ায় ঢাকা জেলা পরিষদের সাবেক কর্তা কিছুতেই দায় এড়াতে পারেন না বলে জানিয়েছেন দুদকের অভিজ্ঞ কর্মকর্তারা। তবে মামলা পরবর্তী তদন্তকালে তাদের চার্জশিটে আসামি করার আইনগত পথ রয়েছে বলে সূত্র জানায়।
 
দুদক সূত্র আরও জানায়,  ঢাকা জেলায় উন্নয়ন প্রকল্পের নামে চলে শত শত কোটি টাকা লুটপাট। স্কুল, মসজিদ, মাদরাসা, মন্দির ও পাঠাগার উন্নয়নের নাম করে ভুয়া বিল-ভাউচার ও ভুয়া একাউন্ট খুলে হাতিয়ে নেয়া হয় এ অর্থ। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব তদন্ত এবং দুদকের অনুসন্ধানেও এর প্রমাণ মেলে। এ প্রেক্ষিতে ইতিপূর্বে ২০টিরও বেশি মামলা করে দুদক। এখনো চলছে ধারাবাহিক এ অনুসন্ধান কার্যক্রম।
 
এ প্রক্রিয়ায় চলতি বছর মার্চে এক প্রতিবেদনে ঢাকা জেলা পরিষদ প্রশাসনের সাবেক প্রধান নির্বাহী ডেভিড পল খন্দকার এবং সহকারী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমানের বিরুদ্ধে পছন্দসই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে ৮৫ কোটি টাকার কার্যাদেশ প্রদানের বিষয়টি উঠে আসে। চলতি বছর ৩১ মার্চ দাখিলকৃত অনুসন্ধান প্রতিবেদনে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের সুপারিশ করা হয়।
 
কমিশন সেটি সরাসরি মঞ্জুর না করে কিছু তথ্য চেয়ে পুন‍ঃঅনুসন্ধানের নির্দেশ দেয়। পুনঃঅনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০১৩ সালের ২১ আগস্ট  দরপত্র বিজ্ঞপ্তি (নং ৩/২০১১-১২)র ৫৫ নম্বর গ্রুপের আওতায় ডেমরাস্থ মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হাফিজুর রহমান বিদ্যালয়ের উন্নয়ন কল্পে মেসার্স জারা কনস্ট্রাকশনকে কার্যাদেশ দেয়। প্রকল্পের ব্যয় ছিল ৩৮ লাখ টাকা। কার্যাদেশে প্রকল্প সম্পন্ন করার তারিখ ছিল ২০১৩ সালের ১৮ নভেম্বর।
 
দরপত্র বিজ্ঞপ্তি  (নং ৭/২০১১-১২)র  গ্রুপ ৬৬ এর আওতায়  ২০১৩ সালের ২৯ মে খিলক্ষেত মধ্যপাড়া (রোড নং-১, নিকুঞ্জ-২) জামে মসজিদ উন্নয়ন প্রকল্পের কার্যাদেশ দেয় ‘মেসার্স প্যারাগন ইন্টারন্যাশনাল’ নামক প্রতিষ্ঠানকে। এটির বরাদ্দ ছিল ২৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা। প্রকল্প সম্পন্নের তারিখ ২০১৩ সালের ৩১ জুলাই। নির্দিষ্ট তারিখে প্রকল্প দুটি শেষ না করা হলেও ঢাকা জেলা প্রশাসন এ দুটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল করেনি। বাজেয়াপ্ত করেনি জামানতও। উপরোন্তু জারা কনস্ট্রাকশন উন্নয়ন প্রকল্পের বিপরীতে অতিরিক্ত আরও ১৪ লাখ ৮৫ হাজার ৫৯৫ টাকা উত্তোলন ও আত্মসাৎ করে। যা দণ্ডবিধির ৪০৯/১০৯ ধারাসহ ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

সূত্রমতে, অনুসন্ধান প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি দণ্ডবিধিতে মামলা দায়েরের সুপারিশ থাকলেও কমিশন সেটি এড়িয়ে যায়। ডেভিড পল খন্দকারের দায়-দায়িত্ব এড়িয়ে মামলা অনুমোদন করে শুধু ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মালিক ও প্রকল্প সংশ্লিষ্ট উপ-সহকারী প্রকৌশলীকে।
 
বাংলাদেশ সময়: ২১২৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৫
এডিএ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।