যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে থেকে: মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক জাসদ সভাপতি কাজী আরেফ আহমেদ ও কুষ্টিয়া জেলা জাসদের ৫ নেতার তিন খুনির ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে।
যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে বৃহস্পতিবার (০৭ জানুয়ারি) রাত ১১ টা ১ মিনিট থেকে ১১ টা ৪৫ মিনিটের মধ্যে এ তিন আসামিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা আসামিরা হলেন- কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর উপজেলার কুর্শা গ্রামের উম্মত মণ্ডলের ছেলে আনোয়ার হোসেন, একই গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে রাশেদুল ইসলাম ঝন্টু এবং একই উপজেলার রাজনগর গ্রামের ইসমাইল হোসেনের ছেলে সাফায়েত হোসেন হাবিব।
কারাগার সূত্র থেকে জানা যায়, এই তিন আসামির মধ্যে আনোয়ার হোসেন ও সাফায়েত হোসেন হাবিবকে রাত ১১ টা ১ মিনিটে এবং রাশেদুল ইসলাম ওরফে ঝন্টুকে রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
পাঁচ জাসদ নেতা হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডাদেশ পাওয়া নয়জনের মধ্যে একজন কারাগারে থাকা অবস্থায় মারা গেছেন। বাকি পাঁচজন পলাতক রয়েছেন।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আসা জল্লাদ তানভীর হাসান রাজু ও হযরত আলী ফাঁসি কার্যকরে সহায়তা করেন।
ফাঁসি কার্যকরের সময় ডিআইজি (প্রিজন) টিপু সুলতান, যশোরের জেলা প্রশাসক ড. হুমায়ুন কবীর, পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান, সিভিল সার্জন শাহাদাৎ হোসেন, যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার শাহজাহান আহমদ, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সোহেল হাসান, যশোরের সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল-ক) ভাস্কর সাহা, কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি শিকদার আককাস আলীসহ পুলিশ ও র্যাবের উর্ধ্বর্তন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
১৯৯৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার কালিদাসপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠের জনসভায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক জাসদ সভাপতি কাজী আরেফ আহমেদ, কুষ্টিয়া জেলা জাসদের তৎকালীন সভাপতি লোকমান হোসেন, সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুব আলী, স্থানীয় জাসদ নেতা ইসরাইল হোসেন ও সমশের মণ্ডল।
এ ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা মামলায় ২০০৪ সালের ৩০ আগস্ট কুষ্টিয়া জেলা জজ আদালত ১০ জনের ফাঁসি ও ১২ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন।
তবে রায়ের সময় ফাঁসির দণ্ডাদেশ পাওয়া ১০ জনের মধ্যে ৬ আসামি ও যাবজ্জীবন দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত ১২ জনই পলাতক ছিলেন। আর গ্রেফতার হয়ে কারাগারে ছিলেন চারজন। ২০০৮ সালে পলাতক থাকা এক ফাঁসির আসামি ও যাবজ্জীবন সাজা পাওয়া ১২ জনকে খালাস দেন হাইকোর্ট। এরপর খালাস পাওয়া সব আসামির সাজা পুনর্বহালের আরজিতে আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করেন রাষ্ট্রপক্ষ।
কারাগারে থাকা চারজনের মধ্যে জেল আপিলের মাধ্যমে খালাসের আবেদন জানান মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া তিন আসামি রাশেদুল ইসলাম, আনোয়ার হোসেন ও ইলিয়াস হোসেন। আপিল বিভাগ তাদেরসহ নয়জনেরই ফাঁসি বহাল রাখেন। পরে রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন জানালে সেখানেও তাদের ফাঁসির দণ্ড বহাল থাকে। পরে কারাগারে মারা যান ইলিয়াস।
রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়েছিলেন ফাঁসির দণ্ড পাওয়া রাশেদুল ও আনোয়ার। তবে তা নাকচ করে দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। ফলে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ফাঁসির রায় কার্যকরের উদ্যোগ গ্রহণ করে।
এ মামলার ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক পাঁচ আসামি হলেন- কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার পচাভিটা গ্রামের মান্নান মোল্লা, মিরপুর উপজেলার কুর্শা মেহেরনগরের রমজান আলীর ছেলে জাহান আলী, বালিয়াশিষা গ্রামের হারেজ উদ্দিনের ছেলে জালাল উদ্দিন, মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের নায়েব মন্ডলের ছেলে রওশন ও কিশোরীনগর গ্রামের মোজাহার উদ্দিনের ছেলে বাকের উদ্দিন।
বাংলাদেশ সময়: ২৩৫৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৭, ২০১৬
ওএইচ/আরএইচএস/পিসি/এএসআর
** চুয়াডাঙ্গায় বোনের বাড়িতে খুনি ঝন্টুর লাশ দাফন
** তিন খুনির দাফন সম্পন্ন
** দণ্ডপ্রাপ্ত আনোয়ার হোসেনের দাফন সম্পন্ন, প্রক্রিয়াধীন হাবিব-ঝন্টুর
** ৩ খুনির ফাঁসি কার্যকর আশান্বিত করেছে, তবে আনন্দিত নই
** মরদেহ নিয়ে দৌলতপুরের পথে অ্যাম্বুলেন্স
** মরদেহ বহনের জন্য অ্যাম্বুলেন্স কারাগারে
** কাজী আরেফের দুই খুনির ফাঁসি কার্যকর
** যশোরে ৩ আসামির ফাঁসির মঞ্চ প্রস্তুত
** শেষ সাক্ষাতে কারাগারে হাবিবের পরিবার