ময়মনসিংহ: মাত্র ১৫ বছর আগেও জালের মতো ছড়িয়ে ছিল কাশর খাল। সেসময় এ খালে ছিল প্রমত্তা পানির প্রবাহ।
দখল-ভরাটে বিলুপ্তির পথে ময়মনসিংহ নগরীর শতবর্ষী এ খাল। এতে করে ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য। নেমে এসেছে চরম পরিবেশ বিপর্যয়। কেবল তা-ই নয়, এ খাল দখল করেই আবার সেখানে শুরু হয়েছে ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ। কারা কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় গণপূর্ত বিভাগের এ সিদ্ধান্তে খালটি পুরোপুরিই হারিয়ে যাবার উপক্রম হয়েছে।
স্থানীয় জনসাধারণের দাবির প্রেক্ষিতে অবশ্য ময়মনসিংহ পৌরসভা কর্তৃপক্ষ এ খাল বাঁচিয়ে রেখে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের জন্য কারা কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানিয়েছে।
ময়মনসিংহ নগরীর কাশর ও গলগন্ডা এলাকার বুক চিরে বয়ে গেছে শতবর্ষের পুরনো কাশর খাল। এ খাল ওই দু’এলাকার মধ্যে দিয়ে গিয়ে পুলিশ লাইন হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে গিয়ে মিশেছে। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষের এক শ্রেণির কর্মচারী খালের জায়গা দখল করে বেশ কিছু টিনশেড বাড়ি নির্মাণ করে সেটিকে প্রায় মরাখালে পরিণত করেছে।
স্থানীয়রা জানায়, শুরুর দিকে এ খালটি ছিল ৩০ ফুট প্রশস্ত। কিন্তু ক্রমশ দখলবাজিতে খালটি সংকুচিত হচ্ছে। দখল-ভরাটের আগে এ খাল দিয়ে স্থানীয় কাশর, গলগন্ডা ও পুলিশ লাইন এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসন হতো। কিন্তু এ খালের জীর্ণদশার কারণে বর্ষা মৌসুমে এসব এলাকায় সৃষ্টি হয় মারাত্মক জলাবদ্ধতা।
বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি) দুপুরে স্থানীয় গলগন্ডা এলাকায় গেলে এ খালের করুণ দশা নিয়ে অভিযোগের ঝাঁপি খুলে বসেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাদেরই একজন মো. হান্নান। একটি ওয়েল্ডিং দোকানের মহাজন তিনি।
স্মৃতি হাতড়ে বলেন, ‘এ খাল দিয়া বাপ-চাচারা উড়ি দিয়া বাইন্দা মাছ মারতো। ১৫ বছর আগেও নিজেও মাছ মারছি। অহন খালের জায়গা দখল কইরা জেলখানার সিপাহীরা ঘরবাড়ি বানাইছে। ’
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে স্থানীয় মনিহারী দোকানি ইবনে মাসুদ কালাম বলেন, ‘স্থানীয় কারা কর্তৃপক্ষ এ খালটি ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত করেছে। তারা নিত্য-নতুন কৌশলে এ খাল দখল করছে। ফলে গত ১০ বছর যাবত এ খালের পানির প্রবাহ তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। ’
সরেজমিনে খালটির বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরে দেখা যায়, গোটা খালজুড়েই ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। কোথাও কোথাও পানির স্রোত একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে। সেখানে গজিয়েছে কচুরিপানা।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, এ প্রাকৃতিক জলাধার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রেখে পানি নিষ্কাশন সহজতর করতে হবে।
মোজাম্মেল হক মুকুল নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, কাশর, গলগন্ডা ও পুলিশ লাইন এলাকার পানি নিষ্কাশনের অন্যতম প্রধান মাধ্যম কাশর খাল। কিন্তু দখলবাজির কারণে দিন দিন এ খাল সরু ও ভরাট হয়ে যাওয়ায় বর্ষা মৌসুমে ভয়ঙ্কর জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। হাঁটু পানিতে চলাচল করতে হয়।
তিনি বলেন, এ খাল দখল করে গত ৩ জানুয়ারি থেকে ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। এর ফলে খালটি পুরোপুরি দখল হয়ে গেলে বর্ষা মৌসুমে স্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে।
এদিকে, খাল দখল করে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের খবরে স্থানীয় জনসাধারণের মাঝে তীব্র ক্ষোভ-অসন্তোষের সৃষ্টি হলে বৃহস্পতিবার দুপুরে এ খাল পরিদর্শনে যান ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটু। তিনি প্রবহমান খালটিকে উন্মুক্ত রেখে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কারা কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেন।
এ প্রসঙ্গে মেয়র টিটু বাংলানিউজকে বলেন, ‘ইতোমধ্যে সরকার জলাশয়কে উন্মুক্ত রাখার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটিকে অনুসরণ করতে সংশ্লিষ্ট কারা কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানিয়েছি। ’
জানতে চাইলে ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার আব্দুল জলিল বাংলানিউজকে বলেন, ‘এ খালের মালিক পাবলিক কিংবা পৌরসভা নয়। এ খাল কেন্দ্রীয় কারাগারের নামে রেকর্ডেড। আমরা যুগের পর যুগ ট্যাক্স পরিশোধ করে যাচ্ছি। ’
তিনি বলেন, ‘খাল দখল করে ভরাট করার কোনো ইচ্ছা আমাদের নেই। মেয়র মহোদয় খালটি উন্মুক্ত রেখে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের অনুরোধ জানিয়েছেন। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো। ’
স্থানীয়দের অভিযোগ, খাল দখল করে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কার্যাদেশ দিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের তোপের মুখে পড়েছেন ময়মনসিংহ গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এ.কে.এম. কামরুজ্জামান। স্থানীয় বাসিন্দাদের বাধার মুখে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পিছু হটতে শুরু করেছেন এ প্রকৌশলী।
এ বিষয়ে গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এ.কে.এম.কামরুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘কারাগারের সীমানা নকশা অনুযায়ীই কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। অনিবার্যকারণবশত নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। ’
বাংলাদেশ সময়: ০০৫৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৯, ২০১৬
এইচএ