ঢাকা: বেসিক ব্যাংকের সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় করা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধান প্রতিবেদন সাতদিনের মধ্যে দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এছাড়া ব্যাংকটিকে নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের যতো ধরনের প্রতিবেদন রয়েছে, সেগুলো দাখিল করতে বলা হয়েছে চার সপ্তাহের মধ্যে।
শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু চেয়ারম্যান থাকাকালে ঋণ বিষয়ক সিদ্ধান্তসহ পরিচালনা পর্ষদের ৩১০ থেকে ৩২১তম পর্যন্ত সব সভার কার্যবিবরণীগুলোও জমা দিতে বলেছেন হাইকোর্ট।
এ বিষয়ে জারি করা এক রুলের শুনানিতে বিচারপতি মো. রুহুল কদ্দুস ও বিচারপতি মাহমুদুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার (০৯ ফেব্রুয়ারি) এসব আদেশ দেন।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট রেজা-ই খান পান্না। সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার মুনতাসীর উদ্দিন আহমেদ।
দুদকের পক্ষে ছিলেন শফিকুল ইসলাম। এছাড়া আদালতের আহবানে বক্তব্য রাখেন দুকের অপর আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।
পরে জেড আই খান পান্না বাংলানিউজকে বলেন, এ দেশে একটি রুটি চুরি করলেও তাকে শাস্তি পেতে হয়। কিন্তু কোটি টাকা চুরি করে দায়মুক্তি পেয়ে যাবেন, তা তো হতে পারে না। আদালত সব শুনে দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদন, বেসিক ব্যাংকের ঋণ অনুমোদন সংক্রান্ত ৩১০ নম্বর থেকে ৩২১ নম্বর বোর্ড মিটিং এর সিদ্ধান্ত এবং বেসিক ব্যাংক নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রতিবেদন তলব করেছেন।
বেসিক ব্যাংকের প্রায় চার হাজার কোটি টাকা ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বাচ্চুকে বাদ দিয়ে বিভিন্ন সময়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির ৫৮টি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
এরপর শেখ আব্দুল হাই বাচ্চুকে বোর্ড সভার সদস্যদের মামলায় অর্ন্তভুক্ত করার নির্দেশনা চেয়ে গত বছরের ১২ নভেম্বর নোয়াখালীর হারুন-অর রশিদ জনস্বার্থে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন।
রিট আবেদনে বলা হয়, ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চুর নাম ব্যাপকভাবে উচ্চারিত হলেও কোনো মামলায় তাকে আসামি করা হয়নি। অথচ বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদনে অর্থ আত্মসাতের জন্য শেখ আবদুল হাই দায়ী- এ কথা বলা হয়েছে।
এ রিট আবেদনের শুনানি শেষে গত বছরের ১৭ নভেম্বর শেখ আব্দুল হাই বাচ্চুকে বোর্ড সভার সদস্যদের মামলায় অর্ন্তভুক্ত করতে দুদক চেয়ারম্যানকে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন বিচারপতি মো. রুহুল কদ্দুস ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর হাইকোর্ট বেঞ্চ। দুদকের চেয়ারম্যান, অর্থ মন্ত্রণারয়ের সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর ও বেসিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে আবদুল হাই বাচ্চু বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান থাকার সময় চার বছর তিন মাসে ব্যাংকটি ৬ হাজার ৬৭৩ কোটি টাকা ঋণ দেয়, যার প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকাই নিয়ম ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকটির গুলশান, শান্তিনগর ও দিলকুশা শাখার মাধ্যমে গুরুতর ঋণ অনিয়ম সরেজমিনে উদ্ঘাটন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শক দল।
তবে বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ও এর তৎকালীন চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চুর কোনো ধরনের অনিয়ম খুঁজে পায়নি দুদক। তাকে এবং পরিচালনা পর্ষদকে বাদ দিয়েই গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ৫৬টি মামলা করে দুদক।
আইনজীবী মুনতাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, দুদক ছাড়া রুল জারিতে আর কেউ সাড়া দেয়নি।
** বেসিক ব্যাংকের তিন কর্মকর্তার রিমান্ড শুনানি শেষ, আদেশ দুপুরে
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০১৬
ইএস/এএসআর