ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

রিভিউ বিষয়ে সাক্ষাত

কাশিমপুর কারাগারে যাচ্ছেন সাঈদীর আইনজীবীরা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০১৬
কাশিমপুর কারাগারে যাচ্ছেন সাঈদীর আইনজীবীরা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী

ঢাকা: রাষ্ট্রপক্ষের পরে আপিল মামলার রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন জানাবেন মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীও। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায়ের বিরুদ্ধে এ রিভিউ আবেদনে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি ও খালাসের আরজি জানানো হবে।



রিভিউয়ের বিষয়ে দিক-নির্দেশনা নিতে তার সঙ্গে সাক্ষাত করতে কাশিমপুর কারাগারে (ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার, পার্ট-১) যাচ্ছেন সাঈদীর চার আইনজীবী। বুধবার (১৩ জানুয়ারি) বেলা ১২টার দিকে ঢাকা থেকে কাশিমপুর কারাগারের উদ্দেশে রওনা হন চার আইনজীবী অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট সাইফুর রহমান, অ্যাডভোকেট ইউসুফ আলী ও অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ।

আইনজীবীরা রিভিউ আবেদন তৈরি করতে সাঈদীর কাছ থেকে দিক-নির্দেশনা নেবেন বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন তার ছেলে মাসুদ সাঈদী।  

গত ৩১ ডিসেম্বর সাঈদীর আপিল মামলার ৬১৪ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় দেন সাবেক প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ। অন্য ৪ বিচারপতি হচ্ছেন, বর্তমান প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী।
 
আইন অনুসারে ওইদিন থেকে ১৫ দিনের (১৪ জানুয়ারি) মধ্যে রিভিউ আবেদনের সুযোগ রয়েছে। তবে মাসুদ সাঈদী বলেছেন, তারা পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি পেয়েছেন ৩ জানুয়ারি। সে হিসেবে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় পাবেন।  

মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) দুপুরে সাঈদীকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া ফাঁসির দণ্ডাদেশ পুনর্বহালের আরজিতে চূড়ান্ত রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষ। রাষ্ট্রপক্ষের অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড সৈয়দ মাহবুবুর রহমান এ রিভিউ আবেদন জানান (নং: ০৩/২০১৬)।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জানান, ৩০ পৃষ্ঠার মূল আবেদনসহ ৬৫৩ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদনে ফাঁসি পুনর্বহালে ৫টি যুক্তি দেওয়া হয়েছে।

গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর সংক্ষিপ্তাকারে সাঈদীর আপিল মামলার চূড়ান্ত এ রায় দেন আপিল বিভাগ।   আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর মৃত্যুদণ্ডাদেশের সাজা কমিয়ে তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।
 
সে সময়কার প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের আপিল বিভাগ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে এ রায় দেন। বিচারপতিদের মধ্যে মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা সব অভিযোগ থেকে সাঈদীকে খালাস দেন। আর বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী আসামির মৃত্যুদণ্ডের পক্ষে রায় দেন। তবে প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন, বিচারপতি এস কে সিনহা ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর মতামতে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে আমৃত্যু কারাদণ্ডের রায় আসে।

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।

ট্রাইব্যুনালের এ রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরের ২৮ মার্চ সাঈদী ও সরকারপক্ষ পৃথক দু’টি আপিল (আপিল নম্বর: ৩৯ ও ৪০) দাখিল করেন। ট্রাইব্যুনালের রায়ে সাজা ঘোষিত না হওয়া ৬টি অভিযোগে শাস্তির আর্জি জানিয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আর সাঈদীর ফাঁসির আদেশ থেকে খালাস চেয়ে আসামিপক্ষ আপিল করেন।

২০১৩ সালের ১৬ এপ্রিল আপিল মামলাটির শুনানি শেষ হওয়ায় রায় ঘোষণা অপেক্ষমান (সিএভি) রাখেন আপিল বিভাগ। এর পাঁচ মাসের মাথায় সংক্ষিপ্ত রায়টি দেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। আর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলো এরও এক বছর সাড়ে তিনমাস মাস পর।

সাঈদীর বিরুদ্ধে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিন হাজারেরও বেশি নিরস্ত্র ব্যক্তিকে হত্যা বা হত্যায় সহযোগিতা, নয়জনেরও বেশি নারীকে ধর্ষণ, বিভিন্ন বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাট, ভাঙচুর এবং ১শ’ থেকে ১শ’৫০ জন হিন্দু ধর্মাবলম্বীকে জোরপূর্বক ধর্মান্তরে বাধ্য করার মত ২০টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছিলো ট্রাইব্যুনালে।

এর মধ্যে ট্রাইব্যুনালের রায়ে সাঈদীর বিরুদ্ধে গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণের আটটি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়। এর মধ্যে দু’টি অপরাধে অর্থাৎ ৮ ও ১০নং অভিযোগে ইব্রাহিম কুট্টি ও বিসাবালীকে হত্যা এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি ঘরে আগুন দেওয়ার দায়ে সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। প্রমাণিত অন্য ৬টি অর্থাৎ ৬, ৭, ১১, ১৪, ১৬ ও ১৯নং অভিযোগে আলাদাভাবে কোনো সাজা দেননি ট্রাইব্যুনাল।

আর সর্বোচ্চ আদালতের চূড়ান্ত রায়ে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে ৫টি অভিযোগ। এর মধ্যে ২টিতে অর্থাৎ ১৬ ও ১৯ নম্বর অভিযোগে হত্যা, নিপীড়ন, অপহরণ, নির্যাতন, ধর্ষণ ও ধর্মান্তরে বাধ্য করায় আমৃত্যু এবং একটিতে অর্থাৎ ১০ নম্বর অভিযোগে হত্যা, নিপীড়ন, অপহরণ, নির্যাতন, ধর্ষণ, ধর্মান্তরে বাধ্য করা ও এ ধরনের অপরাধে সহযোগিতার মতো অপরাধে যাবজ্জীবন পেয়েছেন সাঈদী। একটিতে অর্থাৎ ৮ নম্বর অভিযোগে হত্যা, অপহরণ ও নির্যাতনের অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল সাঈদীকে ফাঁসির রায় দিলেও আপিল বিভাগ অভিযোগের একাংশের জন্য সাঈদীকে ১২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং অন্য অংশের জন্য খালাস দিয়েছেন। একটিতে অর্থাৎ ৭ নম্বর অভিযোগে অপহরণ, নির্যাতন ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সহযোগিতার জন্য ১০ বছর কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে সাঈদীকে।

এছাড়া ট্রাইব্যুনালে প্রমাণিত ৬, ১১ ও ১৪ নম্বর অভিযোগ আপিল বিভাগের রায়ে প্রমাণিত না হওয়ায় এসব অভিযোগ থেকে খালাস পেয়েছেন তিনি।

বাকি ১২টি অর্থাৎ ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৯, ১২, ১৩, ১৫, ১৭, ১৮ ও ২০ নম্বর অভিযোগে প্রমাণিত না হওয়ায় ট্রাইব্যুনালের রায়ে এসব অভিযোগ থেকে খালাস পান সাঈদী। রাষ্ট্রপক্ষ এসব অভিযোগে আপিল বিভাগের কাছে সংবিধানের ১০৪ অনুচ্ছেদ অনুসারে ‘ন্যায়বিচার’ প্রার্থনা করেছিলেন। আপিলের রায়ে ট্রাইব্যুনালের এ খালাসের রায় বহাল রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১২০৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৫
ইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।