ঢাকা: বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ ও হাওয়া ভবনের কর্মচারী শামসুজ্জোহা ফরহাদ ও তার স্ত্রীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের এক চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরগুলোতে চিঠি পাঠিয়ে ফরহাদ এবং তার স্ত্রী রোজিনা জোহার পাসপোর্ট নম্বর জানিয়ে দিয়েছে পুলিশের বিশেষ শাখা।
বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) দুদকের দায়িত্বশীল সূত্র এসব তথ্য বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছে।
অভিযোগের বরাত দিয়ে দুদকের পদস্থ কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, তারেকের ঘনিষ্ঠ ও হাওয়া ভবনের কর্মচারী ফরহাদই তারেক রহমানের অর্থদাতা। তারেকই তার নামে বিপুল পরিমান অর্থ-সম্পদ গড়েছেন। ফরহাদ দেশ থেকে হুন্ডির মাধ্যমে তারেকের কাছে অর্থ পাঠাচ্ছেন বলে দুদকের কাছে অভিযোগ রয়েছে।
জানা যায়, দুদকের উপ-পরিচালক হারুনুর রশীদকে এ অভিযোগ অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দুদকের এ কর্মকর্তা এর আগে খালেদা জিয়া ও তারেকের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করেছেন। বর্তমানে এ অভিযোগটিও তিনি অনুসন্ধান করছেন।
অনুসন্ধান সূত্র বাংলানিউজকে জানায়, গত রোববার দুদকের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে পুলিশের বিশেষ শাখার অতিরিক্ত মহাপরিদর্শকের (বিশেষ) কাছে চিঠি পাঠায় দুদক।
দুদকে আসা অভিযোগে বলা হয়েছে, রংপুরের শামসুজ্জোহা ফরহাদ বিএনপি সরকারের সময় হাওয়া ভবনের কর্মচারী ছিলেন। ড্যান্ডি ডাইংয়ে কাজ করার সুবাদে তারেক রহমানের সংস্পর্শে আসেন তিনি। এরপর থেকে তাকে আর পিছু তাকাতে হয়নি। হাওয়া ভবনের কর্মচারী ও তারেক রহমানের সংস্পর্শে এসে রাতারাতি বাড়ি-গাড়ি, ব্যাংক-ব্যালেন্স, এফডিআরসহ নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হন ফরহাদ। বর্তমানে তিনি মিরপুর রূপনগরের ছয়তলাবিশিষ্ট নিজস্ব বাসায় থাকেন।
দুদকে পেশ হওয়া অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, হাওয়া ভবনের ওই কর্মচারী তারেক রহমানের টাকায় কোটিপতি হয়েছেন। শামসুজ্জোহার সব অর্থই মূলত তারেক রহমানের দেওয়া। বর্তমানে শামসুজ্জোহার উপার্জন থেকে পাওয়া অর্থ দিয়েই তারেক রহমান লন্ডনে বিলাসবহুল জীবনযাপন করছেন। এ জন্য দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার করা হচ্ছে।
দুদক সূত্র আরও জানায়, অভিযোগ অনুসন্ধানে দেশে ও বিদেশে তারেক রহমানের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে হিসাব আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হবে। এছাড়া বিভিন্ন ব্যাংকে চিহ্নিত কিছু ব্যক্তির ব্যাংক হিসাবেরও তথ্য নেবে দুদক। বর্তমানে জ্ঞাত কোনো আয় না থাকলেও লন্ডনে বিলাসবহুল জীবনযাপন করছেন তারেক রহমান। বিএনপি নেতৃত্বাধীন দুই সরকারের আমলে তারেক রহমান নামে-বেনামে বিপুল সম্পদ অর্জন করেন। তার ওই সম্পদের কিছু অংশ শামসুজ্জোহাকে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০১০ সালের ৬ জুলাই বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার ব্যবসায়িক অংশীদার গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচার মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করে দুদক। ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর রায়ে তারেককে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়। মামুনকে অর্থদণ্ডসহ সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
তারেক রহমানের খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে দুদক। ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি হাইকোর্টের একটি বেঞ্জ তারেক রহমানের ওই খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানির জন্য ১৪ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেন।
তারেক রহমানকে অর্থ পাচার মামলা থেকে খালাস দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ এর বিচারক মোতাহার হোসেন।
২০১৩ সালের ডিসেম্বরে তিনি অবসরে যান। ২০১৪ সালে অবসরপ্রাপ্ত ওই বিচারকের সম্পদ অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। যা এখনো চলছে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১৬
এডিএ/বিএস