ঢাকা: সম্প্রতি মাদক ব্যবসায়ীরা তাদের নিরাপদ রুট মনে করছেন জলপথকে। সড়ক পথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঘন ঘন চেকপোস্ট থাকায় তারা মাদক চোরাচালানের রুট হিসেবে জলপথকে বেশি পছন্দ করছেন।
রুট হিসেবে জলপথকে নিরাপদ মনে করার প্রবণতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে মনে করেন মাদক প্রতিরোধ সংশ্লিষ্টরা।
বিশেষ করে টেকনাফ, সেন্টমার্টিন এবং মহেশখালী সংলগ্ন জলপথ বেছে নিচ্ছে মাদক ব্যবসায়ীরা। মাদক প্রতিরোধ সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, তারা ওই সব জলপথে সব সময়ই মাদক চোরাচালানে জড়িতদের ধরতে তৎপর থাকেন।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অপারেশন বিভাগের পরিচালক সৈয়দ তৈফিক উদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, মাদক চোরাচালানকারীরা সাধারণত জলপথকে তাদের নিরাপদ রুট মনে করেন। তবে যারা জলপথে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন তারা এ ব্যাপারে তৎপর রয়েছেন।
বড় ধরনের মাদকের চোরাচালান জলপথে আসছে বলে মনে করেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের এই উর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
বিভিন্ন রুট দিয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশে প্রবেশ করা মাদেকের উল্লেখযোগ্য দ্রব্য হলো ইয়াবা। এই ইয়াবার সিংহভাগ চোরাচালান মায়ানমার থেকে সমুদ্রপথ দিয়ে টেকনাফ হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে।
মাদক প্রতিরোধের ক্ষেত্রে অধিকাংশ অভিযান চালানো হয় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে। গোয়েন্দা তথ্য ছাড়া সাধারণ তল্লাশি কম হওয়ার ফলে অনেক মাদক চোরাচালান নীরবে-নিরাপদে ঢুকে পড়ছে।
সমুদ্রের অভিভাবক বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড গোয়েন্দা বিভাগের উপ-পরিচালক কমান্ডার এ কে এম মারুফ হাসান বাংলানিউজকে বলেন, আমরা সমুদ্রপথের উপকূলীয় অঞ্চলে দায়িত্ব পালন করে থাকি। সমুদ্রপথে মাদক চোরাচালানের অন্যতম একটি রুট হলো ‘টেকনাফ’। এই পথে অধিকাংশ মাদক চোরাচালানকারীরা অস্ত্র নিয়ে মাদকবহন করে। এমন পরিস্থিতিতে ঝুঁকি নিয়েই আমরা তাদের বিরুদ্ধে অপারেশন চালাই। কখনও কখনও তাদের সঙ্গে গোলাগুলিও হয়।
পরিসংখ্যান উল্লেখ করে কোস্ট গার্ডের এই কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, ২০১৫ সালে ১৩ লাখ ৪৬ হাজার ৩শ’ ৩৭ পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়েছে সমুদ্র পথে চোরাচালানের সময়। এছাড়াও রয়েছে- ২৮ হাজার ৭শ’ ২৯ বোতল বিয়ার এবং মদ। ২৫ কেজি ৮শ’ ৭০ গ্রাম হেরোইন এবং গাঁজা। জব্দ করা ওইসব মাদকের মূল্য আনুমানিক ৬৮ কোটি ৩৬ হাজার ২শ’ ৮০ টাকা। ২০১৫ সালের মাদকবিরোধী অপারেশনে ৩৪ জনকে আটক করে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।
কোস্ট গার্ডের অপারেশন বিভাগের উপ-পরিচালক কমান্ডার ক্বামীল আলম বাংলানিউজকে বলেন, চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত সমুদ্রপথে ১ লাখ ১৩ হাজার ৩শ’ ৭০ পিস ইয়াবা, ১ হাজার ৮শ’ ৩৪ বোতল বিয়ার-মদ এবং ৬শ’ গ্রাম হোরোইন ও গাঁজা জব্দ করা হয়েছে। ২৭ দিনে জব্দ করা মাদকের মূল্য ৬ কোটি ৯৫ লাখ ৭০ হাজার ৫শ’ টাকা। অভিযানে তিন মাদক চোরাচালানকারী আটক হয়েছেন। পরে তাদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামীতে আরও কঠোর হবে কোস্ট গার্ড। এতে করে কমে আসবে মাদক চোরাচালানও। আর সার্বিকভাবে ‘জলপথ’ মাদকের নিরাপদ রুট- এমন অভিযোগ কেটে যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ০২০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০১৬
এনএইচএফ/আইএ