কেলেঙ্কারি যেনো ছাড়ছেই না নেসলেকে! খাদ্য উৎপাদক হিসেবে বিশ্বব্যাপী নাম ছড়ালেও এখন একের পর এক নয়া নয়া কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়ছে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক কোম্পানিটি।
গেলো বছরের শেষভাগে ভারতে নেসলের ম্যাগি নুডলসে সীসা ধরা পড়ার পর শিশুদের স্বাস্থ্যহানির বড় ঝুঁকিতে পড়ে দেশটি।
তবে এবার শিশুখাদ্য নয়, নেসলে জড়িয়েছে শিশুশ্রম বিতর্কে। বলা হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই তৈরিখাদ্য উৎপাদক জবরদস্তিমূলক শিশুশ্রমের মাধ্যমে কোকোয়া উৎপাদন করিয়ে আনছে আইভরিকোস্ট থেকে। শিশুদের উৎপাদিত চকোলেটই নেসলে তুলে দিচ্ছে বিশ্বের শিশুদের হাতে। আর মুনাফা কুড়াচ্ছে। এ নিয়ে ঝক্কি কম হচ্ছে না। নেসলে সাউথ আফ্রিকাকে এ নিয়ে আদালতে বিচারের মুখোমুখি হতে হয়েছে। আর সেই মামলাটি তারা হেরেছে।
আদালত নিশ্চিত করেই জেনেছে, কোকোয়া উৎপাদনে শিশুশ্রম ব্যবহার করছে নেসলে। যুক্তরাষ্ট্রের হাইকোর্ট এ নিয়ে আদেশ দেওয়ার পর সুপ্রিমকোর্টের দারস্থ হয় নেসলে। সেখানেও তাদের আরজি খারিজ হয়ে যায়।
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, নেসলেসহ আরও দুটি কোম্পানি আইভরিকোস্ট থেকে কোকোয়া কিনে মানবাধিকারের লঙ্ঘন ঘটিয়েছে। নেসলে ভালো করেই জানতো সেখানে শিশু শ্রমদাসদের দিয়ে এই কোকোয়া উৎপাদন করা হচ্ছে, আর তা জানা সত্ত্বেও শ্রেফ সস্তায় পণ্য পাওয়া যাবে বলে সেখানকার অসাধু খামারিদের অর্থসহায়তা দিয়ে এই কাজে উৎসাহিত করেছে।
আন্তর্জাতিক শ্রম অধিকার ফোরাম’র প্রচার বিষয়ক পরিচালক অ্যাবি ম্যাকগিল এই মামলাটি দায়ের করেন। তিনি বলেন, দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা সাপ্লাই চেইনে জবাবদিহিতা আনার চেষ্টা করছি। কিন্তু নেসলে তাতে বাধ সাধলো।
যুক্তরাষ্ট্রে গতবছরের জুনে প্রকাশিত একটি রিপোর্ট মতে, আইভরি কোস্ট ও ঘানায় ২১ লাখেরও বেশি শিশুশ্রম নিযুক্ত রয়েছে কোকোয়া উৎপাদনে। ঠিক এক বছর আগেও যার সংখ্যা ছিলো ১০ লাখ। এই শিশুরা দিনে মাত্র ৪০ সেন্ট মজুরিতে কাজ করে।
এছাড়াও গত ৩০ বছর ধরে নেসলের কাণ্ডে বিরক্ত স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এর অন্যতম হচ্ছে শিশুদের জন্য মাতৃদুগ্ধের পক্ষে প্রচারকে উপেক্ষা করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে নেসলে বোতলজাত দুধ বিক্রি করে চলেছে। আর এ কারণে নেসলের ওপর আদালতের এই সিদ্ধান্তে অনেকেই বেশ খুশি।
বাংলাদেশেও নেসলের এই চকোলেট পণ্য ব্যাপকহারে বিক্রি হয়। শ্রম অধিকার কর্মীরা বলছেন, নেসলে একটি চকোলেট খাওয়া মানেই হচ্ছে জবরদস্তিমূলক শিশুশ্রমকে উৎসাহিত করে যাওয়া। এটা বন্ধ করতে হবে।
শিশুস্বাস্থ্য, শিশুঅধিকার কোনওটির প্রতিই নেই নেসলের সামান্য নজর। কেবল মুনাফাই এর মূল উদ্দেশ্য।
এছাড়া নেসলের ম্যাগি নুডলসে সীসা থাকার বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশে এখনো ধোয়াশা থেকে গেছে।
বাংলাদেশ সময় ১৭২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০১৬
এমএমকে