ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সোমবার রাতে দফায় দফায় মাদ্রাসা ছাত্র-ব্যবসায়ী-পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় মাসুদুর রহমান (২০) নামে এক ছাত্র নিহতের জেরে মঙ্গলবার রেলস্টেশনে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের কারণে প্রায় আড়াই কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন রেলওয়ের কর্মকর্তারা। যা কাটিয়ে উঠতে দীর্ঘদিন লাগবে বলেও জানান তারা।
ঘটনার পরদিন বুধবার (১৩ জানুয়ারি) রেলওয়ের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) মুরাদ হোসেন, প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা সরদার শাহাদাত আলীর নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি দল ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশন পরিদর্শন করেছেন। তারা রেলস্টেশন পরিদর্শনে এসে প্রাথমিকভাবে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপন করে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনের মাস্টার মহিদুর রহমান জানান, মঙ্গলবার দুপুরে একদল ছাত্র-জনতা রেলস্টেশন সম্পূর্ণ গুড়িয়ে দেয়। এ সময় তারা মূল্যবান জিনিসপত্র বাইরে রেললাইনের কয়েকটি স্থানে স্তুপ করে আগুন ধরিয়ে দেয়। এছাড়া টিকিট কাউন্টার, স্টেশন মাস্টার ও সহকারী স্টেশন মাস্টারের কক্ষ, তিনটি বিশ্র্রামাগার, পার্সেল রুম, কম্পিউটার রুম ও টয়লেটে অগ্নিসংযোগ করে সবকিছু ভস্মীভূত করে দেয়। এতে সহকারী স্টেশন মাস্টারের কক্ষে থাকা সিগন্যালিং প্যানেল বোর্ড, টিকিট কাউন্টারে থাকা বড় দু’টি ডাটাবেজ সার্ভার, জেনারেটর, চারটি কম্পিউটার মনিটর, প্রিন্টার, পাওয়ার সাপ্লাই, সোফাসহ সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
হামলাকারীরা স্টেশন প্লাটফর্মে থাকা আটটি ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা গুড়িয়ে দেয় ও যাত্রীদের বসার আসন পুড়িয়ে দেয়। এ সময় তারা রেললাইন মেরামত কাজের ট্রলিগুলোও পুড়িয়ে দেয়।
মহিদুর রহমান জানান, সিগন্যালিং প্যানেল বোর্ডটির দাম আনুমানিক অর্ধকোটি টাকা। এটির সাহায্যে ট্রেন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এটি সম্পূর্ণ গুড়িয়ে দেওয়ায় এখন থেকে চট্টগ্রামগামী ট্রেনের ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী আশুগঞ্জের তালশহর এবং ঢাকামুখী ট্রেনের ক্ষেত্রে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পাঘাচং রেলস্টেশন থেকে ট্রেন চলাচল নিয়ন্ত্রিত হবে। এ অবস্থায় শুধুমাত্র পরিচালকের (গার্ড) ইশারায় ট্রেন থামবে আর ছেড়ে যাবে। এ প্যানেল বোর্ডটি পুনঃস্থাপন না করা পর্যন্ত এভাবেই ট্রেন চলবে।
তিনি জানান, স্টেশনে হামলা, ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আখাউড়া রেলওয়ে থানায় অজ্ঞাতনামা ছয়/সাতশ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে আখাউড়া রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সাত্তার জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রেলওয়ে স্টেশনে হামলা এবং ভাঙচুরের ঘটনায় দুপুরে একটি মামলা নথিভুক্ত হয়।
বুধবার বিকেলে রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, কঙ্কালসার স্টেশনটির সব কক্ষের দরজা জানালা ফুটো। একদল মিস্ত্রী স্টেশন মাস্টার কক্ষের দরজা-জানালা মেরামত করছেন। অন্যান্য কক্ষ থেকে ভস্মীভূত হওয়া জিনিসপত্র সরিয়ে বাইরে আনতে দেখা গেছে।
স্টেশনের কম্পিউটার সিস্টেমের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা বাবুল মিয়া জানান, সাড়ে তিন লাখ টাকা মূল্যের দু’টি বড় ডাটাবেজ সার্ভার পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া মনিটর, প্রিন্টার, জেনারেটর, কাগজপত্রসহ দরজা-জানালা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এবং বিদ্যুৎ না থাকায় আপাতত টিকেটিং সেবাও বন্ধ থাকবে। এতে এ স্টেশনের যাত্রীরা আসনসহ টিকিটের সুবিধা হারাচ্ছে। এ সিস্টেম পুনরায় চালু করতে বেশ কিছুদিন সময় লেগে যাবে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০১৬
আরএ