ঢাকা: ‘ফুটপাতে ব্যবসা করে কয়জন? ১শ’, ৪শ’ বা এক হাজার? আপনি এই গুটি কয়েকজন লোকের কথা চিন্তা করেন। দেড় কোটি মানুষকে কষ্ট দেবেন, সেটা চিন্তা করেন না?’ আপনারা আমাদের মানবিক দিক শেখাতে এসেছেন ? অথচ দেড় কোটি লোকের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করলেন না! আপনার কাজ আপনি করেন।
ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদের বিপক্ষে নগরীর ট্রাফিক পুলিশের এক উপ-কমিশনার (ডিসি) মানবিকতার সাফাই গাওয়া শুরু করলে, তাকে থামিয়ে দিয়ে এ কথাগুলো বলেন নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান।
বৈঠকে হকারদের পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের দক্ষিণ ট্রাফিক বিভাগের ডিসি খান মো. রেজওয়ান বলেন, ‘স্যার ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের বিকল্প ব্যবস্থা না করে এভাবে উঠিয়ে দিয়ে কি সমাধান হবে? তাদের দিকটাওতো দেখতে হবে। ’
তার বক্তব্যের প্রেক্ষিতে এসব কথা বলেন নৌ পরিবহন মন্ত্রী।
এ সময় ডিসি ট্রাফিক মাথা নিচু করে থাকলেও অন্যরা নড়েচড়ে বসেন। মন্ত্রীকে করতালি দিয়ে স্বাগত জানায় অন্যরা।
অনেকে নিচু স্বরে বলতে থাকেন, ‘ ট্রাফিক পুলিশের জন্যই তো যানজট দূর হচ্ছে না। ফুটপাত দখল শেষ। এখন রাস্তার অর্ধেক জুড়ে দখল। আর হকারদের কাছ থেকে মাসোহারা হাতিয়ে নিয়ে সাফাই গাইতে আসেন তারা। ‘
মন্ত্রীর কথা শেষ হলে ফ্লোর নেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন। তিনি বলেন, ‘আমরা উচ্ছেদ করি, কিন্তু হকাররা আবার বসে যায়। আপনারা সহযোগিতা না করলে আমি কিভাবে কাজ করবো। তারা তো (ফুটপাথের ব্যবসায়ী) এখন ফুটপাতে নেই, রাস্তায় চলে এসেছে। এভাবে চলতে থাকলে একদিন আমার-আপনার বাসায় চলে আসবে’।
বার বার উচ্ছেদের পর দখল হয়ে যাওয়া ফুটপাথ নিয়ে বর্তমানে মহাবিড়ম্বনায় মেয়র সাঈদ খোকন। উত্তরণের উপায় খুঁজতে বুধবার (১৩ জানুয়ারি) নগর ভবনে একটি বৈঠক আহ্বান করা হয়। বৈঠকে যানজট নিরসনে ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদের পরামর্শ দেন শ্রমিক নেতারা।
বৈঠকের শেষ দিকে আলোচনায় উঠে আসে বঙ্গবাজারের পাশের রেলওয়ের জায়গা বাস টার্মিনালের জন্য বরাদ্দের ইস্যুটি।
আনন্দবাজারে রেলওয়ের প্রায় ২ দশমিক ৮৭ একর জায়গা দীর্ঘ দিন অবৈধ দখলে রয়েছে। গুলিস্তানের যানজট কমাতে এই জায়গায় বাস টার্মিনাল করার দাবি করেন শ্রমিক নেতারা।
শ্রমিক নেতাদের দাবির প্রেক্ষিতে মেয়র সাঈদ খোকন উপস্থিত রেলমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন, ‘মাননীয় মন্ত্রী ঢাকাকে বাঁচাতে এই জায়গাটুক আমাদের দিন। আমি আবেদন, নিবেদন করছি। ’
কিন্তু মেয়রের কথায় বেঁকে বসেন রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক। তিনি বলেন, ‘আমাদের সংসদীয় কমিটির সিদ্ধান্ত হয়েছে এই জায়গায় রেলের উন্নয়নে বহুতল ভবন করা হবে। যেহেতু নিজস্ব প্রয়োজনে কাজে লাগবে, তাই এ বিষয়ে সহযোগিতা করতে পারছি না। তবে যানজট নিরসনে মেয়রের অন্যকোন সহযোগিতা লাগলে আমরা আছি। ’
এ পর্যায়ে আবার ফ্লোর নেন নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান। তিনি বলেন, ‘আমিও মন্ত্রণালয় চালাই, তাই মন্ত্রণালয়ের বিষয়ে জানি, না চালাইলে কথা ছিল। ’
রেলমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে শাজাহান খান বলেন, ‘আপনি ভবন করবেন নকশা হয়েছে?’ এ সময় রেল সচিব মাথা নাড়িয়ে বলেন ‘হয়েছে’। মন্ত্রীর পাল্টা প্রশ্ন, ‘নকশার অনুমোদন হয়েছে?’ এবার সচিবের জবাব, ‘না’।
ভবন নির্মাণের জন্য অন্যান্য প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে? এজন্য আপনাকে ১০-১২টি দপ্তরের ছাড় পত্র নিতে হবে। তা নিয়েছেন? একটা এক দিনেই আপনি করতে পারবেন না।
‘তাহলে নকশা অনুমোদন হয়নি, কবে হবে, আদৌ হবে কি না বা কোন কালে হবে তার কোন ঠিক নাই। আপনি বলছেন ভবন বানাবেন। ’ যোগ করে নৌ-মন্ত্রী তার পূর্বের অভিজ্ঞতার আলোকে বলেন, ‘আগে মাওয়া ঘাটে যানজটের কারণে বহুদূর হাঁটতে হতো। এরপর আমি মন্ত্রী হয়ে সিদ্ধান্ত নিলাম মাওয়া ঘাটে নৌ-টার্মিনাল করবো। তখন যোগাযোগ মন্ত্রী ছিলেন, সৈয়দ আবুল হোসেন সাহেব। উনাকে চিঠি লিখলাম। উনি জবাব দিলেন, পদ্মা সেতু হবে জায়গা দেওয়া যাবে না।
আমি পাল্টা চিঠি দিলাম, আমি ঘাট করবো আপনি ঠেকান। পরে ঘাট করেছি, কিছু করতে পারছে?
এরপর যখন পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হয়েছে ঘাট শিমুলিয়ায় চলে গেছে। এতে কোন সমস্যা হয়েছে। ’
শাজাহান খান বলেন, ‘আমি মন্ত্রণালয় চালাই। আমিও জানি এই কাজ কবে হবে। আপনার জায়গা তো আপনার দখলে নাই, আপনি হুকুম দেন দেখেন কিভাবে জায়গা উদ্ধার করতে হয়। আপনার যখন প্রয়োজন হবে তার একমাস আগেই আমরা চলে যাবো, কথা দিলাম।
এরপরও রেলমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব কাজে লাগবে জায়গাটি। ’ এর জবাবে নৌ-মন্ত্রী বলেন, ‘আবারও একই কথা বলছেন। আপনার জায়গা যখন কাজে লাগাবেন তখন ছেড়ে দেব, বললাম তো। ’
এ পর্যায়ে রেলমন্ত্রী বলেন, ‘শাজাহান ভাই এভাবে তো হয় না, ঠিক আছে এখানে যে শর্ত আপনি দিলেন তার জন্য আপনার দুইজন দেন। আমাদের দুইজন ও মেয়রের দুইজন মিলে জায়গাটি সরেজমিনে পরির্দশন করে একটা ব্যবস্থা করা যাবে।
পরে মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, মাননীয় রেলমন্ত্রীর পরামর্শে নৌ-মন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হলো। এই কমিটিতে ডিএসসিসি’র প্রধান নির্বাহী খান মো. বিলাল থাকবেন। এছাড়া থাকবেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ, বাংলাদেশ ট্রাক শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান গণি, রেল সচিব ও রেলের ডিজি।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০১৬
এসএম/আরআই