ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ফরিদপুরে ঐতিহ্যবাহী গরু দাবড়ানো উৎসব

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২১৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১৬
ফরিদপুরে ঐতিহ্যবাহী গরু দাবড়ানো উৎসব ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ফরিদপুর: ফরিদপুরের চরভদ্রাশন উপজেলার চরহরিরামপুর ইউনিয়নের পূর্ব সালেপুর গ্রামের ধূ ধূ পদ্মার চরে অনুষ্ঠিত হয়ে হলো ঐতিহ্যবাহী গরু দাবড়ানো উৎসব।

ফরিদপুর শহর থেকে প্রথমে চরভদ্রাসন উপজেলার হাজীগঞ্জ বাজার অথবা চরভদ্রাশন পৌছলে সেখান থেকে সোয়া একঘন্টা ট্রলারে যেতে হবে।

সেখান থেকে নদীর ওপারের ঘাটে নেমে ধূ ধূ বালির চর ধরে সোজা আধা ঘণ্টা হেটে গেলেই পূর্ব সালেপুর ৭নং গরু দাবড়ানো মাঠ। এ মাঠেই গত ৫ বছর ধরে এলাকাবাসীর উদ্যোগে গরু দাবড়ানো উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।

হরিরামপুর ইউনিয়নের মানুষ বছরের দু’টি ঈদের পরে তাদের সবচেয়ে বড় উৎসব হিসেবে মনে করেন এ গরু দাবড়ানো অনুষ্ঠানকে।

উৎসবকে ঘিরে মেয়ে-জামাই-নাতি-নাতনি আর অন্যান্য স্বজনদের আগে ভাগেই দাওয়াত করে বাড়িতে আনেন তারা। বাড়িতে আয়োজন করেন পিঠা-পুলির উৎসব।

গরুর সঙ্গে মাঠে যেতেই এ স্বজনদের বাড়িতে দাওয়াত করে আনা হয় বলে জানালেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান কে এম ওবায়দুল বারী দিপু। তিনি বলেন, স্বজনের পাশাপাশি প্রতিবেশী নিয়ে গ্রুপ করে বাড়িতে অনুষ্ঠান করে দুপুরে সবাইকে খাওয়ানোর পর গরু নিয়ে সকলে মাঠে আসেন। তাই যে যার যার মতো লোক পছন্দ করে আগেই বাড়িতে জড়ো করেন।  

বিকেল চারটার দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে গরু দাবড়ানো ও গরুর প্রদর্শনী শুরু করা হয়। এতে যে গরুটি তার রাগ যতো বেশি প্রদর্শন করবে ও যতো দ্রুত গরুর গলায় বাধা দড়ি গাছে বেঁধে দেওয়ার পর ছিড়ে চলে যাতে পারবে তাকেই পুরস্কৃত করা হয়।

গরু দাবড়ানো উৎসবে ওই ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা থেকে সুসজ্জিত প্রায় একশ’ গরু নিয়ে তার মালিক এবং সমর্থকেরা অংশ নেন। এ উৎসবকে কেন্দ্র করে ওই এলাকায় অস্থায়ী মেলা বসে। মেলায় শিশুদের বিনোদন ও খেলনা কিনতে দেখা গেছে। এছাড়া খাবারের দোকান ও নিজেদের তৈরি মিষ্টি-মণ্ডার দোকানও বসেছিল। গরু দাবড়ানো দেখতে গ্রামের নারী-শিশুসহ হাজার হাজার মানুষ মাঠে এসেছিলেন।

উৎসব শেষে চরভদ্রাসন উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান তানজিনা আক্তার ও হরিরামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওবায়দুল বারী দিপু অংশগ্রহণকারীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন।

তানজিনা আক্তার বলেন, দেশের ঐতিহ্য ধরে রাখতে প্রতি বছরের মতো এবারো গরু দাবড়ানো উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। এতে করে দেশের অবহেলিত জনগোষ্ঠী পদ্মার চরের মানুষের একটি বিনোদনের ব্যবস্থা হয়েছে এটাই বড় কথা।

তিনি বলেন, এই চরের মানুষ অত্যন্ত দরিদ্র। বর্তমান সমাজের যে সুফল তার কোনোটিই তাদের ভাগ্যে জোটে না। তবুও এ উৎসবের মধ্য দিয়ে একটি মহা মিলনমেলা হলো, সকলে একটি উৎসবমুখর দিন কাটাতে পারলেন, সকলেই আনন্দিত।

বাংলাদেশ সময়: ২২১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১৬
আরকেবি/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।