ঢাকা: স্বাধীনতার ডাক বঙ্গবন্ধু দিয়েছিলেন ৭ মার্চ। তারপর নিজ এলাকা দিনাজপুর গিয়ে থানা দখল করে ১৫ মার্চেই মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং শুরু করছিলাম।
কালুরঘাটের যে ঘোষণা তারও অনেক পরে এসেছে। আর সেটা শোনাও যায়নি। এছাড়া সকলের শোনা সম্ভবও হয়নি। তাই যুদ্ধের ঘোষণা কে দিয়েছিলেন, কার নির্দেশনায় আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, সে ইতিহাস অনেকেই জানেন না। সে ইতিহাস জানা উচিত সকলের।
সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এক মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির আলোচনায় এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন। ৮ মার্চ আমি এলাকায় চলে গেলাম। ১৪ মার্চ থানা দখল করলাম। আর ১৫ মার্চ থেকেই আমরা ট্রেনিং শুরু করলাম।
যার অনেক পরে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে ঘোষণা এসেছে। সে ঘোষণা আমরা শুনতেও পাইনি। সেটা শোনা সম্ভবও ছিল না। কাজেই কার ডাকে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করলাম প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, এসব ইতিহাস সকলের জানা উচিত।
তিনি বলেন, ইতিহাস মাঝে বিকৃত হয়ে গেছে। যার জন্য মানুষ ভুল তথ্য পেয়েছে। ভবিষ্যতেও বিকৃতি হওয়ার শঙ্কা থেকে যায়। এজন্য ফটোস্টোরি দিয়ে গ্রন্থ প্রকাশ করতে হবে।
এই নাট্যকর্মী বলেন, ইতিহাস এমন একটা জিনিস, যা কখনই মাটি চাপা দেয়া যায় না। অনেক চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু প্রকৃত ইতিহাস মাটি ফুঁড়ে বের হয়েছে এবং হচ্ছে।
ফটো সাংবাদিক পাভেল রহমানের 'সাংবাদিকতা আমার ক্যামেরায়' গ্রন্থটির মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানটিতে আরো আলোচনায় অংন নেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক তাসমিমা হোসেন, দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকার সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন প্রমুখ।
পাভেল রহমানের সাংবাদিক জীবনের ৪০ বছরের অভিজ্ঞতায় রচিত গ্রন্থটি যৌথভাবে প্রকাশ করে মাওলা ব্রাদার্স ও মাত্রা। এতে বঙ্গবন্ধুর সাদাসিধে জীবন যাপন থেকে শুরু করে নূর হোসেনের সেই বিখ্যাত ছবি ছাড়াও প্রায় ৩০টি ছবি স্থান পেয়েছে। মূলতঃ সেই ছবিগুলোর পেছনের ঘটনা এবং তা প্রেক্ষাপট নিয়ে রচনা করা হয়েছে বইটি।
গ্রন্থটি সম্পর্কে রাশেদ খান মেনন বলেন, ফটো সাংবাদিকতার মাধ্যমেই সঠিক ইতিহাস বেরিয়ে আসুক। পাভেল রহমানের ছবিগুলো এক একটি ইতিহাস। তার তোলা গণতন্ত্র মুক্তি পাক-নূর হোসেনের গায়ে লেখা সম্বলিত ছবিটি পুরো রাজনৈতিক পট পরিবর্তন করে দেয়। তিনি বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে যে ছবিগুলো তুলেছেন, তা এক একটা ইতিহাস।
হাসানুল হক ইনু বলেন, গণতন্ত্রের জন্য ফটো সাংবাদিকদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, দশ হাজার শব্দ লেখা হলেও হয়তো মিথ্যাটা থেকে যায়। কিন্তু একটা ছবি সঠিক তথ্য আর সত্যকে তুলে ধরে। হাজার কথায় যা অপ্রকাশিত থেকে যায়, একটি ছবি তাই প্রকাশ করতে পারে।
তিনি সঠিক ইতিহাস রচনায় ফটো সাংবাদিকদের আরো গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার আহ্বান জানান।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, যেহেতু আমরা এখন গণতন্ত্রের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি, তাই ভয় কম। তবে এখনও জঙ্গিবাদের ভয় আছে,মাদক সন্ত্রাসীদের ভয় আছে। কিন্তু ভয় পেলে চলবে না। কেননা, ভয় পেলে অপরাধীরা, জঙ্গিরা জিতে যায়।
এ সময় তিন মন্ত্রীই পাভেল রহমানের বইটির মাধ্যমে সকলকে সঠিক তথ্য জানানোর আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০১৬
ইইউডি/আরআই