ঢাকা: পদ্মা সেতুর অর্থায়ন নিয়ে নানাভাবে চাপ সৃষ্টির পাশাপাশি সরাসরি হুমকিও দেয়া হয়েছিলো বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নানা ভাবে নানা চাপ, দুটো বছর আমাদের ওপর যেন আজাব সৃষ্টি হয়েছিলো।
শনিবার (১৬ জানুয়ারি) বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর জাতীয় নাট্যশালায় ২৭ তম কাজী মাহবুবউল্লাহ পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই পদ্মা সেতু বন্ধ করে দেবে কোন এক বিশেষ ব্যক্তির একটা ব্যাংকের এমডির পদে থাকা না থাকার ওপর। আমাকে সরাসরি থ্রেটও করা হয়েছে। আমেরিকার অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এসে সরাসরি বলেছেন যে এটা না হলে পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ হবে।
কিন্তু ওই এমডির পদ দেওয়ার ব্যাপারে তো আমি সর্মথ ছিলাম না। কারণ যার এ পদ তিনি তো কোর্টে মামলা করেছেন সরকারের বিরুদ্ধে। সেই ব্যাংকের যে আইন সেই আইন ভঙ্গ করে ১০ বছর চালানোর পরও কোর্ট তার তো আর বয়স কমাতে পারে না। কোর্ট যদি বয়স কমিয়ে দিতে পারতো তাহলে হতো। ’
(গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ নিয়ে আইনি লড়াই করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস)
পদ্মা সেতু নির্মাণকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা যদি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ করে একটা দেশ স্বাধীন করতে পারি তবে একটা সেতু নির্মাণ করতে পারবো না, এটা হতে পারে না। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে আমাদের রিজার্ভ ২৭ বিলিয়ন ডলার। কাজেই আমরা নিজেরাই যে কোন বড় প্রজেক্ট করতে পারি। ’
পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পদ্মা সেতু যেদিন থেকে আমরা নিজেরা নির্মাণ শুরু করেছি তখন থেকে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিরও পরিবর্তন হয়েছে। বাংলাদেশকে আর অবহেলার চোখে দেখা যাবে না, বাংলাদেশ পারে। ’
পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই পদ্মা সেতু নিয়ে আমাদের ওপর একটা দুর্নাম দেয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চলেছে। সেখানে মূল টার্গেটে ছিলাম আমি, আমার পরিবার, আমার মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, এমনকি সচিব কেউই বাদ যায়নি। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এমন ভাবে একটা ধোঁয়াটে অবস্থা সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হয়েছে যে আমি যেন দুর্নীতি করে সব টাকা লোপাট করে দিয়েছি। একটি পয়সাও দেয়নি তারা, তার আগেই ধুয়া তোলা হলো।
কেন কার প্ররোচনায় সেটা আমি বলতে চাই না, সেটা আপনারা ভালো করেই জানেন। তবে আমি এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম। ’
‘সততাই শক্তি’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেকে অনেক কথা লিখে, অনেক কথা বলে আমাদের মানসিক ভাবে দুর্বল করতে চেয়েছে। কিন্তু আমি সব সময় বিশ্বাস করি সততাই শক্তি। আমার সেই আত্মবিশ্বাস আছে। আত্মবিশ্বাস আছে বলেই আমরা আজ এটা করতে পেরেছি। ’
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আর্দশ বুকে নিয়ে রাজনীতি করছি, রাষ্ট্র পরিচালনা করছি। এখানে নিজেদের কি হবে, নিজেরা অর্থ বাড়াবো সম্পদ বাড়াবো এই চিন্তাতো কখনো করি না, করবো না, করি নাই। সেখানে এত বড় বদনাম দেবে, এটা কখনো আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য ছিলো না। ’
বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। কেউ বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে পারবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ১৬ কোটি মানুষ। এই ১৬ কোটি মানুষের শক্তিই তো বড় শক্তি। আমরা এই দেশকে নিয়ে গর্ব করি। কিছু রাজাকার ও স্বাধীনতা বিরোধী অংশ আছে। সেটা বাদ দিয়ে বাকি যে মানুষগুলো আছেন প্রত্যেকে আমরা এক হয়ে আমাদের এ দেশকে একটা সম্মানজনক অবস্থায় নিয়ে যেতে পারি। ’
এ বছর শিক্ষা ও গবেষণায় ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আবুল কালাম আজাদ চৌধুরীকে বিশেষ পুরস্কার হিসেবে আজীবন সম্মাননা, সাহিত্য ও সাংবাদিকতায় আনিসুল হক, পাটের মলিকিউলার বায়োলজি বিষয়ে বিশেষ গবেষণায় অধ্যাপক ড. হাসিনা খান এবং খেলাধুলায় ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মর্তুজাকে কাজী মাহবুবউল্লাহ পুরস্কার দেয়া হয়।
বেগম জেবুন্নেছা ও কাজী মাহবুব উল্লাহ জনকল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান জোবায়দা মাহবুব লতিফের সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আবুল কালাম আজাদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিন।
অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংসদ সদস্য বেগম নিলুফার জাফরউল্লাহ।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৬
এমইউএম/আরআই
** ব্যক্তি উদ্যোগে শিক্ষা প্রসারের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর