ঢাকা: অনেক হাকডাকের পর প্রযুক্তি নির্ভর ভোটদান পদ্ধতি চালু করতে কোটি কোটি টাকা খরচ করে কেনা হয়েছিলো ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)। কিন্তু এ যন্ত্রটি কোনো চূড়ান্ত প্রোডাক্ট ছিলো না।
ইসির নির্ভরযোগ্য সূত্র এসব তথ্য বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছে।
সূত্রে জানা গেছে, এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন ২০১০ সালে ইভিএম যন্ত্রটি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের (আইআইসিটি) কাছ থেকে ক্রয় করে। কিন্তু আইআইসিটি বিভাগের এটি ছিলো পাইলট প্রকল্প। প্রকল্পের নেতৃত্ব দেন আইআইসিটি’র পরিচালক অধ্যাপক ড. এস এম লুৎফর কবীর।
প্রকল্পের কাজ চূড়ান্ত হওয়ার আগেই ইসি’র সঙ্গে একটি অলিখিত চুক্তিতে আসে আইআইসিটি। ইসিও কোনো বাছবিচার না করেই অসম্পূর্ণ প্রোডাক্ট কেনে! যার ফলেই বর্তমানে নষ্ট ইভিএমও সারাতে পারছে না সংস্থাটি।
ইসির তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) অনুবিভাগের সিস্টেম ম্যানেজার রফিকুল হক বাংলানিউজকে বলেন, ইভিএম ছিলো বুয়েটের আইআইসিটি’র একটি পাইলট প্রকল্প। পরবর্তীতে সে প্রকল্প থেকেই প্রোডাক্টটি কেনা হয়। কিন্তু কয়েকটি নির্বাচনে এই যন্ত্রে সফলভাবে ভোটগ্রহণ করা গেলেও পরবর্তী বেশ ক’টি নির্বাচনে ক্রটি ধরা পড়ে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যা হয় ২০১৩ সালে রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময়। ওই নির্বাচনে একটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণের সময় একটি ইভিএমে ত্রুটি দেখা দেয়। যা এখনও সারানো যায়নি।
সর্বশেষ ২০১৫ সালে বুয়েটে নষ্ট ইভিএমটি পাঠিয়ে ক্রটির কারণ উদ্ধার ও সারানোর জন্য বেশ কয়েকবার চিঠি দেয় ইসি। কিন্তু বুয়েটের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কোনো চুক্তি না থাকায় তারা এর দায় না নেওয়ার কথা জানায় ইসিকে। এরপর ইসি বুয়েটকে ইভিএমটি ফেরত পাঠাতে বলে। বুয়েট সেটি ফেরত পাঠালে বর্তমানে তা ইসি’র গোডাউনেই রয়েছে।
রফিকুল হক বলেন, ইভিএমটি যে শিক্ষক এবং ছাত্ররা তৈরি করেছিলেন, তারা কেউ বুয়েটে নেই। যে কারণে বুয়েটের অন্য কেউ এটির প্রযুক্তি সম্পর্কে জানেন না। মূলত: এজন্যই ইভিএমটি ঠিক করা যাচ্ছে না। এছাড়া যে ইভিএমটি কেনা হয়েছিলো, তারা স্বত্ত্বও আমাদের কাছে দেয়নি। যে কারণে আমরাও জানি না, এটি কিভাবে কোনো প্রোগ্রামে প্রস্তুত করা হয়েছে।
ইভিএম প্রচলনের সময় দায়িত্বে থাকা নির্বাচন কমিশনার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন এ বিষয়ে বাংলানিউজকে বলেছিলেন, ‘আমাদের সময় ইভিএম ব্যবহার করে বেশ সাফল্য পেয়েছিলাম। ২০১০ সালে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এটি প্রথম ব্যবহার করা হয়। পরে ২০১২ সালে কুমিল্লাতে পুরো সিটি নির্বাচনই ইভিএমে করা হয়েছিলো। কিন্তু বর্তমান কমিশন বুয়েটের সঙ্গে সে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারেনি বলেই ইভিএম মেশিনের ব্যবহার আর বাড়াতে পারেনি’।
বিগত কমিশনের সময় ওয়ান ম্যান শো চুক্তি কেন করা হয়েছিলো আর যন্ত্রটির সফটওয়্যারের পেটেন্ট বা স্বত্ত্ব কেন কেনা হয়নি?- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনেকগুলো কাজ সে সময় করতে হয়েছে। পেটেন্ট বা স্বত্ত্ব কেনার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু পরে আর আমরা সময় পাইনি। আমাদের দায়িত্বের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিলো।
সাখাওয়াত হোসেন বলেন, বর্তমান কমিশন বুয়েটের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা তো করেইনি, বুয়েটের পরামর্শকেও এড়িয়ে গেছে। তারা ইভিএমে দেশীয় ব্যাটারি ব্যবহার করছে। যা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান সমর্থন করেনি। এছাড়া প্রস্তুতকারীই জানেন, তার উদ্ভাবিত যন্ত্র কিভাবে ভালো আউটপুট দেবে। তাই বর্তমান ইসি’র এ সিদ্ধান্তটিও ভুল ছিলো।
বিগত কমিশন বুয়েট ও বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির কাছ থেকে কয়েক দফায় ১ হাজার ২৩০টি ইভিএম ক্রয় করে ইসি। এতে প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা ব্যয় করতে হয়েছে।
তবে এগুলো বর্তমানে ইলেকট্রনিক আবর্জনা ছাড়া আর কিছুই না বলেও মনে করছেন খোদ ইসি’র কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, ইসি বর্তমানে অন্য কোনো ইভিএম প্রস্তুতকারক খুঁজছে। ইতোমধ্যে ইসি সচিব সিরাজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেছেন, বুয়েটের সমকক্ষ কেউ হয়তো হবে না। তবে অন্য কেউ যদি ইভিএম বানাতে পারে, আমরা সাধুবাদ জানাবো।
এদিকে ইসি সূত্র জানাচ্ছে, ইভিএমে ভোট নেওয়ার বিষয়ে বর্তমান কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন কমিশনও আন্তরিক। তবে তারা ত্রুটিপূর্ণ যন্ত্রে ভোট নেওয়ার ঝুঁকি নিতে চায় না। আর ইভিএমে ভোট নেওয়ার বিধিমালাও করা হয়েছে। তাই আরো উন্নতমানের এবং ঝুঁকিহীন ইভিএম খুঁজছে ইসি। এক্ষেত্রে সংস্থাটি ভারতের সহায়তাও নিতে পারে। দেশটি ইভিএমে সফলভাবে ভোটগ্রহণ করছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৬
ইইউডি/এএসআর