ঢাকা: সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু সেতুতে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফের ছেলে শরীফ রানাসহ নয়জন। ওই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর আবারও সামনে এসেছে দেশের সর্ববৃহৎ সেতুর নিরাপত্তা ব্যবস্থার বিষয়টি।
দেশের পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সংযোগমাধ্যম বঙ্গবন্ধু সেতুর দৈর্ঘ্য ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার। এর উভয়পাশের ৩৩ দশমিক ৪০ কিলোমিটার রাস্তা সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগের আওতাধীন। মূল সেতুর সঙ্গে ‘বিপজ্জনক’ তকমা লেগে গেছে সড়কের এই অংশটুকুরও।
সেতু বিভাগ বলছে, বঙ্গবন্ধু সেতুতে মোট ১৫২টি সোডিয়াম লাইট আছে। এরমধ্যে জ্বলে ৪০টি। বাকি ১১২টিই নষ্ট। ঘন কুয়াশা যখন পড়তে শুরু করে, তখনই নিভে থাকা লাইটগুলোর ‘অভিশাপে’ নিভে যায় তরতাজা প্রাণের আলো।
সেতু বিভাগের তথ্যমতে, সোডিয়াম লাইট ছাড়াও সেতুর ওপরে ও নিচে (রাত্রিকালীন) ৪৯টি এয়ারক্রাফট ওয়ার্নিং লাইট (এইউএল) আছে। আছে ১৯৮টি নেভিগেশন লাইট (সেতুর নিচে)।
সরেজমিনে দেখা যায়, সেতুর এইউএল’র সবগুলোই নষ্ট। জ্বলে না ৬৫-৭০টি নেভিগেশন লাইটও। এই বাতিগুলোই কেবল ‘নিভে’ নেই, পড়ে আছে গত বছর দুর্ঘটনায় ভেঙে পড়া ১৭ নং সোডিয়াম লাইটটিও।
এছাড়া, সেতুর উভয়পাশে ১২টি গোপন ক্যামেরা (সিসি ক্যামেরা) স্থাপিত থাকলেও সচল নেই আটটিই। এরমধ্যে আবার ২০১৩ সালে সেতুর পূর্বপাড় ওজন স্টেশনে স্থাপিত দু’টি সিসি ক্যামেরা চুরিও হয়ে যায়।
তবে, এতোসব ‘অকেজো-নষ্ট-বন্ধ’ খবরেও দৃশ্যত প্রতিক্রিয়া নেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেটালজিক্যাল কনস্ট্রাকশন কোম্পানি অব চায়না (এমসিসিসি) ও ইউডিসি (জয়েন্ট ভেঞ্চার) কোম্পানির।
অবশ্য, সরেজমিনে ঘুরে পাওয়া লাইট বন্ধ-নষ্ট থাকার খবরে দ্বিমত পোষণ করেছেন সেতু বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপরের লাইটগুলো ফটো সিস্টেম লাইট। সুইচ অন অফের কোনো সুযোগ নেই। এতে করে লাইট বন্ধ হওয়ারও কোনো সুযোগ নেই। গত কয়েকদিন আগে রাত ১১টার সময় সেতু এলাকায় পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। লাইট বন্ধ দেখিনি।
তবে দু’একটা বন্ধ থাকতে পারে উল্লেখ করে সে ব্যাপারে খোঁজ নিচ্ছেন বলে জানান আনোয়ারুল ইসলাম।
এদিকে, বঙ্গবন্ধু সেতুর উভয়পাশে সেতুর বিভাগের আওতাধীন যে ৩৩ দশমিক ৪০ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে তা-ও হয়ে উঠেছে সমান বিপজ্জনক। এর পশ্চিম পাশে সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল পর্যন্ত অংশটুকু সেতু বিভাগের উদ্যোগে ফোর লেনে করার কথা থাকলেও তা এখনও অধরা। সেতুর পূর্ব পাশে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা, ভুয়াপুর, চরগাবসারা সড়কে যে ১৫টি ছোট সেতু ও একটি কালভার্ট রয়েছে সেগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত বিপজ্জনকভাবে। তাছাড়া, দেশের অন্যতম ব্যস্ত এই সড়কে ডিভাইডারও নেই। সে কারণে প্রায়ই সেখান থেকে খবর আসছে মর্মান্তিক দুর্ঘটনার।
যদিও ও ছোট ছোট ১৫টি সেতু মেরামতের জন্য প্রকল্প তৈরি করেছে সেতু মন্ত্রণালয়। এগুলো নির্মাণের জন্য ইতোমধ্যে ১১৯ কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণও করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে দেখা যায়, এলেঙ্গা, ভুয়াপুর, চরগাবসারা আঞ্চলিক মহাসড়কে ১৫টি পিসি গার্ডার সেতু ক্ষতিগ্রস্ত। এগুলোর মোট দৈর্ঘ্য ৪০০ মিটার। অন্যদিকে তিনটি আবাসিক বক্স কালভার্টও ক্ষতিগ্রস্ত। এগুলোর মোট দৈর্ঘ্য ৪৮ মিটার।
ক্ষতিগ্রস্ত সেতুগুলো হলো টাঙ্গাইলের রাজাবাড়ি সেতু-১, রাজাবাড়ি সেতু-২, ছায়া সেতু-১, ছায়া সেতু-২, ফুলতলা সেতু-১, ফুলতলা সেতু-২, ফুলতলা সেতু-৩, তাঁতিহারা সেতু, নারান্দিয়া সেতু-১, নারান্দিয়া সেতু-২, সিংগাড়া সেতু, কামারি সেতু-১, কামারি সেতু-২, সিকাহল সেতু ও বাগবাড়ি সেতু।
এ সড়কে যাতায়াতকারী যাত্রীরা বলছেন, সড়কের তুলনায় সেতুগুলো অনেক সরু। এর ওপর ক্ষতিগ্রস্তও। এ কারণে প্রায়ই সেতুগুলোতে দুর্ঘটনা ঘটে। বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণের সময় এগুলো সামান্য মেরামত করা হয়েছিল। তারপর পড়ে আছে ‘বিপদের কারণ হয়ে’।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘বিপদের কারণ’টা দূর করতে এই সেতুগুলো মেরামতের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু সেতুকেও চলাচলের ‘পুরোপুরি উপযোগী’ করতে কর্তৃপক্ষের নজর দেওয়া উচিত।
বাংলাদেশ সময়: ০৭০৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০১৬
এমআইএস/এইচএ/