ঢাকা: সরকার পোশাকশিল্প নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্ত মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, শুধু জাতীয় পর্যায় থেকে নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকেও এ ধরনের চক্রান্ত হচ্ছিলো।
রোববার (১৭ জানুয়ারি) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানের নেতৃত্বে সংগঠনটির নেতারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
এ সময় শেখ হাসিনা আরও বলেন, একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেটাকে বড় করে দেখানো বা সেটার সূত্র ধরে আমাদের পোশাকশিল্প রপ্তানিতে বাধা দেওয়ার নানা রকম চেষ্টা হয়েছিলো। শুধু জাতীয় পর্যায় থেকে নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকেও এ ধরনের একটা চক্রান্ত হচ্ছিলো। যেটা আমরা মোকাবেলা করেছি। ব্যবসায়ীরা যেমন এ ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করেছেন, আমরা সরকারের পক্ষ থেকেও যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছি বলেই তারা
আর সফল হতে পারেনি।
তিনি বলেন, পোশাকশিল্প নিয়ে অনেক কিছু ঘটে গেছে। রানা প্লাজা, তাজরিন ফ্যাশনসহ বিভিন্ন দুর্ঘটনা ঘটেছে। এগুলো মোকাবেলার জন্য যা যা করা দরকার সেগুলো আমরা করছি।
ব্যবসায় সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকারের নানান উদ্যোগ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ব্যবসায়ীরা যাতে নিশ্চিন্তে ব্যবসা করতে পারেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে সেই পরিবেশ আমরা নিশ্চিত করেছি। আমাদের সরকার ব্যবসা করতে আসেনি, আমরা ব্যবসায়ীদের জন্য ব্যবসার পরিবেশ নিশ্চিত করতে এসেছি।
পোশাকশিল্পের নতুন নতুন বাজার খোঁজার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা মার্কেট নিয়ে বসে থাকলে হবে না। নতুন নতুন বাজার তৈরির চেষ্টা করুন।
বিজিএমইএ নেতারা কারখানা স্থানান্তরে গ্যাস-বিদ্যুৎ সমস্যার কথা তুলে ধরলে তিনি বলেন, কোনো ইন্ডাস্ট্রি রিলোকেট করলে অবশ্যই আগে আপনাদের নিশ্চিত করতে হবে, সে স্থানে গ্যাস সরবরাহ আছে কিনা বা গ্যাস সরবরাহ করা যায় কিনা। বিষয়টা চিন্তায় না নিয়ে আগে কারখানা স্থানান্তর করে পরে গ্যাসের দাবি করলে তো হবে না।
শেখ হাসিনা বলেন, পোশাকশিল্পকে আরও উন্নত করতে আমরা পোশাকশিল্প পল্লী স্থাপনের জন্য মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় একটা জায়গা পেয়েছি। আসলে আপনারা একটু বেশি কৃপণতা করেন। নিজেরা পয়সা খরচ করতে চান না। এখানেই হচ্ছে সমস্যা। আপনারা যদি একটু উদ্যোগ নেন, কিছু পয়সা খরচ করেন তাহলে কিন্তু এ গার্মেন্টস পল্লীটা দ্রুত করা যায়। সেখানে গ্যাস থেকে শুরু করে যোগাযোগের সব রকম সুবিধা করে দেওয়া হচ্ছে। তখন কিন্তু অসুবিধা থাকবে না।
পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইন্ডাস্ট্রি যখন হবে, তার পরিবেশ রক্ষা করা আমাদের গুরু দায়িত্ব।
বাংলাদেশের শ্রমিকদের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো দেশ যদি আপনাকে চাহিদা দেয়, আমাদের শ্রমিকরা কিন্তু সেটা দ্রুততম সময়ে নিখুঁতভাবে তৈরি করে দিতে পারে। এটা কিন্তু অন্য কোনো দেশ দিতে পারবে না। অন্য কোনো দেশে ৮ ঘণ্টার বেশি কাজ করে না শ্রমিকরা। আমাদের এখানে শ্রমিকরা বেশি কাজ করে। অবশ্য এজন্য তারা অতিরিক্ত অর্থও উপার্জন করে।
১৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইন্ডাস্ট্রির জন্য যতো বিদ্যুৎ লাগবে আমরা দিতে পারবো।
গ্যাসের অভাব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গ্যাসে সমস্যা হচ্ছে, তারপরও উৎপাদন বাড়িয়েছি। কিন্তু চাহিদা বাড়ছে এতে কোনো সন্দেহ নেই।
বিজিএমইএ নেতারা ব্যাংক ঋণে সুদের হার কমানোর দাবি করলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্যাংক ঋণে আমরা সুদের হার কমিয়েছি। সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নিয়ে এসেছি।
ব্যাংকগুলো সুদ কম নেবে বললেও বাস্তবে তারা বেশি নিচ্ছে- বিজিএমইএ নেতাদের এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ব্যাংকের মালিকও এখানে আছেন। সুতরাং নিজেরাই একটু কমিয়ে টমিয়ে নেন। আমরা সুদ অনেক কমিয়ে দিয়েছি। আরো কমাতে চেষ্টা করছি।
তিনি বলেন, নিজেদের সমস্যা নিজেরাই সমাধান করার চেষ্টা করবেন। সরকারের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনতে বিশেষ দৃষ্টি দেবেন।
শ্রমিকদের বেতন বাড়ানো প্রসঙ্গে বিজিএমইএ নেতাদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারাও বেতন বাড়িয়েছেন। বিনিময়ে আমরাও যে একেবারের খালি হাতে ফেরাচ্ছি তা কিন্তু না। অনেক জায়গায় অনেক কিছুতে আমরা ছাড় দিয়েছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০১৬/আপডেট: ১৬৩৩ ঘণ্টা
এমইউএম/আরএম