নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জ শহরের বাবুরাইলে ফ্ল্যাট বাসায় দুই শিশুসহ একই পরিবারের পাঁচজনকে হত্যার পেছনে নারীঘটিত যৌন আবেদনের বিষয় সম্পৃক্ত করে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে।
নিহত তাসলিমা বেগমের স্বামী মো. শফিকুল ইসলামের দায়ের করা মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে লামিয়া আক্তার নামের গৃহবধূকে যৌন আবেদনে ব্যর্থ হয়েই পরিকল্পিতভাবে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটানো হয়েছে।
তবে পুলিশ প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দ্বিতীয় কারণ তথা যৌন আবেদনের বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়েই এগোচ্ছে।
রোববার (১৭ জানুয়ারি) সকালে নিহত তাসলিমা বেগমের স্বামী মো. শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে ওই মামলাটি দায়ের করেন।
নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি আবদুল মালেক জানান, এ ঘটনায় ৭ জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
মামলায় বাদী উল্লেখ করেন, আমার স্ত্রী তাসলিমা (২৮), মেয়ে সুমাইয়া (৪), ছেলে শান্ত (১০), ছোট ভাই শরীফ (২২) ও তার স্ত্রী লামিয়া (২০), শ্যালক মোর্শেদুল ওরফে মোশাররফ নারায়ণগঞ্জ শহরের বাবুরাইলে ইসমাইল হোসেনের বাড়ির নিচ তলার ফ্ল্যাটে বসবাস করে আসছিলেন।
মামলায় বলা হয়, ১০ বছর ধরে আমি (শফিকুল) ঢাকার জনৈক জিয়ারুল হাসান এর গাড়ির চালক হিসেবে কর্মরত রয়েছি। প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার আমি নারায়ণগঞ্জ শহরের বাবুরাইলের বাসায় আসতাম। তবে গত শনিবার (১৬ জানুয়ারি) রাত ৮টা ৪০ মিনিটে আমার ছোট ভাই শরীফ আমার মোবাইলে ফোন করে অবহিত করে যে, কে বা কারা আমাদের বাবুরাইলের ফ্ল্যাটে তালা মেরে পালিয়ে গেছে। পরে আমরা তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে দু’টি কক্ষের মেঝেতে রক্তাক্ত অবস্থায় ৫ জনের মৃতদেহ দেখতে পাই।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, আমি পরস্পর জানতে পারি যে, আমার স্ত্রী তাসলিমার কাছে ঢাকার কলাবাগানের নাজমা ও শাহাজাহানসহ একাধিক ব্যক্তি প্রায় ১২ লাখ টাকা পেতেন যা মাসিক চক্রবৃদ্ধি সুদে নেওয়া ছিল। ওই টাকা সময়মতো পরিশোধ করতে না পারায় পাওনাদাররা প্রায়ই টাকা পরিশোধের জন্য হুমকি দিতেন। এমনকি নাজমাও মাঝে মধ্যে আমার পরিবার ও সন্তানদের দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেবেন বলে হুমকি প্রদান করতেন। আমার শ্যালক মোর্শেদুল ওরফে মোশাররফের কাছেও টাকা পেতেন তারা। টাকা-পয়সা পাওয়ার সুবাধে পাওনাদার ব্যক্তিরা আমার বাসায় যাওয়া-আসা করতেন এবং এ ব্যাপারে চাপ প্রয়োগ করতেন।
এছাড়া আমার ভাগিনা মাহফুজ আমার ছোট ভাই শরীফের স্ত্রী লামিয়ার সঙ্গে ঢাকায় বসবসাসের সময়ে যৌন আবেদন করলে পরবর্তীতে মাহফুজকে আমরা ঢাকায় রেখে নারায়ণগঞ্জ চলে আসি। ভাগিনা মাহফুজ পুনরায় নারায়ণগঞ্জ এসে আমাদের বাসায় এসে শরীফের স্ত্রী লামিয়ার সঙ্গে একই ধরনের ব্যবহার ও আচরণ করতো। এতে আমার ভাইয়ের স্ত্রী লামিয়া অসন্তুষ্ট হয়। আমার স্ত্রী তাসলিমা ও ছোট ভাই শরীফের কাছে লামিয়া বিষয়টি প্রকাশ করে দেয়।
এতে করে আমাদের সন্দেহ হচ্ছে, ওই ব্যক্তিসহ (মাহফুজ) অজ্ঞাতনামা দুস্কৃতিকারীরা একই উদ্দেশ্যে পরস্পরের যোগসাজশে শুক্রবার (১৫ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ১০টা থেকে শনিবার (১৬ জানুয়ারি) রাত ৮টা ২০ মিনিট পর্যন্ত যেকোনো সময়ে শক্ত কোনো ভোতা অস্ত্র দিয়ে গুরুতর জখম ও গলায় ফাঁস লাগিয়ে ৫ জনকে হত্যা করেছে। ঘটনার পর থেকে তাসলিমার স্ত্রীর ব্যবহৃত মোবাইল সেট ও শ্যালক মোর্শেদুল ওরফে মোশারফের মোবাইল ফোন পাওয়া যাচ্ছে না।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০১৬
এএসআর
** সাইলেন্ট কিলিং মিশন
** নিহতদের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর
** গলাকেটে নয়, আঘাতেই মৃত্যু