ঢাকা: যানজট নিরসনে ঢাকায় রিকশা বন্ধের পক্ষে মত দিয়েছেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন।
রোববার (১৭ জানুয়ারি) রাতে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের (আইইবি) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ যানজট বিষয়ক এক সেমিনারের আয়োজন করে।
এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী বলেন, ঢাকা শহরে রিকশা বন্ধ করা উচিত। যদি এটা না পারা যায় তাহলে লাইসেন্সকরা রিকশাগুলো রেখে অলাইসেন্সকরা রিকশাগুলো বন্ধ করতে হবে।
সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন, আইইবি’র প্রেসিডেন্ট কবির আহমেদ ভূইয়া ও ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) গোলাম ফারুক।
মোশাররফ হোসেন বলেন, আগের পরিকল্পনাবিদরা চিন্তা করেনি ঢাকার শহর এতো বাড়বে। তাদের দুরদর্শিতার অভাব রয়েছে।
যান নিরসনের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, রাস্তার পাশে কোনো পার্ক অ্যালাউ করা উচিত নয়। যদি কেউ পার্ক করে তাহলে পুলিশ যেন রেকার দিয়ে তা উঠিয়ে নেয়। বর্তমানে বিভিন্ন বিল্ডিংয়ের বেজমেন্টে রেস্টুরেন্ট করা হয়। তাহলে বেজমেন্টের গাড়িগুলো কোথায় থাকবে। নিশ্চই রাস্তায়। আর এতে যানজট বাড়ে। অতিদ্রুত এসব স্থাপনায় অভিযান চালাবো। এসব ব্যবসা উচ্ছেদ করা হবে।
মন্ত্রী আরো বলেন, একটি প্রকল্প আবহমানকাল ধরে চলে। এ জন্য আমি সবাইকে নিয়ে পূর্বাচলে মিটিং করে বলে দিয়েছি ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে পূর্বাচলের সব কাজ শেষ করতে হবে। এ কাজ শেষ হলে পূর্বাচল হবে একটি পরিপূর্ণ স্বাধীন এলাকা।
জোড়-বিজোড় সিস্টেম চালু ২০১৭ সালে
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক বলেন, যানজট নিরসনে এ বছর তিন হাজার নিউ গাড়ি ৫ কোম্পানির মাধ্যমে নামানোর চেষ্টা করছি। এটা হলে রাস্তায় দুটো গাড়ি পাশাপাশি দাঁড়াবে না। এ জন্য ৫টি রুট ঠিক করেছি। আর এ কাজ করতে সিন্ডিকেটকে নাড়া দিতে হচ্ছে। যা বেশ কঠিন। এ কাজের জন্য দরকার ১৫শ কোটি টাকা। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। যদি এ বছর এটা করতে পারি তাহলে ২০১৭ সালের মার্চের মধ্যে জোড়-বিজোড় সিস্টেম চালু করতে হবে।
একদিন জোড় সংখ্যার গাড়ি চলবে, অন্যদিন বিজোড় সংখ্যায়। এছাড়া টঙ্গী থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত ট্রেনকে মাটির নিচে আনার চিন্তা রয়েছে। বেশ জোরে শোরে এ কাজ হাতে নেবো।
আনিসুল হক আরো বলেন, আমাদের দু’জনের (উত্তর-দক্ষিণ সিটি) সমস্যা দুই রকম। তবে একসঙ্গে কিছু কাজ করছি। ইউলুপের কাজ শুরু হয়েছে জয়দেবপুর থেকে। ২১/২২টি ইউলুপ করার চেষ্টা করছি। ইতিমধ্যে দুটি রাইটটার্ন বন্ধ করে সুফল পেয়েছি।
মেট্রোরেলের কাজ নিয়ে যত দুশ্চিন্তা
দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, উত্তরের চেয়ে দক্ষিণে যানজট কিছুটা কম মনে হয়। উত্তরে কঠিন অবস্থা। সোনারগাঁ থেকে গুলশান যেতে প্রায় ঘণ্টা লেগে যায়। দক্ষিণে গাড়ি-ঘোড়া কম, উত্তরে বেশি। ওখানে এক পরিবারে ৫টা গাড়ি থাকে।
তিনি বলেন, যানজট নিরসনের দ্বায়িত্ব সিটি করপোরেশনের নয়। মূল দায়িত্ব ট্রাফিক বিভাগের। আমরা শুধু তাদের সহায়তা করবো। এখানে সিটি করপোরেশন, রাজউকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তবে এগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। এছাড়া পরিকল্পনারও অভাব রয়েছে। মগবাজার থেকে ফ্লাইওভার এসে নেমেছে সোনারগাঁ হোটেলের আগে রেল ক্রসিংয়ের সামনে। এটা কি করে হয়। ওখানে ট্রেনের সিগন্যাল পড়লে পেছনে কতটুকু জট হবে সেটা চিন্তা করেন। তাহলে ফ্লাইওভার করে লাভ কি। এ রকম অনেক সমস্যা রয়েছে।
শান্তিনগর-মৌচাকের কথা উল্লেখ করে সাঈদ খোকন বলেন, এ ফ্লাইওভারের কাজ শুরুর পর ওই এলাকায় যে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে তা অবর্ণনীয়। এখন মেট্রোরেলের কাজ শুরু হলে ঢাকা শহরের অবস্থা কোথায় যাবে? কাজটা শুরু হলে কি যে ভয়াবহ হবে। তখন এর জন্য দায়ী হবো আমি ও আনিস ভাই। তবে কাজ শেষ হয়ে গেলে যানজটও কমে যাবে।
সেমিনারে ‘ঢাকা শহরের যানজট: সমস্যা, চ্যালেঞ্জ এবং এগিয়ে যাওয়া’ শীর্ষক প্রবন্ধটি উপস্থাপন করেন বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান।
বাংলাদেশ সময়: ২২৪৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০১৬
ইএস/এএসআর/এসএইচ