ভোলা: গ্রামের ঘরবাড়ি, পুকুর, বাগান আর গাছ-গাছালির বাইরে পুরো জায়গাজুড়ে এখন শুধু শিম আর শিম ক্ষেত। পুরো গ্রামের যেখানে যতটুকু ফাঁকা জায়গা যেন সব পূরণ করা হয়েছে শিম ক্ষেত দিয়ে।
বলা হচ্ছে ভোলা সদর উপেজেলার দিঘলদী ইউনিয়নের কোড়ালিয়া গ্রামের কথা। এ গ্রামের সবটা জুড়েই কয়েকবছর ধরে হচ্ছে শিম চাষ। ফলে বাণিজ্যিকভাবে শিম চাষের জন্য জেলার সবচেয়ে প্রসিদ্ধ এ গ্রাম শিমের গ্রাম হিসেবে পরিচিত পেয়েছে।
এদিকে, এ বছর শিম ক্ষেতে পোকার প্রকোপ ছিল কম। ফলে ফলন হয়েছে বাম্পার। এতে করে হাসি ক্রমশই চওড়া হচ্ছে কোড়ালিয়া গ্রামের চাষিদের।
ফলন বেশি হওয়ায় ও ব্যাপক চাহিদা থাকায় দামও ভালো পেয়েছেন চাষিরা। এতে উৎপাদন খরচ পুষিয়ে বেশ মুনাফা থাকছে চাষিদের। এমনকি জেলার চাহিদা মিটিয়ে কোড়ালিয়ার শিম এখন বাইরের জেলাগুলোতেও যাচ্ছে।
এদিকে, জেলার অন্যান্য বিভিন্ন এলাকাতেও এবার শিমের বাম্পার ফল হয়েছে। ফলে লাভের মুখ দেখছেন চাষিরা।
ভোলার কোড়ালিয়া, বালিয়া, জয়নগরসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেলো, মাঠের পর মাঠ বিস্তীর্ণ শিম ক্ষেত। শিম তোলার কাজে ও ক্ষেতের প্রয়োজনীয় পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা।
এদের অনেকেই এবার অনেকটা শুন্য হাতে শুরু করেছেন। এদের মধ্যে ছিলেন গত বছর শিম চাষ করে লোকসান দেওয়া অনেকেই। এবার তারা এনজিও ও ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে শিম চাষের মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। শিমের বাম্পার ফলন, সেইসঙ্গে ভালো দাম থাকায় খুশি তারা।
কথা হয় কোড়ালিয়া গ্রামের শিম চাষি মোকাম্মেল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, এবার ৬০ শতাংশ জমিতে শিম চাষ করে ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে তার। তবে ফলন ভালো হওয়ায় অন্তত দুই লাখ টাকার শিম বাজারে বিক্রি করতে পারবেন।
আরেক চাষি আলমগীর হোসেন বলেন, এক একর জমিতে শিমের আবাদ করেছেন। ফলনও হয়েছে বাম্পার। এবার তিনি কমপক্ষে ২০০ মণ শিম পাবেন।
একই গ্রামের রোকেয়া ও মমতাজ বেগম বলেন, এবার শিমের ফলনে কোনো বিপর্যয় দেখা দেয়নি। তাই পোকার আক্রমণ না থাকায় উৎপাদন বেড়েছে।
এ গ্রামের কৃষকরা জানান, গত মৌসুমে কেজিপ্রতি শিমের দাম পেয়েছেন ৮ টাকা পর্যন্ত। কিন্তু চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত কেজি প্রতি ২০ থেকে ২২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে শিম।
উৎপাদিত শিম জেলার চাহিদা মিটিয়ে বরিশাল, লক্ষীপুর ও নোয়াখালীসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তারা।
ভোলা সদরের কৃষি কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, এবার ভোলা সদর উপজেলায় মোট ২৬০ হেক্টর জমিতে শিমের আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে শুধু কোড়ালিয়া গ্রামেই ২১০ হেক্টর জমিতে শিম চাষ করেছেন গ্রামবাসী।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সুত্র জানায়, চলতি মৌসুমে জেলার মোট ৯৬০ হেক্টর জমিতে শিমের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলার বাইরে দৌলতখান উপজেলায় ১১০ হেক্টর, বোরহানউদ্দিন উপজেলায় ৫০ হেক্টর, তজুমদ্দিন উপজেলায় ২৫ হেক্টর, লালমোহন উপজেলায় ৭০ হেক্টর, চরফ্যাশন উপজেলায় ৪২৫ হেক্টর ও মনপুরা উপজেলায় ২০ হেক্টর জমিতে শিমের আবাদ হয়।
স্থানীয় উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাহামুদুর হাসান বলেন, শিম চাষিদের সঠিক সময়ে পরামর্শ দেওয়ার কারণে তারা ভালো ফলন পেয়েছেন। ফলে আগামীতেও শিম চাষে তাদের আগ্রহ বেড়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক প্রশান্ত কুমার সাহা বলেন, কৃষকরা এবার একরপ্রতি ২০০ থেকে ২৫০ মণ শিম পাচ্ছেন। এবার তারা বেশি লাভবান হচ্ছেন।
বাংলাদেশ সময়: ০১৫৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০১৫
এসআর
** চেনা-অচেনা বৈচিত্র্যময় সবজির সমাহার
** রাজধানীতে বসছে সবজির মেলা
** সবজি উৎপাদনের অর্জনকে ধরে রাখার আহ্বান