ঢাকা: গভীর রাত, চারিদিকে নেমে এসেছে নিরবতা। শীতের রাতে যার যেটুকু সম্বল আছে তাই নিয়ে কেউ ঘুমাচ্ছেন প্লাটফর্মের মেঝেতে, আবার কেউ ঘুমানোর চেষ্টা করছেন বিশ্রামাগারে।
কিন্তু বাইরে রাত জেগে ছোঠখাট গানে আসর বসিয়েছে কিছু মানুষ। যাদের কাছে গান খুবই প্রিয়। ঠিক অমিয় সুধার মতই। তাইতো গভীর রাতেও গানের টানে, সুরের টানে জেগে থাকা তাদের।
বলছিলাম ঢাকা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনের রাতে জেগে থাকা কিছু গান প্রিয় মানুষের কথা।
রোববার দিবাগত রাত ২টায় স্টেশনের ভেতরে প্রবেশ করে প্রথমেই চোখে পড়ল একদল মানুষের জটলা। তার মাঝেই ভেসে আসছে ‘মায়ের একধার দুধের দাম/ কাটিয়া গায়ের চাম’ গানের সুর।
থেকে থেকে মারফতী, প্রেম, বিরহ ও ভালবাসার গানের সুরও যে উঠছে। খালি গলায় গাওয়া সেই গায়ককে ঘিরেই এত মানুষের জটলা। গান শোনার এত আগ্রহ। গান শেষ হতেই জটলা পাকা মানুষের মধ্য থেকে একজন বলে উঠছেন এবার অমুক গানটি গাইতে হবে।
বোঝা গেল যারা এখানে গান শুনেন তারা নিয়মিত শ্রোতা। গান না শুনলে নাকি তাদের চোখে ঘুমই আসে না। এমনটাই জানালেন উপস্থিত কয়েকজন। গানের আসর প্রতিদিন রাত ১টার পরই শুরু হয়, আর চলে রাত ৩টা পর্যন্ত। গান শেষ করে নিজ নিজ চলে যান যে যার শোবার জায়গায়।
গান প্রিয় এসব মানুষকে প্রতিদিনই গানে গানে মাতিয়ে রাখেন গায়ক আরিফ হোসেন। অল্প বয়সী যুবক। বাবা-মা কেউ নেই। রাতে চোখে দেখে না, এককথায় সে রাত কানা রোগে আক্রান্ত। বয়সটা একুশের বেশি হবে না। এই অল্প বয়সে গানের গলা দারুন। দরদ আছে, আছে তাল, লয় ও সুরকে আপন করে গলায় মাখবার শক্তিও।
যারা দূরের ট্রেন মিস করেন তাদের বেশির ভাগই স্টেশনের রাত্রিযাপন করার চেষ্টা করেন। তারা বাকী রাতটা ঘুমে না কাটিয়ে আরিফের গান শুনেই পার করেন। গান শুনে জেগে থাকাটাও সহজ হয়ে যায় তাদের পক্ষে। ফলে আর সকালে গাড়ি পেতে বেগ পেতে হয় না। যারা গান শুনেন তাদের মধ্য থেকে আবার কোনো কোনো দিন কেউ দুই চার টাকাও দেন আরিফকে। তা দিয়ে ওইদিন তার সকালের নাস্তাটা হালকা হয়ে যায়।
আরিফ জানায়, ছয় বছর বয়স থেকেই তার রাত দিন কাটে এ স্টেশনে। দিনে মানুষের কাছে চেয়ে খেয়ে এবং রাতে প্লাটফর্মেই কাটে। রাতে প্লাটফর্মে এলে সবাই জটলা করে ধরেন এবং গান শুনতে চান। সেও মনের সুখে তাদের গান শোনায়।
তবে রাত জাগা যাত্রী ছাড়াও পুলিশ, রেলের কর্মচারী ও বিভিন্ন টোকাইরা গানের আসরে যোগ দেন নিয়মিত। গান চলাকালীন তারা তাকে ঘিরে ধরেন এবং তালি বাহবা দিয়ে অনুপ্রাণিত করেন।
ডিউটিরত আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের কনস্টেবল হাবিব বাংলানিউজকে বলেন, ওর গানের গলা খুবই সু্ন্দর। ডিউটির সময় গান শুনে রাত যে কখন পার হয় বুঝতেও পারি না।
প্লাটফর্মের দোকানদার শফিকুল জানান, প্রতিদিন এ গানের আসর বসে। ট্রেন চলে যাওয়ার পর যাত্রীদের অনেকে না ঘুমিয়ে গান শুনেই রাত কাটান।
বাংলাদেশ সময়: ০৬৫৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০১৬
এমআইকে/এসএইচ