ঢাকা: বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা গোলাম রাব্বীকে নির্যাতনের ঘটনায় রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার বরখাস্তকৃত এসআই মাসুদ সিকদারের বিরুদ্ধে তার অভিযোগ এজাহার হিসেবে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
সোমবার (১৮ জানুয়ারি) এ সংক্রান্ত রিট আবেদনের শুনানি শেষে এ আদেশ দেন বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি এ কে এম সাহিদুল হকের বেঞ্চ।
মোহাম্মদপুর থানার ওসিকে আদালতের এ আদেশ পালন করতে হবে।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দ কুমার রায়।
শুনানিতে মাহবুব উদ্দিন খোকন রাব্বীকে নির্যাতনের ঘটনা তুলে ধরে তার অভিযোগটিকে এফআইআর (মামলা) হিসেবে গ্রহণের আবেদন জানান।
এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, ‘আমাদের কাছে কোনো নথি আসেনি। আগামীকাল (মঙ্গলবার) আদেশের জন্য রাখেন। আমরা ওই এসআইয়ের বিষয়ে সব তথ্য সংগ্রহ করে আগামীকাল উপস্থাপন করবো। রাষ্ট্র তার বিরুদ্ধে কি কি ব্যবস্থা নিয়েছে’। এ সময় আদালত বলেন, ‘আপনি পত্রিকা দেখেননি? পত্র-পত্রিকায় সব এসেছে’।
তখন অরবিন্দ কুমার রায় বলেন, তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
জবাবে আদালত বলেন, তাকে প্রত্যাহার কেন একেবারে শেষ করে দেওয়া (স্থায়ী চাকরিচ্যুতি) উচিত।
এরপর আদালত ঘটনার তারিখ জানতে চান। তখন মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ৯ জানুয়ারি ঘটনা ঘটেছে।
এ সময় আদালত বলেন, আজকে নয়দিন হয়ে গেছে। এখনো কোনো এফআইআর হয়নি। আমরা এফআইর গ্রহণের নির্দেশ দিচ্ছি।
আদেশের পরে মাহবুব উদ্দিন খোকন, আদালত ওই পুলিশকে অপরাধী বলেছেন। এবং তার বিরুদ্ধে রাব্বীর ১১ জানুয়ারি দেওয়া অভিযোগ এজাহার হিসেবে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়াও গোলাম রাব্বীকে নির্যাতন কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং রাব্বীর অভিযোগ এজাহার হিসেবে কেন নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করেছেন। দুই সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলেছেন।
রোববার (১৭ জানুয়ারি) নির্যাতনের ঘটনায় তিন কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদনটি করেন ঘটনার দিন রাব্বীকে উদ্ধারকারী তার বন্ধু সাংবাদিক জাহিদ হাসান এবং দুই আইনজীবী ব্যারিস্টার এ কে এম এহসানুর রহমান ও এস এম জুলফিকার আলী জুনু।
রিট আবেদনে গোলাম রাব্বীকে নির্যাতন কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, রাব্বীর অভিযোগ এজাহার হিসেবে কেন নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং এসআই মাসুদ সিকদারকে কেন গ্রেফতার করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারির আরজি জানানো হয়েছে।
একইসঙ্গে অতিরিক্ত জেলা জজের নিচে নয় এমন সমমানের একজন বিচারককে দিয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে তাও জানতে চেয়ে রুল জারির আরজি জানানো হয়েছে।
এছাড়াও রাব্বীকে নিরাপত্তা দেওয়া এবং ক্ষতিপূরণ হিসেবে তিন কোটি টাকা দেওয়ার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারির আরজি জানানো হয়েছে।
রিটে বিবাদী করা হয়েছে স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার, তেজগাঁও জোনের উপ-কমিশনার, মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, মোহাম্মদপুর থানার এসআই মাসুদ সিকদার ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।
গত ০৯ জানুয়ারি রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক গোলাম রাব্বীকে আটক করেন মোহাম্মদপুর থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) মাসুদ শিকদারসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য। ইয়াবা ব্যবসায়ী-সেবনকারী বানানোর ভয় দেখিয়ে পাঁচ লাখ টাকা আদায়ের চেষ্টা করেন তারা। এরপর রাত ৩টা পর্যন্ত তাকে নিয়ে মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন রাস্তায় ঘুরে বেড়ান এবং মারধর করেন। এমনকি তাকে বেড়িবাঁধে নিয়ে ক্রসফায়ারে হত্যার হুমকিও দেন।
পরদিন সকালে এ বিষয়ে মোহাম্মদপুর থানায় লিখিত অভিযোগ করেন রাব্বী। তবে নির্যাতনের ঘটনার সাতদিন পার হলেও সেটি এখনও মামলা হিসেবে রুজু করেনি থানা।
ব্যাংক কর্মকর্তা রাব্বীকে এসআই মাসুদের নির্যাতন এবং যাত্রাবাড়ীতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পরিদর্শককে ওই থানা পুলিশের মারধরের ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত ডিআইজি ব্যারিস্টার হারুন অর-রশিদকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে পুলিশ সদর দফতর।
গোলাম রাব্বীকে নির্যাতনের ঘটনা প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় এসআই মাসুদকে শনিবার (১৬ জানুয়ারি) সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। এর আগে ১১ জানুয়ারি সকালে তাকে মোহাম্মদপুর থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়।
মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জামাল উদ্দিন মীর বাংলানিউজকে সেদিন জানান, রাব্বীর ঘটনা নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত চলছে। ওপরের অনুমতি পেলে রাব্বীর দেওয়া অভিযোগটি মামলা হিসেবে রুজু করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০১৬
ইএস/এএসআর