ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

আন্তর্জাতিক আইনে সীমান্তে সেনা মোতায়েনে নারাজ মায়ানমার

জেসমিন পাপড়ি, ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০১৬
আন্তর্জাতিক আইনে সীমান্তে সেনা মোতায়েনে নারাজ মায়ানমার

ঢাকা: সীমান্তের বিদ্যমান ও ভবিষ্যত সমস্যা এড়াতে মায়ানমারের সঙ্গে লিয়াজোঁ অফিস (বিএলও) চুক্তি করতে প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। তবে এ চুক্তি সই করতে আপত্তি না থাকলেও সীমান্তে সেনা মোতায়েন বা চলাচল বিষয়ক আন্তর্জাতিক আইন মানতে রাজি নয় মায়ানমার।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।

সোমবার (১৮ জানুয়ারি) মায়ানমারের সঙ্গে বিএলও চুক্তির খসড়া প্রস্তাব নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আন্ত মন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক। বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

বিএলও চুক্তি করতে চেয়ে বাংলাদেশের পাঠানো খসড়ার বেশ কিছু সংশোধনী পাঠিয়েছে মায়ানমার। সেসব সংশোধনী নিয়েই বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।

সূত্র জানায়, মায়ানমার খসড়ার যেসব সংশোধনী পাঠিয়েছে, তার কিছু বাংলাদেশের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। সেসব বিষয়গুলো আদৌ গ্রহণ করবে কিনা তা বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বাংলাদেশের আপত্তির বিষয়গুলোও দেশটিকে শিগগিরই জানানো হবে।

বৈঠক সূত্র জানায়, সীমান্ত বিষয়ক আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী কোন সীমান্তের ৮ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো দেশ যদি সেনাবাহিনী মোতায়েন করে বা সেনাবাহিনীর চলাচল হয়; তাহলে তা সীমান্তবর্তী অপর দেশকে অবশ্যই জানাতে হবে। স্বাভাবিকভাবেই বিএলও চুক্তির খসড়াতে বাংলাদেশ এ শর্তটি যোগ করেছিলো। তবে বিষয়টি মানতে রাজি নয় বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রতিবেশী মায়ানমার। বাংলাদেশ বিষয়টিতে কঠোর আপত্তি জানাবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, প্রতিবেশী এই দেশের সঙ্গে সীমান্ত নিয়ে বাংলাদেশের কোনো বিরোধ নেই। তবে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ, মাদক চোরাচালান, মায়ানমারের সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দাদের দিয়ে বাংলাদেশি জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দেওয়াসহ কিছু বিষয়ে বাংলাদেশের অসন্তুষ্টি রয়েছে। তবে তা দ্বিপাক্ষিক আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান সম্ভব। দেশটির সঙ্গে সমুদ্রে সীমা সংক্রান্ত জটিলতাও দূর হয়েছে।

অবশ্য সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বরাবরের মতই মায়ানমারের গতি বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে।

সূত্র আরও জানায়, সীমান্তবর্তী দেশ হিসেবে আস্থার সংকট কাটিয়ে মায়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ। বিএলও সই হলে দেশটির সঙ্গে সীমান্ত নিয়ে নিরাপত্তাজনিত যে কোনো বিষয়ে দ্বিপাক্ষিকভাবে আলোচনা করা যাবে। এ নিয়ে বাংলাদেশ সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে এর একটি খসড়া প্রস্তাব মায়নমারকে পাঠিয়েছে। এর বাইরে নিরাপত্তা ইস্যুতে সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা বা কো-অরডিনেটেড বর্ডার ম্যানেজমেন্ট প্লান (সিবিএমপি) নিয়েও বাংলাদেশ ইতিমধ্যে প্রস্তাব দিয়ে রেখেছে।

এটি মূলত দুই দেশের সীমান্তে ইস্যুগুলো নিয়ে একটি গাইড লাইন। এর মধ্যে সীমান্ত দিয়ে মাদক, নারী বা অস্ত্র পাচারসহ যাবতীয় অবৈধ কাজ চিহ্নিত করে তা প্রতিরোধ বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে।

এছাড়া, সীমান্তে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা, অসুরক্ষিত স্থানগুলো চিহ্নিতকরণ, সমন্বিত পেট্রলিং এবং গোয়েন্দা তথ্যের আদান প্রদানসহ বিভিন্ন বিষয়গুলো
তুলে ধরা হবে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বে ক্ষমতাধর দেশগুলোর কাছে মায়ানমার এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। দেশটিতে কিছু সুযোগ-সুবিধা দিয়েই নিজেদের কৌশলগত অবস্থান তৈরির দৌড়ে এগিয়ে থাকতে চায় তারা।

ফলে দেশটির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সব ধরনের সহযোগিতামূলক সম্পর্ক স্থাপন অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার পাশাপাশি কৌশলগত দিক থেকে এগিয়ে রাখবে বাংলাদেশকে। আর মায়নমার যেহেতু বাংলাদেশের নিকটতম প্রতিবেশী, তাই দেশটির সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলের শান্তি-শৃংঙ্খল এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে প্রভাব ফেলবে। এছাড়া, অঞ্চলিক কৌশলগত দিক বিবেচনায় মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরো দৃঢ় করা জরুরি হয়ে পড়েছে বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০১৬
জেপি/টিআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।