নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের আলোচিত পাঁচ খুনের ঘটনায় নিহত তাসলিমার স্বামী শফিকুল ইসলামের দায়ের করা মামলার অন্যতম আসামি নাজমাকে শরীয়তপুর থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারি) তাকে নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়।
নারায়ণগঞ্জ ডিবি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওসি মামুনুর রশিদ মন্ডল বাংলানিউজকে জানান, সোমবার (১৮ জানুয়ারি) মধ্যরাতে শরীয়তপুরের দামুরদা এলাকা থেকে নাজমাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নাজমা আক্তারের স্বামী এ মামলার আরেক আসামি শাহজাহান।
পরে মঙ্গলবার সকালে তাকে নারায়ণগঞ্জ ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হবে।
এছাড়া হত্যাকাণ্ডের শিকার লামিয়ার স্বামী শরীফকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি কার্যালয়ে রাখা হয়েছে।
৫ জনকে হত্যার ঘটনায় শনিবার (১৬ জানুয়ারি) রাতেই ঘটনাস্থল থেকে শফিকুল ও শরীফের ভাগ্নে মাহফুজ এবং নিহত তাসলিমা ও মোরশেদুলের খালাতো ভাই দেলোয়ার হোসেন ও শাহাদাতকে আটক করে পুলিশ।
সোমবার মাহফুজকে আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে সাতদিনের রিমান্ডে এনেছে ডিবি পুলিশ।
রোববার (১৭ জানুয়ারি) সকালে নিহত তাসলিমার স্বামী শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে ভাগ্নে মাহফুজ, ঢাকার কলাবাগানের নাজমা ও শাহজাহানের নাম উল্লেখ করে সদর মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। রোববার রাতে মামলাটি জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তরের নির্দেশ দেন পুলিশ সুপার।
মামলার অভিযোগে শফিকুল ইসলাম উল্লেখ করেন, নিহতদের মধ্যে লামিয়া আক্তার নামের গৃহবধূকে ভাগ্নে মাহফুজের যৌন আবেদনে ব্যর্থ হয়েই পরিকল্পিতভাবে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। মামলায় ১২ লাখ টাকা ঋণের জের ধরে হত্যাকাণ্ডের ঘটনার প্রথম একটি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে।
মামলায় তিনি উল্লেখ করেন, তাসলিমার কাছে ঢাকার কলাবাগানের নাজমা ও শাহাজাহানসহ একাধিক ব্যক্তি প্রায় ১২ লাখ টাকা পেতেন যা মাসিক চক্রবৃদ্ধি সুদে নেওয়া ছিল। ওই টাকা সময়মতো পরিশোধ করতে না পারায় পাওনাদাররা প্রায়ই টাকা পরিশোধের জন্য হুমকি দিতেন। এমনকি নাজমাও মাঝে মধ্যে তার পরিবার ও সন্তানদের দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেবেন বলে হুমকি প্রদান করতেন। তার শ্যালক মোর্শেদুল ওরফে মোশাররফের কাছেও টাকা পেতেন তারা। টাকা-পয়সা পাওয়ার সুবাদে পাওনাদার ব্যক্তিরা তার বাসায় যাওয়া-আসা করতেন এবং এ ব্যাপারে চাপ প্রয়োগ করতেন।
শরিফুলের অভিযোগ, ভাগিনা মাহফুজ তার ছোট ভাই শরীফের স্ত্রী লামিয়ার সঙ্গে ঢাকায় বসবসাসের সময়ে যৌন আবেদন করলে পরবর্তীতে মাহফুজকে ঢাকায় রেখে নারায়ণগঞ্জে চলে আসেন তারা। ভাগিনা মাহফুজ পুনরায় নারায়ণগঞ্জর বাসায় এসে লামিয়ার সঙ্গে একই ধরনের ব্যবহার ও আচরণ করতো। এতে লামিয়া অসন্তুষ্ট হয়ে তাসলিমা ও শরীফের কাছে বিষয়টি প্রকাশ করে দেন।
এসব কারণে মাহফুজসহ অজ্ঞাতনামা দুস্কৃতিকারীরা একই উদ্দেশ্যে পরস্পরের যোগসাজশে ৫ জনকে হত্যা করেছে বলেও মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে।
গত শনিবার রাতে শহরের ২ নম্বর বাবুরাইল এলাকার বাসায় একই পরিবারের পাঁচজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহতরা হলেন তাসলিমা বেগম (৪০), তার ছেলে শান্ত (১০), মেয়ে সুমাইয়া (৫), ভাই মোরশেদুল (২৫) ও তাসলিমার জা লামিয়া (২৫)। শক্ত কোনো ভোতা অস্ত্র দিয়ে গুরুতর জখম ও শ্বাসরোধ করে তাদের হত্যা করা হয় বলে ময়না তদন্ত প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০১৬
এএসআর/