রাজশাহী: রাজশাহীতে জেঁকে বসেছে শীত। ঘন কুয়াশার বৃত্ত ছেদ করে রোববার (২৪ জানুয়ারি) দুপুর ১২টার পর দেখা মেলে সূর্যের।
কারণ পদ্মাপাড়ের রাজশাহীতে রোববার তাপমাত্রা আরও কমেছে। আবহাওয়া পর্যাবেক্ষণাগার বলছে, রাজশাহীতে দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন। এর আগে শনিবার (২৩ জানুয়ারি) ছিল ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফলে প্রতিদিনই তাপমাত্রা কমছে।
এদিকে রাজশাহীর উপর দিয়ে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তাই সন্ধ্যার পর শীতের দাপটে জবুথবু অবস্থা পদ্মাপাড়ের ছিন্নমূল মানুষগুলোর।
রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক শহীদুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান প্রতিদিনই কমছে। এজন্য বেশি শীত অনুভূত হচ্ছে। এছাড়া সকাল ৬টায় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৭ শতাংশ, সন্ধ্যা ৬টায় ৮২ শতাংশ।
রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (আবহাওয়া সহকারী) আশরাফুল আলম ঢাকা আবহাওয়া অফিসের বরাত দিয়ে বাংলানিউজকে জানান, চলতি জানুয়ারির শেষার্ধে রাজশাহী অঞ্চলে ১টি এবং ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ১টি মৃদু (৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) অথবা মাঝারি (৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এছাড়া মাসের শেষে রাত থেকে সকাল পর্যন্ত রাজশাহী অঞ্চলে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে।
এদিকে, রাজশাহী মহানগরীসহ গোটা উত্তরাঞ্চলে হঠাৎ করে শীত জেঁকে বসায় দুর্ভোগ বাড়ছে ভাসমান ও ছিন্নমূল মানুষের। প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্রের অভাবে শীতে কাতর তারা। সন্ধ্যার পর এ মানুষগুলোকে পথের ধারে খড়-কুটোয় আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করতে দেখা গেছে। তবে সরকারি, সেবরকারি ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণও শুরু হয়েছে। কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় নগন্য।
অতিরিক্ত ঠাণ্ডার কারণে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতাল-ক্লিনিকে বাড়ছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। এদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধের সংখ্যা বেশি। আক্রান্তদের বেশিরভাগই ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, অ্যাজমাসহ বিভিন্ন রোগ নিয়ে হাসপাতালে আসছেন বলে জানিয়েছেন জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. আরিফুল হক।
অপরদিকে, বাড়তি শীত নিয়ে শঙ্কা কাটছেনা এ অঞ্চলের কৃষকদেরও। এ বছর শৈত্যপ্রবাহ শুরু হওয়ায় বোরো বীজতলার কোল্ড ইঞ্জুরি, আলুর আর্লি ব্লাইটসহ ডাল ফসলের নানান শীতজনিত রোগের প্রার্দুভাব দেখা দিয়েছে এরই মধ্যে। তবে এজন্য কৃষকদের স্থানীয়ভাবে নিকটস্থ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ মেনে চলার কথা বলেছেন রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক দেব দুলাল সাহা।
মাঠে থাকা শীতকালীন আবাদসহ যেকোনো কৃষি পরামর্শ প্রদানের জন্য এরই মধ্যে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট কৃষি কর্মকর্তাদের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
রাজশাহী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী বাংলানিউজকে জানান, শীত মোকাবেলায় এবারও জেলা প্রশাসনের প্রস্তুতি রয়েছে। ইতোমধ্যে ২৬ হাজার ৩২২ পিস কম্বল মহানগরী ও ৯টি উপজেলায় বিতরণের জন্য প্রদান করা হয়েছে।
এছাড়া আগামী দিনে তীব্র শীত মোকাবেলার জন্য প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে আর্থিক সহায়তা চেয়ে চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক।
বাংলাদেশ সময়: ২০১৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০১৬
এসএস/জেডএস