ঢাকা: শ্বশুর বাড়িতে জামাইকে নতুন চালের পিঠা বানিয়ে খাওয়ানোর রেওয়াজ বেশ পুরনো। সেই পিঠায় থাকে ভিন্নতা।
হাল ফ্যাশনের এই যুগে খাবারের মেন্যুতে অনেক ফাস্টফুড যোগ হলেও কদর কমেনি পিঠার। তার প্রমাণই পাওয়া গেল রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমীতে আয়োজিত পিঠা উৎসবে।
রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমী প্রাঙ্গনে আট দিনব্যাপী চলছে পিঠা উৎসব। শুরু হয়েছে শুক্রবার (২২ জানুয়ারি) থেকে। চলবে আগামী শুক্রবার (২৯ জানুয়ারি) পর্যন্ত।
উৎসব ঘুরে দেখা গেল, হাজারও পিঠাপ্রিয় মানুষের ভিড়ে বেশ মুখর। উৎসবে এসেছেন তরুণ,তরুণী ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার পিঠা প্রিয় মানুষ। সঙ্গে এনেছেন বউ,বাচ্চাদেরও। দোকানে দোকানে ঘুরছেন তারা। পিঠা কিনে খাচ্ছেন এবং সঙ্গে করেও নিয়ে যাচ্ছেন। বিভিন্ন অঞ্চলের পিঠার সঙ্গে পরিচিতও হচ্ছেন অনেকে। তার স্বাদ নিতেও ভুলছেন না। কেউ আবার এ পিঠাকে ছবি ফ্রেমে বাধতেও ভুলছেন না। পিঠার সঙ্গে সেলফিও তুলছেন কেউ কেউ।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে রকমারী পিঠা নিয়ে হাজির হয়েছেন অনেকে। পিঠার পসরা নিয়ে বসেছেন সবাই। কেউ কেউ দোকানেই সেই পিঠা তৈরি করছেন। গরম গরম তৈরি করে পরিবেশন করছেন কেউ। তবে দাম সাধ্যের মধ্যেই।
দোকানিরা ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে বড় বড় প্লেটে সাজিয়েছেন পিঠা। ঝাল ও মিষ্টি পিঠাই উঠেছে বেশি। তবে ঝালের চাহিদা মিষ্টির চেয়ে বেশি বলে জানালেন দোকানিরা।
পিঠা উৎসবে আসা আগতদের মাতিয়ে রাখতে সঙ্গে আছে সংগীত সন্ধ্যারও আয়োজন। চলছে পরিচিত-অপরিচিত মুখের শিল্পীদের গানের সুর। রাজধানীর মগবাজার এলাকা থেকে পরিবার নিয়ে এসেছেন ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, উৎসবে সন্ধ্যার সাতটা পর্যন্ত ১৬টি দোকান ঘুরেছেন। প্রতিটি দোকানেই খেয়েছেন পিঠা। আবার কিনে সঙ্গে রেখেছেন বাসায় নেওয়ার জন্য।
শফিকুলের যদিও ঢাকায় জন্ম তারপরও পিঠা তার কাছে বেশ প্রিয়। পিঠার সঙ্গে বাচ্চাদের পরিচয় করিয়ে দিতেই তাদের সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন বলেও জানালেন তিনি।
শফিকুলের মতোই দেখা গেল অনেকে পরিবার পরিজন নিয়ে উৎসবে এসেছেন। পিঠা খাচ্ছেন আর কিনে বাসায় নিয়ে যাচ্ছেন প্যাকেট করে।
যাত্রাবাড়ী থেকে আসা দম্পতি সায়েমা ও কাদের বাংলানিউজকে বলেন, বাসায় তো আমরা আঞ্চলিক পিঠা খাই, এখানে এসে হরেক রকমের পিঠা দেখলাম ও স্বাদ নিলাম। এতো পিঠা দেখে মনে পড়ে গেল সত্যিই বাঙালির কাছে পিঠার কদর আছে।
ইংরেজি মাধ্যমে পড়ুয়া ছাত্রী আফরা গহ্বর মালিহা বাবার সঙ্গে উৎসবে এসেছেন গুলশান থেকে।
তিনি বাসায় তার মায়ের তৈরি পিঠা খেয়ে থাকেন। তবে উৎসবে এতো পিঠার আয়োজন দেখে মালিহা তো বলেই ফেলল, এত্ত পিঠা! আমিতো আগে কখনও দেখিনি আব্বু।
লামিয়া বি-বাড়িয়া পিঠাঘরের স্বত্ত্বাধিকারী মাহমুদা আকতার সুমী বাংলানিউজকে বলেন, পিঠা উৎসবে সব চেয়ে বেশি চলছে জামাই পিঠা। সঙ্গে মুখপাকনেরও বিক্রি বেশি। তবে উৎসব যে জমেছে তার প্রমাণও মিলল এক বিক্রেতার জবাবে।
নরসিংদী পারিজাত পিঠাঘরের মালিক জিন্নাত রায়হান সুমি বাংলানিউজকে বলেন, আগের দুই দিনে তো প্রায় দশ হাজারেরও বেশি টাকার পিঠা বিক্রি করেছি। পিঠার প্রতি মানুষের এত ঝোঁক আগে জানা ছিল না। সন্ধ্যার আগেই তো আমার দোকানের সব রসালো পিঠা শেষ হয়ে গেছে। এখন যা দেখছেন তার সবটাই শুকনো।
অনেক পিঠা উঠেছে উৎসবে। উঠেছে ক্ষিরের প্যারা, নয়নতারা,পিঠাপুলি, কুসুম কলি,ডিম চিতই, নারিকেল পুলি,ঝাল চিতই, ভাজা গোলাপ, সেমাই পিঠা, ঝাল পুলি, চুসি পিঠাসহ ঝাল জামাই, মুখপাকন ও চাপটিও।
ঝাল জামাই, মুখপাকন ও চাপটি স্বাদে ভিন্ন ও সুস্বাদু হওয়ার কারণেই চাহিদা একটু বেশি। আগতদের আগ্রহ বেশি। ফলে বিক্রয়ও হচ্ছে সবার আগে বলে জানালেন পিঠার উৎসবে অংশগ্রহণকারীরা।
জাতীয় পিঠা উৎসব উদযাপন পরিষদের আয়োজনে,কফি হাউজের তত্ত্বাবধানে প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে এ উৎসব।
দেশের নামকরা ৩৩টি পিঠাঘর উৎসবে অংশ নিয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০০০৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০১৬
এমআইকে/বিএস