ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

শিক্ষার অবনমনে সৃজনশীল পদ্ধতি নয়, প্রয়োগে সমস্যা

সিনিয়র নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০১৬
শিক্ষার অবনমনে সৃজনশীল পদ্ধতি নয়, প্রয়োগে সমস্যা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: বর্তমানে শিক্ষা ব্যবস্থায় যে অব্যবস্থাপনা ও অবনমন- এর পেছনে সৃজনশীল পদ্ধতি নয় বরং প্রয়োগের সমস্যা রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন গবেষক ও কলাম লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ।

সোমবার (২৫ জানুয়ারি) গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘রিসার্চ ফর অ্যাডভান্সমেন্ট অব কমপ্লিট এডুকেশন’ (রেস) আয়োজিত এক সেমিনারে এ মন্তব্য করেন তিনি।

এদিন বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর ধানমন্ডির দৃক গ্যালারিতে বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় সৃজনশীল পদ্ধতি শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে রেস সেমিনারের আয়োজন করে।

প্রধান আলোচকের বক্তব্যে আবুল মকসুদ বলেন, শিক্ষার সঙ্গে মানের বিষয়টি জড়িত। অন্যান্য দেশে শিশুদের আনন্দের সঙ্গে পড়ানো হয়। কিন্তু আমাদের শিশুদের সে ব্যবস্থা নেই।

তিনি বলেন, সৃজনশীল পদ্ধতি চালুর নামে শিক্ষা নিয়ে বাণিজ্য চলছে। এর সঙ্গে উঁচু থেকে নিচু মহল পর্যন্ত সবাই জড়িত। আগে ঠিক করতে হবে শিক্ষার দর্শন কী? এরপর পদ্ধতি ঠিক করতে হবে। সৃজনশীল পদ্ধতি ভালো হলেও এর প্রয়োগে সমস্যা রয়েছে।

তিনি বলেন, রেস প্রাথমিক শিক্ষায় সৃজনশীল পদ্ধতির অবস্থা নিয়ে যে গবেষণা করছে এটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের করার কথা। কিন্তু তারা তা করছেন না।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে প্রাথমিক শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এখানে (বাংলাদেশে) শিশুদের যে মানসিক চাপের মধ্যে রাখা হয় তা দিয়ে সৃজনশীল হওয়া যায় না।

তিনি বলেন, শিশুদের কোচিংয়ে যেতে হয়। তাহলে স্কুলে তারা কী শিখছে? তবে এক্ষেত্রে শিক্ষকরাও অসহায়। কেননা ভালো সুযোগ না পেয়েই তারা এ পেশায় আসেন। প্রাথমিক শিক্ষায় মেধাবীদের আনতে তাদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো দরকার।

সরকারের মনোযোগ পাসের হারের দিকে, শিক্ষার মান উন্নয়নে নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি শিশুদের সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটাতে গাইড বই ও কোচিং ব্যবস্থা বন্ধ করার দাবি জানান। এছাড়া প্রতিবেদনের ফল সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দৃষ্টিতে আনার কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, নৃবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. জহির উদ্দিন আহমেদ, গণস্বাক্ষরতা অভিযানের প্রোগ্রাম ম্যানেজার ড. মোস্তাফিজুর রহমান, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর আবদুল্লাহ আল মামুন, জিগাতলার মনষা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা স্বপ্না পারভীন, সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা থেকে আসা স্কুল শিক্ষক প্রসেন কান্তি তালুকদার।

তারা বলেন, সৃজনশীল শিক্ষা পদ্ধতি কার্যকরী হলেও এ বিষয়ে শিশুদের ওপর বাড়তি চাপ দেওয়া যাবে না। পাশাপাশি শিক্ষকদের এ পদ্ধতিতে দক্ষ করে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে।

এর আগে, রেস প্রাথমিক শিক্ষায় সৃজনশীল পদ্ধতির ওপর গবেষণা জরিপের প্রতিবেদন উপস্থাপন করে। এতে বলা হয়- সৃজনশীল পদ্ধতি চালু হলেও বেশিরভাগ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা এ পদ্ধতি বুঝতে পারছে না। শিক্ষকদের এ জন্য যথাযথ প্রশিক্ষণ দেওযা হয়নি। তারা গাইড বই ও কোচিং নির্ভর জাতি তৈরি করছে। ফলে শিক্ষার্থীরা সৃজনশীল হয়ে উঠছে না। তারা গণিত ও ইংরেজিতে খারাপ করছে। এজন্য শিক্ষকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ ও স্কুলে অবকাঠামোসহ শিক্ষা উপকরণ দেওয়া প্রয়োজন। সেইসঙ্গে  দক্ষ ও মেধাবীদের শিক্ষকতায় আনতে ভালো বেতন-ভাতাসহ আকর্ষণীয় সুবিধা দেওয়া দরকার।

সবশেষে রেসের পক্ষ থেকে আয়োজিত প্রাথমিক শিক্ষার পরিবেশ ও শিক্ষার্থীদের ওপর এক চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০১৬
এসআর/আইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।