ঢাকা: ‘দিনে পনেরো জেলা হলে ৬০টি জেলার জন্য বরাদ্দ ৪ দিন। চার পনেরো ষাট .... তাই রওনা দিয়েছিলাম ১৬ ডিসেম্বর ভোরবেলা বসুন্ধরা ৩শ’ ফুট দিয়ে সিলেটের দিকে’- পাঁচ দিনে সারা বাংলাদেশের সব জেলা ঘুরে এসে তার বিস্তারিত এভাবেই জানাচ্ছিলেন বাইকার জুন সাদিকুল্লাহ।
বছরখানেক আগে ২৪ ঘণ্টায় টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া গিয়ে যে রেকর্ড গড়েছিলেন, এবার মাত্র ৫ দিনে সারা দেশের ৬৪ জেলা ঘুরে আরেকটি অনন্য রেকর্ড গড়লেন।
তিনি বলছিলেন, ‘বাইক নিয়ে আমি যতটা কনফিডেন্ট ছিলাম তার চেয়ে আমার নিজের রাইডের উপর বেশী কনফিডেন্স ছিল ... আমি সব সময় বাইকে নয়, রাইডারে বিশ্বাস রাখি... এই ট্যুরে আমি সাথে নিয়েছিলাম আমার ২০ হাজার কিলোমিটার পার করা লিফান কেপিয়ার মোটরবাইক। সাথে ছিল ক্লাচ ক্যাবল, এক্সিলেটর ক্যাবল, ব্রেক সু আর লিকুইড কুল ইঞ্জিনের জন্য কুলেন।
তিনি বলেন, ডিসেম্বর মাসে এমন ঠাণ্ডা যে গোটা ট্যুরে কুলেনের কোন প্রয়োজন পড়েনি। আর আমি সবসময় মবিল ওয়ান রেসিং ফরটি ব্যবহার করতাম, সেটা সাথে নিয়েছিলাম দুইটা। আর ১২০০ কিলোমিটার পর পর মবিল বদল করেছিলাম।
কিলোমিটারের হিসেবে বলতে গেলে বেশি হয়নি। ৫ দিনে ৬৪টি জেলা ছুঁয়ে আসতে মাত্র ২৯৫৯ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়েছে, আর খরচ হয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার টাকা।
তিনি বলেন, আসলে আমরা যারা বাইক রাইড ভালবাসি তাদের সবার ইচ্ছে আছে বাইক নিয়ে বাংলাদেশের ৬৪ টি জেলা ঘুরে বেড়ানোর ... কিন্তু চাকরি করে সময় বের করা খুব সমস্যা। তাই ঠিক করলাম সব জেলার ভেতরে না ঢুকলেও জেলার বাউন্ডারিতে যেন আমার বাইকের টায়ারের দাগ থাকে। যা ভাবা সেই কাজ। ১৬ ডিসেম্বর দেখলাম সরকারি ছুটি, এরপর শুক্র আর শনি। ব্যাস, মাঠে নেমে গেলাম।
কিন্তু আমার প্রথম কাজ ছিলো ম্যাপ খোঁজাখুঁজি। কারণ ম্যাপ ঘাঁটাঘাঁটি যতই করা যায় ততই সহজ রুট পাওয়া যায়। আমি চেষ্টা করেছিলাম, এক জেলা যাতে দুইবার টাচ করতে না হয়। এতে সফলও হয়েছি। তবে দুইবার কুড়িগ্রাম আর চাপাইতে ইউটার্ন নিতে হয়েছিল- বলেন জুন সাদিকুল্লাহ।
এ ট্যুরে সঙ্গে না থাকলেও একজন সহযোগীর কথা উল্লেখ করে জুন বলেন, ‘ম্যাপ নিয়ে গুতাগুতি সবচেয়ে বেশি করেছেন আবিদ ভাই। তবে জরুরি কারণে উনি যেতে পারেননি। কিন্তু ট্যুরের একটা দিন প্রায় পুরোটাই আমার জন্য গুগল ম্যাপ খুলে পিসির সামনে বসে ফোনে রাস্তা দেখিয়েছেন, যেটা ছাড়া এই ট্যুর সত্যি অসম্ভব ছিল।
সময়ের হিসেব দিয়ে তিনি বলেন, ‘৬৪ জেলার চার জেলা ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, আর মানিকগঞ্জ বাদ দিলে থাকে ৬০ জেলা ... আর ওই জেলা গুলো আমি ১৫ তারিখ অফিস (আমার অফিস কিন্তু নারায়ণগঞ্জ আর বাসা ঢাকায়) করার ফাঁকে ফাঁকে শেষ করে ফেলেছিলাম, আর আমার হিসেব ছিল- এক জেলা থেকে আরেক জেলায় যেতে সময় লাগে একঘণ্টা। তাই দিনে পনেরো জেলা হলে বাকি ৬০টি জেলার জন্য বরাদ্দ ৪ দিন। চার পনেরো ষাট ... তাই রওনা দিয়েছিলাম ১৬ তারিখ ভোরবেলা বসুন্ধরা ৩শ’ ফুট দিয়ে সিলেটের দিকে।
সকালে তেমন কুয়াশা না থাকায় খুব তাড়াতাড়ি নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, বাহ্মণবাড়িয়া হয়ে হবিগঞ্জে নাস্তা, তারপর মৌলভীবাজার, সিলেট হয়ে সুনামগঞ্জে যখন পৌছি তখন সূর্য একেবারে মাথার উপর।
এরপরে আরও আশ্চর্য ও বৈচিত্র এবং রাস্তা হারিয়ে ফেলার গল্প বলেন জুন।
তিনি বলেন, সুনামগঞ্জ পৌঁছার পর এখন এমন একটা রাস্তায় ঢুকলাম যেখানে আগে কখনো যাইনি।
‘এখন যেতে হবে নেত্রকোনা। ম্যাপে দেখেছিলাম সুনামগঞ্জের পাশে নেত্রকোনা ... পথে অনেক মানুষকে জিজ্ঞেস করলাম- ভাই এদিক দিয়ে কি নেত্রকোনা যাওয়া যায়? সবাই বলে- যাওয়া যায়, কিন্তু কাউকে পাইনি যে গেছে।
সুনামগঞ্জ থেকে যেতে হবে জামালগঞ্জ। কিন্তু রাস্তা ভুলে চলে গেলাম দিরাইয়ে। আবার নোয়াখালী বাজার ঘুরে এলাম জামালগঞ্জ। এখান থেকে যেতে হবে ধর্মপাশা, তারপর মোহনগঞ্জ।
জামালগঞ্জের পর আর রাস্তা নেই। দেখা গেলো গুগলও রাস্তা হারিয়ে ফেলেছে। এসব জায়গা পানির নিচে থাকে বলে গুগল ম্যাপ কোন রাস্তা দেখালো না।
এজন্য রাস্তায় কাউকে পেলে একটু জিজ্ঞেস করে আবার রওনা দিচ্ছিলেন জুন। চারবার নৌকা পারাপার, কখনো ট্রলার আবার কখনো বৈঠা এমন করে যেতে যেতে সন্ধ্যায় তিনি গিয়ে পৌঁছান নেত্রকোনা।
সেখান থেকে চলে যান ময়মনসিংহ । সন্ধ্যায় আবার রওয়ানা দেন শেরপুর, জামালপুর হয়ে মধুপুর টাঙ্গাইল। এরপর রাত ১০টায় যমুনা সেতু পার হয়ে সিরাজগঞ্জ।
এভাবেই উত্তরবঙ্গ তার দক্ষিণবঙ্গ পরে চট্টগ্রাম- বান্দরবান- কক্সবাজার পৌছে তার ৬৪ জেলা ভ্রমণ শেষ হয়। (চলবে)
বাংলাদেশ সময়: ০১৩২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০১৬
এসএ/জেডএম